
মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ: প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে সোহা খাতুন রাজ্যের মেধাতালিকায় দশম স্থান জয় করে ইতিহাস গড়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকল ব্লকের সাহাদিয়াড় গ্রামের বাসিন্দা সোহা ৭৬৫ নম্বর পেয়ে কেবল জেলাতেই নয়, সমগ্র রাজ্যে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখল। তার এই সাফল্যে গর্বিত গ্রামবাসী থেকে শুরু করে শিক্ষক মহল।
সোহার বাবা সাইদুল ইসলাম একজন পরিযায়ী শ্রমিক। এখন স্থানীয়ভাবে কৃষিকাজ করে সংসার চালান। চরম আর্থিক সংকটের মধ্যেও মেয়ের পড়াশোনায় কখনও কমতি রাখেননি তিনি। সোহার ছোটভাই কলেজে পড়লেও, পরিবারের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ ছিল মেয়েটির শিক্ষায়। সোহা নিজেও প্রতিদিন বাড়ির পাশের সাহাদিয়াড় হাই মাদ্রাসায় নিয়মিত যাতায়াত করত, কোনো দিন স্কুল ফেলেনি।
সোহার মা মাধ্যমিক পাস। মেয়ের পড়ালেখায় তিনি নিজেই শক্ত নিয়ম কানুন চালু করেছিলেন। স্কুলের শিক্ষকরাও তাকে নিয়মিত গাইড করতেন। সোহা জানায়, “মা প্রতিদিন আমার রুটিন চেক করতেন। গণিত বা বিজ্ঞানে সমস্যা হলে শিক্ষকরা সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করে দিতেন।”
এই সাফল্যের পর সোহার চোখ এখন উচ্চশিক্ষায়। তার লক্ষ্য ডাক্তারি পড়া। বাবা সাইদুল ইসলাম বলেন, “যত কষ্টই হোক, মেয়ের স্বপ্ন পূরণে জান লড়িয়ে দেব।” স্থানীয় শিক্ষক রাকিবুল ইসলাম বলেন, “সোহার মতো মেধাবীরাই গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করে। আমরা তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।”
শহরাঞ্চলের নামী স্কুল-কোচিংয়ের বিপুল সুবিধা থাকলেও, সোহা প্রমাণ করল—অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর সহযোগিতায় গ্রামের মেয়েও রাজ্যের শীর্ষে জায়গা করে নিতে পারে। তার এই যাত্রা আজ সমস্ত প্রান্তিক পরিবারকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
সোহার মতো মেধাবীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য স্থানীয় সংগঠনগুলি এগিয়ে আসছে। শিক্ষক মহল চাইছেন, সরকারি স্তরেও এই কৃতি ছাত্রীর সমর্থনে বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা হোক।
সোহার উচ্চ শিক্ষায় পথচলা শুধু একটি পরিবার নয়, গোটা প্রজন্মের জন্য প্রেরণার উৎস।