নিজস্ব সংবাদদাতা, দিল্লি, এনবিটিভি: ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি ডঃ এস কিউ আর ইলিয়াস মোদী- ২.০ সরকারের প্রথম বছরকে অত্যন্ত স্বৈরাচার ও নৈরাজ্যতে ভরা এক বিপর্যয়মূলক দুর্ভোগ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রথম মেয়াদে মোদি বিচার বিভাগ, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক, কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো, কেন্দ্রীয় নজরদারি কমিশন এবং কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির যথেষ্ট হতাশাজনক অবস্থা সৃষ্টি করেছেন।
দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বছরে, তিনি সংবিধানের বিরুদ্ধে অত্যন্ত দায়সারা ও সামান্য বিবেচনাহীন এক স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে উদ্ভটভাবে দেশ চালিয়ে গেছেন।
ডঃ ইলিয়াস আরো বলেন, এই মোদী- ২.০-এর সময়ে পাস হওয়া আইনের তালিকাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যা সরকারের সর্বগ্রাসী ধ্বংসাত্মক পরিচয় বহন করে। তিন তালাক বিল সংসদে পাস করা হয়েছে মুসলিম স্বামীদের অপরাধীকরণের পথে। এরপরে সরকার সংবিধানের 370 অনুচ্ছেদটি বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত ও হ্রাস করেছে।
এছাড়াও উপত্যকায় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতাদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করে রাখা হয়েছে। সেখানকার ইন্টারনেট এবং ফোন সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে জনগণের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করেছে। পরে সরকার ইউ এ পি এ সংশোধন করে এটিকে আরও কঠোর করে তুলেছে। তিনি আরটিআই আইন দুর্বল করার জন্য এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সংসদে কোনও বিতর্ক বা আলোচনা সুষ্ঠু বা গণতান্ত্রিক ভাবে চলতে দেওয়া হয় না। মিডিয়াকে কার্যতঃ পুতুল পুতুল বানিয়ে রেখেছেন মোদি।
ডব্লিউপিআইয়ের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবারও দাবী করে বলেছেন যে সরকার ২.০-প্রশাসনকে অনেকটা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। শুধু তাই নয় ,ঐতিহাসিক অযোধ্যা রায়কে সংখ্যা গরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের পক্ষে নেওয়ার জন্য তিনি সুপ্রিম কোর্টকেও প্রভাবিত করেছেন যে রায়ের সমাপ্তির সঙ্গে এর যুক্তি বা ঘটনার বাস্তবতার কোন মিল নেই তাই এই রায়কে বরং থানাদারের রায় হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে।
ডঃ ইলিয়াস উল্লেখ করেছিলেন যে মোদী সরকার প্রবর্তিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকদের মধ্যে চরম বৈষম্যের সৃষ্টি করে এবংএটিকে তিনি সামাজিক মেরুকরণের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন যার ফলশ্রুতিতে সারা দেশে স্বতঃস্ফূর্ত গণ-বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তীতে বিজেপির গুন্ডারা উত্তর পূর্ব দিল্লিতে একটি উষ্কানীমূলক সাম্প্রদায়িক প্রচার চালিয়ে একটি মারাত্মক দাঙ্গা সংঘটিত করেছিল। যেখানে মোট ৫৩ জন নিরীহ মানুষ মারা গিয়েছিল এবং কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে সিএএ-এর বিক্ষোভের অগ্রভাগে বেশিরভাগ নেতাকর্মী (বেশিরভাগ মুসলিম) কঠোর ইউ এ পি এর অধীনে গ্রেপ্তার হয়েছিল এবং তাদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা সৃষ্টির ভ্রান্ত অভিযোগ তোলা হয়েছিল, যদিও এই দাঙ্গায় মুসলমানদেরই অতিমাত্রায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
ডঃ ইলিয়াস আরো বলেছেন যে মোদি সরকার ২.০- অপরিকল্পিতভাবে লকডাউন চাপিয়ে করোনার ভাইরাসজনিত মহামারী ও মানব বিপর্যয় উভয়কেই ভীষণভাবে পরিচালনা করেছে যার ফলস্বরূপ লক্ষ লক্ষ অভিবাসী শ্রমিক এবং গরীবমানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পরিযায়ী শ্রমিকরা লাঞ্ছনার শিকার হয়ে ক্ষুধার্ত এবং বিপর্যস্ত অবস্থায় নিজ গৃহে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে এবং অনেকেই এই প্রক্রিয়াতে অকালে নির্মমভাবেপ্রাণ হারাচ্ছে।
তিনি আরও বলেছেন যে ২.০মোদী আমলে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এক ভয়ংকর জায়গায় দাঁড়িয়েছে। জিডিপি অবিচ্ছিন্নভাবে হ্রাস পাচ্ছে এবং একটি গভীর মন্দার ইঙ্গিত বহন করে চলেছে। বেকারত্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে ,এবং ধীরে ধীরে তা বেড়ে চলছে। লোকেরা ক্রয় ক্ষমতা হারাতে বসেছে এবং সরকার এটি ঠিক করতে সম্পূর্ণভাবে অক্ষম।
ডঃ ইলিয়াস বলেছেন যে ২.০-তে প্রধানমন্ত্রী মোদী সমস্ত দিক থেকে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে এবং আমাদের দেশকে অসহিষ্ণু ভারত বানিয়ে বিশ্বব্যাপী এর ভাবমূর্তি নষ্ট করে দিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে দিয়েছে।