
বিকাশ ভবনের সামনে এক অনড় প্রতিবাদের দৃশ্য। চাকরি হারানো শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা দিনের পর দিন অবস্থান করছেন চরম অনিশ্চয়তা ও আর্থিক দুর্দশা বুকে নিয়ে। তাঁদের কেউ ঘরে রেখে এসেছেন শিশু সন্তান, কেউ বা অসুস্থ মা-বাবা। চোখে মুখে ধোঁয়াশা, অথচ আশা হারাননি। সরকারের অবস্থান স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প তাঁদের দৃঢ়।
কিন্তু এই মানবিক সঙ্কটকে নাটক বলে কটাক্ষ করলেন রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তাঁর বক্তব্য, “বিকাশ ভবনের সামনে নাটক চলছে, কেউ কেউ টেলিভিশনে মুখ দেখানোর জন্য এসব করছেন।” তিনি আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্টই পাল্টাতে পারে। রাজপথে বসে আন্দোলনের মাধ্যমে কিছু হবে না।
ফিরহাদ অভিযোগ করেন, আন্দোলনের জেরে অফিস ছুটির পর বহু মানুষ আটকে পড়েছেন, ঘরে ফিরতে পারেননি। তাঁর মতে, জনদুর্ভোগ ঘটিয়ে আন্দোলন সঠিক পথ নয়।
বৃহস্পতিবার আন্দোলনের চেহারা আরও রক্তাক্ত হয়ে ওঠে। বিকাশ ভবনের সামনে লাঠিচার্জ করে পুলিশ, রক্ত ঝরেছে শিক্ষকদের মাথা ও পা থেকে। সকালেই বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান ও তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্তের অনুগামীদের দাপটের চিত্র ধরা পড়ে ক্যামেরায়, কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। উল্টে পুলিশ দাঁড়িয়েছে সব্যসাচীর পাশেই।
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সব্যসাচীকে ক্লিনচিট দিয়ে বলেন, “স্থানীয় মানুষ প্রতিবাদ করছেন, রাস্তা আটকে রাখা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সব্যসাচী দত্ত কি চুপ করে বসে থাকবেন?”
এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার শুক্রবার জানান, বিকাশ ভবনের কর্মীদের বার করার সময় যে পরিমাণ বলপ্রয়োগ প্রয়োজন ছিল, সেটুকুই করা হয়েছে। ঠিক এই সুরেরই প্রতিধ্বনি শোনা যায় ফিরহাদ হাকিমের মুখে।
চাকরি হারানো আন্দোলনকারীদের মতে, একজন জনপ্রতিনিধির মুখে এমন মন্তব্য অনভিপ্রেত এবং অমানবিক। তাঁদের প্রশ্ন, যাঁরা জীবন থামিয়ে পথে বসে আছেন, রক্ত দিচ্ছেন, তাঁদের যন্ত্রণাকে ‘নাটক’ বলা কি এক জন মানবিক নেতার কাজ হতে পারে?
এই প্রতিবাদ শুধু চাকরির জন্য নয়, ন্যায়বিচারের জন্যও বটে। আর এই রক্তাক্ত বাস্তবকে নাটকের মোড়কে আড়াল করতে চাওয়া কি সত্যিই সভ্যতার পরিচয় দেয়?