
পেগাসাস নামে একটি গুপ্তচর সফটওয়্যার, যা ইসরায়েলের এনএসও গ্রুপ নামক কোম্পানি তৈরি করেছে, স্মার্টফোনের ব্যক্তিগত তথ্য যেমন ইমেইল, ছবি, গোপন চ্যাট, লোকেশনের তথ্য এবং আরও অনেক কিছু ব্যবহারকারীর অজান্তেই হাতিয়ে নিতে পারে। ২০২১ সালের জুলাইয়ে, বিশ্বের ১৭টি গণমাধ্যম সংস্থা এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের যৌথ তদন্তে জানা যায় যে, এই স্পাইওয়্যারটি(কম্পিউটার ভাইরাস যা ব্যবহারকারীর তথ্য চুরি করে)সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা এবং সামাজিক কর্মীদের উপর গোপন নজরদারি চালাতে ব্যবহৃত হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের দেশেরও নাম জড়িয়ে পড়েছে।
ভারতে এই স্পাইওয়্যারের সম্ভাব্য লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ও প্রহ্লাদ সিং প্যাটেল, শিল্পপতি অনিল আম্বানি, সিবিআইয়ের প্রাক্তন প্রধান আলোক ভার্মা এবং মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে প্রয়াত এসএআর গিলানির মতো ব্যক্তিরা। এনএসও গ্রুপ দাবি করে যে তারা এই সফটওয়্যারটি শুধুমাত্র সরকারগুলোর কাছে বিক্রি করে, যাদের মানবাধিকারের রেকর্ড ভালো এবং এটি কেবল অপরাধীদের ধরতে ব্যবহারের জন্য।
এই গুরুতর অভিযোগ সত্ত্বেও ভারত সরকার বারবার এগুলোকে অস্বীকার করেছে। ২০২১ সালের জুলাইয়ে আইটি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সংসদে বলেন, “ভারতে গোপনে কারও উপর নজর রাখা সম্ভব নয়।” এই ঘটনার পর সুপ্রিম কোর্ট একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ দল গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দেয়। ২০২২ সালের আগস্টে আদালত জানায়, তদন্তের জন্য দেওয়া ২৯টি ফোনের মধ্যে পাঁচটিতে ক্ষতিকর সফটওয়্যার পাওয়া গেছে, কিন্তু তা পেগাসাস কিনা তা নিশ্চিত করা যায়নি। আদালত আরও বলে যে, তদন্তে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, ২০২১ সালের নভেম্বরে মার্কিন সরকার এনএসও গ্রুপকে নিষিদ্ধ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। তাদের মতে, এই কোম্পানি আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কাজ করেছে। এরপর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, মার্কিন জেলা আদালতের বিচারক ফিলিস হ্যামিল্টন রায় দেন যে, এনএসও গ্রুপ আমেরিকার কম্পিউটার জালিয়াতি ও অপব্যবহার আইন এবং ক্যালিফোর্নিয়ার ডেটা অ্যাক্সেস সংক্রান্ত আইন ভঙ্গ করেছে। এছাড়াও, তারা হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহারের শর্ত লঙ্ঘন করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

মামলার রায়ে বিচারক হ্যামিল্টন এনএসও গ্রুপকে ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে পেগাসাসের সফটওয়্যার কোড হোয়াটসঅ্যাপের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দেন। তিনি জানান, এনএসও গ্রুপ বারবার আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছে এবং তাদের সফটওয়্যার কোড শুধুমাত্র ইসরায়েলে একজন নাগরিকের কাছে রাখার সিদ্ধান্তকে তিনি “অবাস্তব” বলে উল্লেখ করেন, কারণ এই মামলার শুনানি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে হচ্ছে।
এই ঘটনা বিশ্বব্যাপী গোপনীয়তা ও নজরদারির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে, যা এখনও আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।