জুলহাসান আকন: ঘন ঘন দেশের করদাতাদের পয়সা অপচয় করে বিদেশ ভ্রমন করেন মোদি। বিরোধী এবং মোদি সমালোচকদের এমন অভিযোগ বহুদিনের। তবে করোনা এবং তার পরবর্তী পরিস্থিতিতে বহুদিন তেমন কোনো হাইপ্রোফাইল বিদেশ ভ্রমন করেননি মোদি। এবার অনেক দিন পর QUAD সম্মেলন এবং রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারন অধিবেশনে যোগ দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছেন মোদি। কিন্তু গিয়েই তাকে অপমানের সম্মুখীন হতে হল বেশ কিছু ক্ষেত্রে। সচরাচর ভারতের রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য মার্কিন মুলুকে যেমন আতিথেওতা দেখানো হয় এবারে তেমন কিছুই ছিল না।
দীর্ঘ বিমানযাত্রা শেষে গতকাল যখন মোদির সখের বহু কোটি টাকার বিমান মার্কিন রাজধানী ওয়াশিংটনে অবতরন করেন তখন তাকে স্বাগত জানাতে সেখানে দেখা যায়নি হোয়াইট হাউসের হাইপ্রোফাইল কোনো ব্যক্তিত্বকে। সেখানে কিছু সিনিয়র মার্কিন অফিসার গিয়েছিলেন মোদিকে স্বাগত জানাতে। তাছাড়া ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসের কর্মীরা।
গতকাল মার্কিন মুলুকে নিজের কর্মসূচির একদম প্রারম্ভে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদি। কিন্তু সেই বৈঠকই চরম অপমানের কারণ হয়ে দাঁড়ায় মোদির জন্য। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত হওয়া ওই বৈঠকের ব্যাপারে মোদি বেশ উচ্ছসিত হয়ে টুইট করেন। কমলা হ্যারিসকে সবার জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু অবাক করার বিষয় হল মোদি টুইট করলেও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মোদির সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে কোনো টুইট করেননি। অনেকে যুক্তি দিয়ে বলেন এমন বৈঠকের ব্যাপারে তিনি টুইট করেন না। তাই এক্ষেত্রেও করেননি। কিন্তু মোদির সঙ্গে বৈঠকের ঠিক পরেই মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা বৈঠক করেন জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। সেই বৈঠকের ব্যাপারে তিনি বেশ দীর্ঘ টুইট করেছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন মুলুকে মোদির গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
প্রশ্ন এবার শুধু বিরোধীরা তুলেছেন না। এই ব্যাপারে মোদিকে কটাক্ষ করে টুইট করেছেন মোদির নিজেরই দলের রাজ্যসভার সাংসদ সুব্রামানিয়াম স্বামী। তিনি কমলা মোদির বৈঠকের ব্যাপারে মোদির টুইটের জবাবে টুইট করে লিখেছেন, ‘কমলা হ্যারিসও কি এই ব্যাপারে টুইট করেছেন? আমি দেখেছি তিনি করেছেন তার পরে অন্য এক বৈঠকের ব্যাপারে’। তারপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গতকাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে AUKUS নামক মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ভারতকে। কিন্তু জোটে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের মতো মার্কিন মিত্ররা। কেন বাদ দেওয়া হল ভারতকে তাই নিয়ে ক্ষোভ দেখা গিয়েছে মোদি সরকারের অভ্যন্তরে।
বাইডেন-কমলা জুটি হোয়াইট হাউস দখলের পর থেকে মাঝে মাঝেই মোদি সরকারকে হতাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্থান প্রশ্নেও ভারতকে পুরোপুরি বাইরে রাখে যুক্তরাষ্ট্র, যা একদমই ভালোভাবে নেয়নি সাউথ ব্লক।
উল্লেখ্য, বাইডেন-কমলা জুটি মোদি সরকারের মুসলিম বিদ্বেষী নীতি বিশেষ করে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং NRC নিয়ে প্রবল প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ক্ষমতায় আসার আগে। প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন কাশ্মীরে মোদি সরকারের স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহার করা এবং সেখানে নজিরবিহীন শাটডাউন জারি করার জন্যও। ক্ষমতায় আসার পর থেকে দুই মার্কিন নীতি নির্ধারক এসব ব্যাপারে তেমন কিছু না বললেও তারা যে এসব কারণে মোদি সরকারের ওপর খুশি নয়, তা বুঝিয়ে দিতে চাইছেন ইঙ্গিতে। আর শুধু ইঙ্গিত নয় কয়েক মাস আগে মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টোনিও ব্লিনকেন তার ভারত সফরের সময় মোদি সরকারকে ভারতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং মানবাধিকার রক্ষায় বিশেষ যত্নবান হতে বলেছিলেন।
তারপরে মার্কিন মুলুকে মোদির সঙ্গে এই আচরণ অনেক কিছু সুস্পষ্ট করে দিল বলে মনে করছেন অনেকে। তবে মোদি সরকার ব্যাপারটা কিভাবে নেয় সেটাই এখন দেখার।