
হোয়াইট হাউসের প্রাঙ্গণে ট্রাম্প, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনের অপেক্ষায় ছিলেন। মোদী যখন গাড়ি থেকে নামলেন, তখন তাঁদের মধ্যে উষ্ণ এবং আন্তরিক অভ্যর্থনা ও হাতে–কলমে বন্ধুত্বের ছোঁয়া দেখা গেল। বৈঠকের সূচনায় দুই নেতার মধ্যে কিছু ব্যক্তিগত ও কূটনৈতিক শ্লাঘা ও আন্তরিক মন্তব্য বিনিময় হয়েছে।
বৈঠকে ট্রাম্প তাঁর ‘টিট ফর ট্যাট’ নীতির প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি জানান, যে কোনো দেশ যদি আমেরিকার পণ্যে শুল্ক আরোপ করে, তাহলে তার পণ্যেও সমান হারে শুল্ক চাপা হবে। তাঁর কথায় ভারতের উপর বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়, যেখানে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন “ভারত বড্ড বেশি কর নেয়” – তবে মোদী শুল্ক নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি।
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কাটানোর উদ্দেশ্যে এবং আরও শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ার লক্ষ্যে, একটি ‘অপূর্ব’ বাণিজ্যপথ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ট্রাম্প উল্লেখ করেন যে, এই বাণিজ্যপথটি ভারত থেকে শুরু হয়ে ইজরায়েল, ইতালি—এবং অবশেষে আমেরিকা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। তেল, গ্যাস ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের মাধ্যমে ঘাটতি কমানোর কথাও উঠে আসে।
মুম্বাই হামলার ২৬/১১-এর অন্যতম চক্রী তাহাউর রানা, যিনি ইতিমধ্যে একটি আমেরিকান আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন, তাঁর ভারতে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ট্রাম্প সবুজ সংকেত দেন। মোদী এই সিদ্ধান্তে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বৈঠকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান সহ আরও নানা সামরিক সরঞ্জামের আমদানির বিষয়ে আলোচনা করা হয়। আমেরিকা ভারতের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করে, ট্যাঙ্কেরোধী ক্ষেপণাস্ত্র, বিমানের বিভিন্ন মডেল ও অন্যান্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রির সম্ভাব্যতা তুলে ধরা হয়।
ভারত-চিন সীমান্তের সঙ্কট মোকাবেলায় ট্রাম্প মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন, যদিও ভারতের পক্ষ থেকে বিদেশী হস্তক্ষেপের প্রতি আপত্তি জানানো হয়। একই সঙ্গে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ দমনের বিষয়ে একটি যৌথ বার্তাও রিলিজ করা হয়, যাতে পাকিস্তানকে তার ভূমিতে সন্ত্রাসী হামলা প্রতিরোধে সতর্ক করা হয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধভাবে আমেরিকায় বসবাসরত নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মোদী জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত সকল ভারতীয় নাগরিককে ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত।
বৈঠকে বাংলাদেশ সম্পর্কেও কথা ওঠে। ট্রাম্প বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানলেও, তিনি বিষয়টি বন্ধু মোদীর দায়িত্বে ছেড়ে দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এছাড়াও, সীমান্তে ভারত-চিনের উত্তেজনা ও সম্ভাব্য সংঘর্ষ কমানোর প্রয়াসও আলোচনায় উঠে আসে।
আদানি ঘুষ মামলা নিয়ে একটি সাংবাদিকের প্রশ্নে মোদী স্পষ্ট করে জানান, রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে ব্যক্তিগত বা নির্দিষ্ট কারোর বিষয়ে আলোচনা হওয়ার সুযোগ নেই। ভারতের গণতান্ত্রিক ঐক্যবদ্ধতার ওপর তাঁর জোরালো বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটেছে।
এই বৈঠকে, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও সন্ত্রাসবাদ দমনসহ বিভিন্ন কূটনৈতিক ইস্যুতে আলোচনার সূচনা হয়েছে। ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি ও মধ্যস্থতা প্রস্তাব সত্ত্বেও, কিছু বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সমাধান এখনও অধরা থেকেই গেছে। তবে সামগ্রিকভাবে, বৈঠকটি দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর ও বহুমুখী করার প্রত্যয় বহন করে।