
কলকাতা-সহ রাজ্যের নানান প্রান্তে প্রতিদিন ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে বল্গাহীনভাবে বেড়ে চলেছে শিক্ষার খরচও। লাগামছাড়া এই খরচের সাথে পাল্লা দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন রাজ্যের বাবা-মায়েরা।
আজকাল শহরের উচ্চ -মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বাবা-মায়েরা চান তাদের সন্তানদের নামকরা, ঝাঁ চকচকে বেসরকারি স্কুলগুলোয় ভর্তি করাতে। একদিকে সরকারি স্কুলগুলোর বেহাল অবস্থা, অন্যদিকে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি- দিন দিন মানুষকে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বিমুখ করছে। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা ‘গুণগত-মানসম্পন্ন’ শিক্ষার আশায় নিজেদের সন্তানদের বেসরকারি স্কুলগুলোয় ভর্তি করাচ্ছেন। কিন্তু সেই ‘গুণগত-মানসম্পন্ন’ শিক্ষার অছিলায় নেওয়া হচ্ছে বিপুল অঙ্কের বেতন। এর ফলে শিক্ষাব্যবস্থার বাইরে থেকে যাচ্ছে সমাজের বিরাট বড় একটা অংশ।

পাশাপাশি, দীর্ঘদিন শিক্ষক-নিয়োগ না হওয়ার ফলে ও সঠিক পরিকাঠামোর অভাবে রাজ্যে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় আট হাজারেরও বেশি সরকারি প্রাথমিক স্কুল। ধুঁকছে অন্যান্য সরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুলগুলোও। এই চূড়ান্ত অব্যবস্থারই অন্যায় সুযোগ নিচ্ছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো, দাবি বিশেষজ্ঞদের। তাদের অভিযোগ, সরকার আসলে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাটাকেই বেসরকারি হাতে তুলে দিতে চাইছে। তাদের এই নিষ্ক্রিয়তা ও নির্লিপ্ততা ইচ্ছাকৃত।

স্কুলগুলোয় পর্যাপ্ত পরিমাণে শিক্ষক নেই, চলছে দুর্নীতির মাধ্যমে অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ- ফলে অনেক জায়গায় আবার স্কুল চললেও ঠিকমত ক্লাস হচ্ছে না। তারা আরও জানাচ্ছেন যে, ছাত্র-ছাত্রীদের একটা বড় অংশ শিক্ষাব্যবস্থায় চলতে থাকা এই নৈরাজ্যের কারণে স্কুল-ছুট হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। গত একদশক ধরে যেভাবে রাজ্যের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, তার জন্যে দু-পয়সা রোজগারের আশায় গরিব ঘরের ছেলেরা যোগ দিচ্ছে হাতের কাজে আর মেয়েদেরকে পরিবার থেকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এভাবে, সরকারের গাফিলতির কারণে সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার ভবিষ্যৎ, অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে কয়েকটি প্রজন্ম।