এবার হিজাব বিতর্কে মুখ খুললেন রাজ্যের ধার্মিক জনমোর্চা সংগঠন

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

সাংবাদিক সম্মেলন, কলকাতা।
সাংবাদিক সম্মেলন, কলকাতা।

কলকাতা প্রেস ক্লাব, এনবিটিভিঃ  কর্ণাটকের উডুপির একটি স্কুলের হিজাব বিতর্ক সেই রাজ্যের গন্ডি ছাড়িয়ে এখন শারা দেশে হিজাব বিতর্ক সেই রাজ্যের গন্ডি ছাড়িয়ে এখন সারা দেশে প্রভাব বিস্তার করেছে। শিক্ষাঙ্গনে হিজাব পরতে বাধা দেওয়ার ঘটনাকে ধিক্কার জানিয়ে বিভিন্ন ধর্মগুরুগণ ধার্মিক জনমোর্চা সংগঠনের আওতায় সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। কলকাতায় আয়োজিত এই সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ধর্মগুরুরা সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপের নিন্দা জানান।

সাংবাদিক সম্মেলনে বিভিন্ন ধর্মগুরু একমত হয়ে তারা বলেন, “হিজাব মুসলিম মহিলাদের জন্য একটি অবশ্য পালনীয় কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। তাই কোর্টের নির্দেশ মুসলিম মহিলাদের ধর্মীয় অধিকার পালনে হস্তক্ষেপ করেছে এবং তাদেরকে বৈষম্যহীন শিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।”

সাংবাদিক সম্মেলন।

জামাআতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সভাপতি মাওলানা আব্দুর রফিক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের হিজাব ও শিক্ষার মধ্যে কোন একটি বেছে নিতে বলা যায় না। এই কথার প্রেক্ষিতে বলা যায়, মা ও বাবার মধ্যে কোন একজনকে এবং জল ও অক্সিজেনের। মধ্যে কোন একটিকে বেছে নিতে বলা হচ্ছে, যা সম্ভব নয়।”

এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে খ্রিস্টান ধর্মগুরু বলেন, “একটি ক্লাসরুম দেশের অখন্ড চিত্র বহন করে যেখানে বিভিন্ন ধর্মের পড়ুয়াদের বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য থাকবে। এই বিভিন্নতা স্বীকার করেই শিক্ষার অধিকার সকল স্তরে পৌঁছে দিতে হবে।”

তারা আরও বলেন, “দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে শিক্ষার্থীরা বছরের পর বছর ধরে হিজাব অনুসরণ করে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করে রাতারাতি হিজাব নিষিদ্ধের চক্রান্ত করা রাজনৈতিক অভিসন্ধিপূর্ণ। এমনকি কিছু স্কুলে হিজাব পরতে চাওয়া মহিলা ছাত্রীদের শ্রেণীকক্ষ থেকে আলাদা করে অন্য কোন স্থানে বসতে বলে নির্লজ্জ পদক্ষেপ নিয়েছে যা ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য সৃষ্টির এক ঘৃণ্য প্রচেষ্টা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পোশাকের ‘অভিন্নতার’ নামে সাংস্কৃতিক কতৃত্ব ও আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

স্কুলের নির্ধারিত ইউনিফর্মের বিরুদ্ধে কেউই প্রশ্ন তুলছে না, কিন্তু ইউনিফর্ম কেন এত কঠোর হবে যে, একটি শিক্ষার্থী কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে রাখতে পারবে না? শিক্ষাঙ্গনে এই সংকীর্ণ ও বর্জনীয় ধারণা বিরুদ্ধে সকলকে অবশ্যই সরব হতে হবে।

সাংবাদিক সম্মেলন।

 এই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ধর্মগুরুরা মনে করেন, শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কোন রূপ বৈষম্য ছাড়াই সকল শিক্ষার্থীর ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুশীলনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, বিশেষ করে যখন তা কোনোভাবেই অন্য শিক্ষার্থীদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে না।

 এই সম্মেলনের আরও একজন ধর্মগুরু বলেন, “কিছু স্কুলে হিজাব পরতে চাওয়া মহিলা ছাত্রীদের শ্রেণীকক্ষ থেকে বঞ্চিত করে অন্য কোন স্থানে বসার ব্যবস্থা করা এক নির্লজ্জ পদক্ষেপ। তারা হিজাবের পক্ষে সরব হওয়া সকলকে উদ্দেশ্য করে জানান, হিজাব বিতর্ককে হাতিয়ার করে হিন্দুত্ববাদী শক্তি সমাজে ও শিক্ষাঙ্গনে পড়ুয়াদের মধ্যে বিভাজনের চক্রান্ত চালাচ্ছে। তাই কোনরূপ প্ররোচনায় পা দেওয়া যাবে না।”

তারা হিজাব বিতর্কে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা ব্যানার্জীকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানান। তারা আশা প্রকাশ করেন যে, হিজাব মামলায় দেশের বিচার বিভাগ সংবিধানকে সমুন্নত রাখবে এবং মুসলিম মহিলাদের ধর্মীয় অধিকার অনুশীলনের পাশাপাশি বৈষম্য ছাড়াই শিক্ষা গ্রহণের অধিকার বহাল রাখবে।

আজ এই হিজাব বিতর্কের সাংবাদিক সম্মেলনে বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ মিশন থেকে স্বামী পরমানন্দ গিরী মহারাজ, পশ্চিমবঙ্গ জামাআতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সভাপতি মাওলানা আব্দুর রফিক, গুরুদুয়ারা সেন্ট কুটিয়ার তারসিম সিং।

আরও উপস্থিত ছিলেন বৌদ্ধ নেতা ডা, অরুণ জ্যোতি ভিকু, মন্দির ময়ুরভঞ্জের বারগাভ আচারিয়া, বৌদ্ধ নেতা ড. বুদ্ধপ্রিয় মহাথেরা, ফাদার সঞ্জিব দাস সহ আরও অনেকেই।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর