
আশীষ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একজন ৪৮ বছর বয়সী কৃষক, আলু চাষের জন্য তাঁর ২.৫ বিঘা জমিতে ৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। সেই ছোট জমিটি, প্রায় ১.৫৫ একর, ছিল লিজ নেওয়া। একজন সাধারণ চাষির কাছে এই টাকাটাও বিপুল ধনরাশি। প্রায় ৬০,০০০ টাকার কাছাকাছি ঋণ নেন আশীষ ঘোষ। চাষির কাছে ফসলটাই একমাত্র সম্বল। ফসল ভালো হলে, ৬০০০০ এর ঋণ মুকুব এবং মুনাফা অর্জন, এই ছিল তার পরিকল্পনা। কিন্তু ওড়িশা এবং বিহারের মতো প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে ফসল বিক্রির উপর অন-অফ বিধিনিষেধ তাঁর সমস্ত পরিকল্পনা ভেঙে দেয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় আলুর দাম বৃদ্ধি রোধ করতে দু’বার এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে আগস্টের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এবং আবার মধ্য অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞ জারি করা হয়। শেষ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সময়, এই সিদ্ধান্তটি ঘোষের মতো হাজার হাজার কৃষককে দারিদ্র সীমায় ঠেলে দেয়। আরও দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, পশ্চিমবঙ্গের কোল্ড স্টোরেজ ইউনিটগুলি গত বছরের আলুতে ঠাসা থাকায় লক্ষ লক্ষ টাটকা ফসলের দাম হু হু করে নেমে গেছে।

আলু চাষের খরচ প্রতি বিঘায় ২৫,০০০-৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়, এবং কৃষকরা সাধারণত প্রতি বিঘায় ৪০,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকা আয় করেন। এই বছর, তারা প্রতি বিঘায় মাত্র ৬,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা আয় করতে পারবেন। আলু সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বপন করা হয় এবং জানুয়ারি থেকে মার্চের শুরু পর্যন্ত ফসল তোলা হয়। ব্যবসায়ীরা জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে আলু কিনে সেগুলি নয়-দশ মাসের জন্য সংরক্ষণ করে। কিন্তু সীমানা বন্ধ থাকায় কোল্ড স্টোরেজগুলি পুরানো মালে ভর্তি হয়ে রয়েছে।

এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল যখন কলকাতায় আলুর দাম ৪০-৪৫ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে ফসলের ফলন খারাপ হয় যার ফলে ফসলের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই কারণেই ফসল সরবরাহের সমস্যাগুলি দেখাদিচ্ছে। অসাধু ব্যাবসায়ীদের বাড়বাড়ন্তের ফলে পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ার মতো পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলির আলু চাষিদের এবং ব্যবসায়ীদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।