নিউজ ডেস্ক : আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একটি মসজিদের প্রবেশপথে বিস্ফোরণে দুজন নিহত হওয়ার পর ইসলামিক স্টেটের (আইএস) একটি সেল ধ্বংস করেছে তালিবান সরকার। রবিবার রাতে কাবুলের উত্তর অংশে জঙ্গিদের ওই সেলটি ধ্বংস করা হয় বলে সোমবার এক টুইটে জানিয়েছেন তালিবান মুখপাত্র।
তালিবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, রবিবার কাবুলের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায় আইএসের বিরুদ্ধে সফল অভিযান চালিয়েছে তালিবানের একটি বিশেষ ইউনিট। অভিযানে জঙ্গিদের ঘাঁটি পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে থাকা সব জঙ্গিকে হত্যা করা হয়েছে।
ইসলামিক স্টেটের স্থানীয় শাখা আইএসআইএস-খোরসান ইতোমধ্যে তালিবানের বিভিন্ন লক্ষ্যে হামলা চালানোর দায় স্বীকার করেছে।
কাবুলের ঈদগাহ মসজিদের প্রবেশপথের কাছে এ রবিবার বিস্ফোরণ ঘটেছে। তালিবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদের মায়ের জন্য আয়োজিত স্মরণসভায় এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে তালিবানের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কারি সায়েদ খোস্তি জানান, বিস্ফোরণে প্রাথমিকভাবে দুজন নিহত ও তিন জন আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। হতাহতরা সবাই বেসামরিক নাগরিক বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে কাবুলের বিস্ফোরণের সাথে ওই অভিযানের সরাসরি কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা নিশ্চিত করা হয়নি। আগস্টের শেষ দিকে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের পর থেকে আফগান রাজধানীতে ঘটে যাওয়া এ বিস্ফোরণকে সবচেয়ে গুরুতর হামলা বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসলামিক স্টেটের স্থানীয় শাখা আইএস-খোরসান এরই মধ্যে তালিবানের বিভিন্ন লক্ষ্যে হামলা চালানোর দায় স্বীকার করেছে। তালিবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানান, রাজধানীর উত্তরে কাবুলের ১৭তম জেলায় আইএসের এক সেলের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় তালিবানের একটি স্পেশাল ইউনিট। টুইটারে দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এই চূড়ান্ত ও সাফল্যজনক আক্রমণে আইএসের ঘাঁটিটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে এবং ভেতরে থাকা আইএসের সব সদস্য নিহত হয়েছে।’
এর আগে স্থানীয় গণমাধ্যম ওই এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে বলে খবর দিয়েছিল। ওই এলাকার বাসিন্দাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে রাতে তারা বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শুনেছেন বলে রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন। আইএসের পাশাপাশি কাবুলের উত্তরে পানশিরের বিরোধীদলীয় নেতা আহমেদ মাসুদের অনুগত অবশিষ্ট বাহিনীগুলোর সাথেও লড়াই করতে হচ্ছে তালিবান বাহিনীকে। তার পরও দেশের ওপর তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে দাবি করেছে তালিবান।
কিন্তু রবিবার কাবুলের বিস্ফোরণ আর সম্প্রতি পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী নানগারহার ও কাবুলের উত্তরে পারাওয়ান প্রদেশে বেশ কিছু ছোট ছোট ঘটনা দেখিয়েছে দেশটিতে নিরাপত্তা হুমকি পুরোপুরি দূর হয়নি। নানগারহারের জালালাবাদ শহরে বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। এর আগে কাবুল থেকে বিদেশী নাগরিক ও দেশ ছাড়তে ইচ্ছুক আফগানদের বিমানযোগে সরিয়ে নেয়ার সময় কাবুল বিমানবন্দরের সামনে চালানো আত্মঘাতী হামলার দায়ও স্বীকার করেছিল তারা। এ হামলায় ১৩ মার্কিন সৈন্যসহ প্রায় ২০০ জন নিহত হয়েছিল।
জাবিউল্লাহ মুজাহিদের টুইটার অ্যাকাউন্ট স্থগিত : আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপমন্ত্রী ও তালিবানের প্রধান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদের টুইটার অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আনাদোলু এজেন্সি। রবিবার কাবুলে বোমা বিস্ফোরণের নিন্দা জানিয়ে মুজাহিদের টুইটের পরপরই এ পদক্ষেপ নেয় টুইটার কর্তৃপক্ষ। টুইটার কর্তৃপক্ষ জানায়, মুজাহিদের অ্যাকাউন্ট থেকে ‘কিছু অস্বাভাবিক কার্যক্রমের’ জন্য তারা এ পদক্ষেপ নিয়েছে। পরে অবশ্য জাবিউল্লাহ মুজাহিদের অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়া হয়।