
মহারাষ্ট্রের নাগপুর শহরে পবিত্র কোরান পোড়ানোর অভিযোগে নাগপুর শহরের বিভিন্ন অংশে উত্তেজনা ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় শহরের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে পাথর ছোড়া, অগ্নিসংযোগ ও সম্পত্তি ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসন কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারি করেছে এবং ৫০ জনের বেশি ব্যক্তিকে আটক করেছে। পুলিশের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (BNSS)-এর ধারা ১৬৩ ও ১৪৪ জারি করে শান্তি রক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একটি দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করছিল। এ সময় ধর্মীয় গ্রন্থ পোড়ানোর গুজব ছড়ালে পরিস্থিতি হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। উত্তপ্ত জনতা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং পাথর ছোড়াছুড়ি, দোকান-স্টল ভাঙচুর ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ শুরু করে। মাহাল এলাকার পুরনো হিস্লপ কলেজের কাছে চিত্নিস পার্ক সংলগ্ন বাসিন্দাদের অভিযোগ, সন্ধ্যা ৭:৩০ নাগাদ একদল লোক এলাকায় ঢুকে বাড়িতে পাথর ছুঁড়েছে এবং গাড়ি ভাঙচুর করেছে।

ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তীব্র। বিজেপি বিধায়ক প্রবীণ দাতকে বলেছেন, “এই হিসাত্মক হামলা পূর্বপরিকল্পিত। দোকান ও ক্যামেরা ধ্বংসের পদ্ধতি থেকে এটা স্পষ্ট যে ইচ্ছাকৃতভাবে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা হয়েছে।” অন্যদিকে, শিবসেনা (উবিটি) নেতা সঞ্জয় রাউত মন্তব্য করেছেন, “নাগপুরে RSS-এর সদর দপ্তর এবং দেবেন্দ্র ফোড়নবিসের নির্বাচনী এলাকা হওয়ায় এখানে সহিংসতা অপ্রত্যাশিত। হিন্দুদের ভীত করে দাঙ্গায় জড়ানোর একটি নতুন কৌশল এখানে কাজ করছে।” এদিকে, AIMIM-এর জাতীয় মুখপাত্র ওয়ারিস পাঠান হিংসাত্মক হামলার নিন্দা করে অভিযোগ করেছেন, “বিজেপির কিছু সদস্য বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।”
নাগপুর পুলিশ জানিয়েছে, উত্তেজনা প্রশমনে কোতওয়ালি, গনেশপেঠ, তহসিল, লাকাডগঞ্জ, পাচপোলি, শান্তিনগর, সাকার্দারা, নন্দনবন, ইমামওয়াড়া, যশোধরা নগর ও কপিলনগর থানা এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। জনগণকে অপ্রয়োজনে বাইরে না বের হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ও কঠোর নজরদারির মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

হিংসার পেছনে আওরঙ্গজেবের সমাধি নিয়ে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা কাজ করছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। কিছু কট্টর হিন্দু গোষ্ঠী এই সমাধি অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিল, যা স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করে। গুজব ছড়ানোয় এই অসন্তোষ সহিংস রূপ নেয়। এছাড়া, হিংসার সময় দোকান ভাঙচুর, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও পাথর ছোড়ার ঘটনায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এখনও শহরের কিছু এলাকায় পরিস্থিতি টানটান। ৫০ জনের বেশি সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে এবং শান্তি শৃঙ্খলা আইনে কঠোর ব্যবস্থা চলছে। প্রশাসন সকল পক্ষকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছে। ঘটনার তদন্ত ও গুজব ছড়ানোর উৎস খুঁজতে বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্ক ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমেও গুজব প্রতিরোধে সচেতনতা ছড়ানোর আবেদন জানিয়েছেন। সম্প্রদায়ের নেতারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য আলোচনার ওপর জোর দিয়েছেন।
এই ঘটনা রাজ্য ও জাতীয় স্তরে রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার চ্যালেঞ্জকে আরও জটিল করে তুলছে।