মুসলিমদের মৃতদেহ জ্বালানোর কারণে প্রবল চাপে শ্রীলঙ্কা, রাষ্ট্রসঙ্ঘের পর এবার আমেরিকার হুমকি

নিউজ ডেস্ক : শ্রীলঙ্কার মানবাধিকার সংগঠন, মুসলিম ধর্মীয় সংগঠন এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলির পর শ্রীলঙ্কা সরকারের করোনা আক্রান্ত মুসলিমদের মৃতদেহ জ্বালানোর ব্যাপারে তীব্র প্রতিবাদ জানাল রাষ্ট্রসংঘ। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশন এক চিঠিতে শ্রীলঙ্কা সরকারকে অবিলম্বে এই অমানবিক ব্যবস্থা বন্ধ করতে বলেছেন। রাষ্ট্রসঙ্ঘের পর এবার আমেরিকার জো বাইডেন প্রশাসনের বিদেশ মন্ত্রকের তরফ থেকে সরাসরি হুমকি এল শ্রীলঙ্কা সরকারের ওপর। বাইডেন প্রশাসনের বিদেশমন্ত্রক থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে শ্রীলঙ্কাকে সংখ্যালঘুদের এই বর্বর আচরণ পরিহার করে মৃত ব্যক্তিদের দেহ তাদের পরিবারের হাতে তুলে দিয়ে তা যথাযথভাবে সৎকার করতে দেওয়ার সুযোগ দিতে বলা হয়েছে।

ভারতের দক্ষিণের ভারত মহাসাগরের বুকে ছোট্ট দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলংকা মোট জনসংখ্যা দ২ কোটি ২৬ লাখের কিছু বেশি। মোট জনসংখ্যার ৯.৭ শতাংশ মুসলিম। আনুমানিক মুসলিমদের সংখ্যা ১৯ লাখের বেশি। দেশটিতে খ্রিস্টান রয়েছে প্রায় ৭.৪ শতাংশ। বৌদ্ধ ধর্ম এবং হিন্দু ধর্মের পর ইসলাম এ দেশের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম। কিন্তু তারপরেও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের উগ্র জাতীয়তাবাদের চাপে শ্রীলঙ্কা সরকার ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে সে দেশে করোনা আক্রান্ত সব মুসলিম এবং খ্রিস্টানদের মৃতদেহ তাদের পরিবারের প্রবল আপত্তি উপেক্ষা করে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। আরো অমানবিক এবং বর্বোরোচিত বিষয় হলো পরিবারগুলোর কাছ থেকে সেই মৃতদেহগুলি জ্বালানোর জন্য অতিরিক্ত পরিমাণ খরচ উসুল করছে শ্রীলঙ্কা সরকার।

প্রাথমিক অবস্থায় শ্রীলংকার মুসলিম সংগঠনগুলি সরকারের এই দাহ করার নির্দেশিকার বিরুদ্ধে সে দেশের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানালেও, সুপ্রিম কোর্টে সেই আবেদন অস্বীকৃতি জানায়। তারপরেই শ্রীলঙ্কার মুসলিমরা রাষ্ট্রসংঘ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সব জায়গায় চিঠি লিখে বিষয়টিতে তাদের হস্তক্ষেপ দাবি করেন। এই ব্যাপারটিতে ইতিমধ্যেই মার্কিন কংগ্রেসের বহু সদস্য চিঠি লিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনকে শ্রীলঙ্কা সরকারের উপর উপযুক্ত চাপ সৃষ্টির আবেদন জানিয়েছে।

এদিকে কয়েক সপ্তাহ আগে মালদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী আব্দুল্লাহ শাহিদ এক টুইট করে জানান, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি সে দেশের করোনা আক্রান্ত মুসলিমদের মৃতদেহগুলি মালদ্বীপে কবরস্থ করার অনুরোধ করেছেন। তিনি জানান মালদ্বীপ সরকার বিষয়টি বিবেচনা করছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতির এই অনৈতিক আবেদনের পর আরো তীব্র প্রতিবাদ ওঠে শ্রীলংকার মুসলিম সংগঠনগুলি এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তরফ থেকে। পরে অবশ্য শ্রীলঙ্কা সরকারের তরফ থেকে এই অনুরোধ প্রত্যাহার করা হয় বলেও জানা গেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, শ্রীলঙ্কা সরকারের করোনার কারণে নয় মূলত সেদেশের বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদকে উৎসাহিত করার জন্যই মুসলিমদের বিরুদ্ধে এই জঘন্য খেলায় নেমেছে। উল্লেখ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যেই জানিয়েছে করোনা আক্রান্ত যেকোনো মৃতদেহ কবরস্থ করা যেতে পারে, জবরদস্তি দাহ করার কোন প্রয়োজন নেই।

Latest articles

Related articles