
কলকাতার চিকিৎসক ও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ ডা. শান্তনু সেন নতুন বিতর্কে জড়িয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিলের অভিযোগ, তিনি গ্লাসগো থেকে প্রাপ্ত FRCP ডিগ্রি কাউন্সিলে নথিভুক্ত না করেই তা নিজের লেটারহেডে ব্যবহার করেছেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে আগামী ২১ মে কাউন্সিলের এথিক্যাল কমিটির সামনে হাজিরা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শান্তনুকে।
ঘটনাটি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শান্তনু সেন। তাঁর বক্তব্য, “বারবার আবেদন সত্ত্বেও কাউন্সিল আমার ডিগ্রি নথিভুক্ত করেনি। ১০ হাজার টাকা ফি জমা দেওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন আমাকে দোষারোপ করা হচ্ছে।” তিনি দাবি করেছেন, বেঙ্গল মেডিক্যাল অ্যাক্ট ১৯১৪-এ অতিরিক্ত যোগ্যতা নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক নয়।
রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনাকে ঘিরে উত্তপ্ত বিতর্ক শুরু হয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রতিনিধিত্বকারী শান্তনু গত কয়েক মাসে দলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে বেশ কয়েকবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন। জি কর কাণ্ডের পর দলীয় নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় গত বছর তাঁকে দল থেকে সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল সভায় অংশ নিয়ে আবার আলোচনায় এসেছিলেন তিনি।
এক সময় ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট পদে থাকা শান্তনু এখন তথ্য জানার অধিকার (আরটিআই) আইনে আবেদন করেছেন। তিনি জানান, “জীবন ও পেশাগত স্বাধীনতা সংশ্লিষ্ট বিষয় হওয়ায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কাউন্সিলকে জবাব দিতে হবে। আমি জানতে চেয়েছি, কোন ধারা অনুসারে আমাকে এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।”
মেডিক্যাল মহলের একাংশের মতে, পেশাদার নৈতিকতা বজায় রাখতে কাউন্সিলের এই পদক্ষেপ প্রয়োজনীয়। তবে শান্তনুর সমর্থকরা বলছেন, এটি তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হয়রানির অংশ। কাউন্সিলের তদন্ত কী ফল বয়ে আনে, তা এখন সকলের কৌতূহলের বিষয়।
উল্লেখ্য, গ্লাসগো থেকে FRCP ডিগ্রি অর্জনের পর শান্তনু ২০১৬ সালে প্রথমবার কাউন্সিলে নথিভুক্তির আবেদন করেছিলেন বলে দাবি করেছেন। সাত বছর পর এই অভিযোগ উঠায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কেন এতদিন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মেডিক্যাল কাউন্সিলের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
রাজ্যের স্বাস্থ্য মহল সূত্রে জানা গেছে, এই বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। অনেকের মতে, একজন প্রাক্তন সাংসদ ও বিশিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পেশাদার সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করবে। আগামী দিনগুলোতে এই বিতর্ক আরও ঘনীভূত হতে পারে বলে অনুমান করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।