
বুধবার ভোররাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত ‘সন্ত্রাসী পরিকাঠামো’-র বিরুদ্ধে সফল ভাবে সামরিক অভিযান চালাল ভারত। আজ ভোররাতে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামের এই অভিযানে নয়টি লক্ষবস্তুতে অভিযান করা হয়েছে। এতে ৯টি লক্ষ্যবস্তুর কথা অস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হলেও, সেগুলির বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়নি—শুধু এতটুকু জানানো হয়েছে যে এগুলি সবই এমন স্থান যেখান থেকে “ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দেওয়া হতো।”
বিগত কয়েকদশকে পাকিস্তানের মাটিতে এটিই ভারতের সবথেকে বড় সেনা অভিযান। যদিও বিবৃতিতে পরিষ্কার ভাবে বলে হয়েছে, অভিযান হয়েছে শুধুই সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে। কোনো পাক সামরিক ঘাঁটি আক্রমণ করা হয়নি।

লক্ষ্যস্থলগুলির প্রথম তথ্য প্রকাশিত হয় পাকিস্তানের ভেতর থেকে, বিশেষত বাহাওয়ালপুর থেকে তোলা জরুরি ভিত্তিতে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে, যেখানে জ্বলন্ত ভবন দেখা গেছে। ভারতীয় সময় ভোর ৪:৩৮-এ পাকিস্তানের প্রধান সামরিক মুখপাত্র পাকিস্তানের ছয়টি স্থানের নাম ঘোষণা করেন, যেগুলিকে ভারতীয় হামলার লক্ষ্যবস্তু বলে দাবি করেন। এগুলির মধ্যে চারটি পশ্চিম পাঞ্জাবে: বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে, সিয়ালকোটের কোটকি লোহারা গ্রাম এবং শাকারগড়ের কাছে একটি অঞ্চল। বাকি দুটি পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে: মুজাফফারাবাদ ও কোটলি। তিনি আরও বলেন, মোট “২৪টি আঘাত” হানা হয়েছে।
আজ সকালে, ভারতীয় সেনা সুত্রে ৯টি লক্ষ্যবস্তুর তালিকা এবং সেগুলি বাছাইয়ের কারণ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যদিও বাহাওয়ালপুর ও মুরিদকের ভূমিকা সুবিদিত, বাকি সাতটি স্থান সম্পর্কিত দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
৯টি লক্ষ্যবস্তু:
১. বাহাওয়ালপুর, পাঞ্জাব:
পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রায় ১০০ কিমি দূরে অবস্থিত এই বড় শহরের আহমেদপুর এলাকায় জৈশ-ই-মোহাম্মদের সদর দপ্তর। ২০০০ সালের শেষে আইসি-৮১৪ হাইজ্যাকিং-এ জিম্মি যাত্রীদের মুক্তির বিনিময়ে ভারত যে তিন সন্ত্রাসীকে মুক্তি দিয়েছিল, তাদের একজন মাসুদ আজহার প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন গত দুই দশকে ভারতের একাধিক সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
২. মুরিদকে, পাঞ্জাব:
আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ৩০ কিমি দূরে অবস্থিত এই শহর দীর্ঘকাল লশকর-ই-তৈয়বার (LeT) সদর দপ্তর ছিল। ভারতের দাবি, ২০০৮-এর ২৬/১১ মুম্বাই হামলার পরিকল্পনা এখানেই হাফিজ সাঈদ করেছিলেন। অবশ্য সাঈদ বছরখানেক আগে মুরিদকে ছেড়ে লাহোরে চলে গেছেন। ভারতের টার্গেট তালিকায় এই শহর থাকার সম্ভাবনা বেশি বলে LeT-র পক্ষে সেখানে উল্লেখযোগ্য সদস্য রাখা অসম্ভব ছিল।
৩. সরজাল ক্যাম্প, শাকারগড় জেলা, পাঞ্জাব:
ভারতীয় সূত্রমতে, আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ৮ কিমি দূরে সাম্বা-কাঠুয়ার বিপরীতে অবস্থিত এই জৈশ-ই-মোহাম্মদ ক্যাম্প।
৪. মেহমুনা ক্যাম্প, সিয়ালকোট জেলা, পাঞ্জাব:
ভারতীয় দাবি অনুযায়ী, হিজবুল মুজাহিদিনের এই প্রশিক্ষণ ক্যাম্প সীমান্ত থেকে ১৫ কিমি দূরে।
৫. গুলপুর, পাক-অধিকৃত কাশ্মীর:
লাইন অফ কন্ট্রোল (LoC) থেকে ৩৫ কিমি ভেতরে, পুনছ-রাজৌরির বিপরীতে অবস্থিত। ২০ এপ্রিল ২০২৩-এ পুনছ-এ এবং জুন ২০২৪-এ বাসে নিরীহ তীর্থযাত্রীদের ওপর হামলার “মূল” এখানেই বলে ভারতের দাবি।
৬. LeT কোটলি ক্যাম্প, পাক-অধিকৃত কাশ্মীর:
LoC থেকে ১৫ কিমি দূরে রাজৌরির বিপরীতে অবস্থিত এই ক্যাম্পকে ‘LeT বোমারু ক্যাম্প’ বলা হয়েছে, যেখানে প্রায় ৫০ সন্ত্রাসী থাকতে পারে। তবে LoC-র এত কাছাকাছি এবং ভারতীয় হামলার সম্ভাবনা জেনে কতজন সেখানে ছিল, তা স্পষ্ট নয়।
৭. LeT সাওয়াই ক্যাম্প, তাংধার, পাক-অধিকৃত কাশ্মীর:
LoC-র ৩০ কিমি ভেতরে অবস্থিত। সাম্প্রতিক পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলা এবং অক্টোবর ২০২৪-এ সোনামার্গ ও গুলমার্গে হামলার “মূল” এখানেই বলে ভারতীয় সূত্রের দাবি।
৮. বিলাল ক্যাম্প, অবস্থান উল্লেখ নেই:
শুধু ‘জৈশ-ই-মোহাম্মদের লঞ্চপ্যাড’ বলে বর্ণনা।
৯. বারনালা ক্যাম্প, পাক-অধিকৃত কাশ্মীর:
LoC থেকে ১০ কিমি দূরে রাজৌরির বিপরীতে অবস্থিত।