~ঝুমুর রায়।
তোমার অনেক টাকা ও সম্পত্তি আছে। হয়ত অবৈধ উপায়ে অর্জন করেছো। অবৈধ উপায়ে করো আর বৈধ উপায়ে করো,তাতে অসুবিধা নেই। তোমার এক প্রতিবেশী একবেলা খেয়ে দিন পার করছে। কোন কোন দিন অনাহারে কাটাচ্ছে। খাবার নেই,ভালো পোশাক নেই,থাকার ভালো ঘর নেই। আর তুমি তিন বেলা নামীদামী খাবার খাচ্ছো, সকালে যে পোশাক পরছো বিকালে তা আর পরোনা। এলিয়েনে করে তোমার যাতায়াত। তোমার সকালে এক কাপ চা পান করতে পাঁচ হাজার টাকা খরচা হয়। তোমার পায়ের জুতা জোড়ার দাম দশ হাজার টাকা। মোদ্দা কথা বিলাসী জীবন তোমার আর তোমার প্রতিবেশীর জীবন মানবেতর।
যদি এমন ব্যবস্থা থাকতো যে— সকলেই নির্দিষ্ট পরিমানের বেশী ধনসম্পদ গড়তে পারবে না,নির্দিষ্ট পরিমানের বেশী টাকাপয়সা ব্যাংকে জমা রাখতে পারবে না; নির্দিষ্ট পরিমানের বেশী ধনসম্পদ ও টাকাপয়সা অর্জন করলে অতিরিক্ত ধনসম্পদ ও টাকাপয়সা গরীবের মাঝে ভাগ করে দিতে হবে। তাহলে কেমন হত? দেশে কি আর গরীব থাকতো? পার্থ চট্টোপাধ্যায় কি এত টাকা সংরক্ষণ করতে পারতো? তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর মাঝে একজন দেবদেবীও এমন একটি নিয়ম পাশ করলো না! হিন্দু ধর্মের কতশত শাস্ত্র আছে, তার কোনো পৃষ্ঠায় এমন একটি নিয়মের কথা লেখা হলো না! কত অবতার এলো আর কত অবতার গেল- একবারের জন্য এমন একটি নিয়ম চালু করার কথা কারো বিবেকে এলো না!
হাজার খানেক সাধু সন্ন্যাসীর জন্ম হলো এই ভারতবর্ষে – কেউই এমন একটি নিয়ম চালু করার কথা ভাবলো না! তারা সকলেই কতশত বই লিখলেন, হিন্দু জাগরণ ঘটালেন, মন্দির তৈরী করলেন, ধর্মের নীতিবাক্য আওড়ালেন, কিন্তু কেউ-ই এমন একটা নিয়ম তাদের বইয়ে অন্তত লিখে যাননি। তারা হিন্দু ধর্মের শাস্ত্র গ্রন্থগুলি ধাপে ধাপে সংশোধন ও সংযোজন করেছেন, কিন্তু সেখানে এমন একটি নিয়ম সংযোজন করতে পারলেন না। হাজার হাজার নিয়মে পরিপূর্ণ সনাতনধর্মের শাস্ত্রগুলি। কিন্তু তার মাঝে এই একটি নিয়ম খুঁজে পাবেন না, অথচ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং মূখ্য বিষয়। বেদ,উপনিষদ, পুরান, মহাভারত, রামায়ণ, গীতা, ইত্যাদি শাস্ত্র গুলির কোথায়ও এই নিয়মটির উল্লেখ নেই। সেখানে আপনি খুঁজে পাবেন- কীভাবে মানুষের মাঝে ভেদাভেদ সৃষ্টি করতে হয়,কীভাবে মানুষকে উঁচু-নিচু বানিয়ে শোষণ করতে হয়,কীভাবে নিচু জাতের ধনসম্পদ কেড়ে নিতে হয়।
শাস্ত্রে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, ধনসম্পদ কেবলমাত্র উঁচু জাতের গচ্ছিত রাখার অধিকার আছে,নিচু জাতের ধনসম্পদ গড়ে তোলার কোনো অধিকার নেই। নিচু জাতের কাজই হলো উঁচু জাতের সেবা করা আর মন্দিরে-মন্দিরে টাকাপয়সা দান করা। শাস্ত্রে যা আছে বাস্তবেও তাই হচ্ছে।
শাস্ত্রে আছে কীভাবে ছদ্মবেশ ধারণ করে অন্যের স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে হবে,কীভাবে লোক ঠকিয়ে পয়সা অর্জন করতে হবে,কীভাবে নিজের আত্মীয়দের ষড়যন্ত্র করে যুদ্ধে পরাজিত করতে হবে,কীভাবে পাশা খেলে পরের স্ত্রীকে ভোগ করা যাবে,কীভাবে জনসমক্ষে নারীর শরীর থেকে শাড়ী খুলে ফেলতে হবে,কীভাবে মাটির মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা যাবে,কীভাবে ধর্মের দোহাই দিয়ে নরবলি দেয়া যাবে ও নিচু জাতের মেয়েদেরকে দেবদাসী বানিয়ে দিনের পর দিন ভোগ করা যাবে।
শুধু পাবেন না এই একটি নিয়মের উল্লেখ!
(মতামত লেখকের নিজস্ব। লেখকের সাথে ফেসবুকে সরাসরি যোগাযোগ করতে এখানে ক্লিক করুন।)