একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কুর্দিস্তানের দৈনিক একুর্দ ডেইলি। প্রতিবেদনটিতে প্রকাশ করার হয়েছে, কিভাবে ইসরায়েলের শীর্ষ পর্যায়ে গোয়েন্দাগিরি করছে কাতার। মূল প্রতিবেদনটি দৈনিকটির আরবি ভার্সনে প্রকাশিত হয়েছে। খবরে বলা হচ্ছে, ১৯৪৮ সালের পর প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের অভ্যন্তরে একটি আরব দেশ গোয়েন্দাগিরি চালিয়েছে এবং যাতে খোদ ইসরায়েলের রাষ্ট্রক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায়েরও কেউ আছেন।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, গত মে মাসে ইসরায়েলে ৩ হাজার ৬৮০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছিল, যার প্রায় সবই আয়রন ডোম দ্বারা ঠেকিয়ে দিয়েছিল ইসরায়েল। যার মধ্যে ৬৮০টি দুর্ঘটনাক্রমে গাজা উপত্যকায় বিস্ফোরিত হয়েছিল। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এই বিশাল যুদ্ধ সরঞ্জামের পেছনে অর্থ ঢেলেছে কাতার।
বলা হচ্ছে, ইসরায়েল তার শত্রুদের ভালো করে জানে। তারা এটাও জানে, হিজবুল্লাহ সিরিয়া যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে রাশিয়ার মাধ্যমে যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ইসরায়েল এটাও জানে যে, হামাস কম বয়সী বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের যুদ্ধে নামায় কোনো বাধা ছাড়াই। কিন্তু ইসরায়েলের কেউ এটা ভাবার সাহস পায় না যে, কোনো আরব রাষ্ট্র ইসরায়েলের রাষ্ট্রক্ষমতার সর্বোচ্চ স্তরে অনুপ্রবেশ করতে পেরেছে। এর আগে বিখ্যাত ইহুদি এজেন্ট এলি কোহেন উচ্চ রোলার বাজিয়ে আসাদ প্রশাসনে অনুপ্রবেশ করেছিল। আল ক্যাপোন তার সৈন্যদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, বন্দুকের চেয়ে একটি খাম দিয়ে অনেক বেশি কিছু করা যেতে পারে।
প্রতিবেদনটি বলছে, ২০১৮ সাল থেকে কাতার থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার অর্থসহায়তা গাজা উপত্যকায় উদারভাবে ঢালা হচ্ছে। শুধু চলতি বছরেই ২০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি সাহায্য এসেছে। ইসরায়েলি অ্যাটর্নি জেনারেল আভিচাই মেন্ডেলবিন্ট প্রথমে কাতারের গোয়েন্দাগিরির বিষয়টি বুঝতে পারেন। তিনি ধরতে পারেন কিছু ভুল হয়েছে এবং তিনি বিচারিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে একটি বৈঠক ডাকেন। তিনি বুঝতে পারেন, কাতারের ওই অর্থায়নের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানেন এবং এর মাধ্যমে তিনি তার কর্তৃত্বকে ভারসাম্যে রাখতে চাচ্ছেন কোনো অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই।
এই নথিগুলো টু-ডি বারকোড দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। তাতে কাতারের কার্যক্রমের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহ ছিল বলে জানা গেছে। নথিগুলো প্রকাশের কয়েক সপ্তাহ আগে একজন ইসরায়েলি মন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে একটি কপি পেয়েছিলেন এবং সমস্ত নথি ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে পাঠানো হয়।
কিন্তু কাতার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে কিভাবে বাগে আনতে পারল সেটি প্রশ্ন থেকে যায়। যার সম্ভাব্য একটি কারণ হচ্ছে, ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে গোয়েন্দাগিরির জন্য এই কৃতিত্ব অর্জন সম্ভব হয়েছে। অবশ্য নথিতে অর্থ প্রদানকারী সংগঠক জসিম বিন মোহাম্মদ রুস্তমের নাম ব্যবহার করা হয়েছে, যিনি কাতারি গোয়েন্দাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কিন্তু কেউ একা এই ধরনের অভিযানে নামেন না। তিনি নিশ্চই ইসরায়েলি শুভাকাঙ্ক্ষীদের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। ওই ৫০ মিলিয়ন ডলার শুধু নেতানিয়াহুর নির্বাচনী প্রচারণায় খরচ করা হয়েছে তা সমর্থনযোগ্য নয়। সর্বোচ্চ ৬৫ লাখ নিবন্ধিত ভোটার রয়েছে ইসরায়েলে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নথিরর বিষয়ে ইসরায়েলের শুরাত হাদিন আইন কেন্দ্রে যোগাযোগ করা হয়। তারা গর্বের সাথে ইসরায়েলকে রক্ষা করা, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা মুখে বলে। কিন্তু ওই অভিযোগের কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি সেন্টারটি।
খবর বলছে, প্যান্ডোরা পেপারসে ইসরায়েলের দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ার খবর ফাঁস হয়েছে। অনেকেই ভেবেছিলেন, আরব দেশগুলো যে আব্রাহাম চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, এর মাধ্যমে পুরো অঞ্চলে শান্তি ফিরে আসবে। কিন্তু বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। বলা হয়ে থাকে, প্রতিবেশীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হচ্ছে নিজের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা। এর আগে কাতারের বিরুদ্ধে ২০১৭ সাল থেকে একটি নির্মাণ কোম্পানির মাধ্যমে হিজবুল্লাহকে অর্থায়নের অভিযোগ ওঠে।
সূত্র : 24 লাইভ নিউজপেপার ওয়ার্ল্ড