
মুজাফফরনগর, ৬ এপ্রিল: উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগর জেলায় ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করার জন্য ২৪ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করেছে স্থানীয় পুলিশ। এই ব্যক্তিরা গত ২৮ মার্চ, রমজানের শেষ জুম্মার নামাজের সময় বিভিন্ন মসজিদে হাতে কালো ব্যাজ পরে তাদের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। পুলিশ তাদের প্রত্যেককে ২ লাখ টাকার বন্ড জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
সিটি সুপারিন্টেনডেন্ট অফ পুলিশ সত্যনারায়ণ প্রজাপত গত ৫ এপ্রিল, শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় জানান, “আমরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ২৪ জনকে নোটিশ পাঠিয়েছি। এছাড়া, সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে আরও কিছু ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এই ব্যক্তিরা আইনের লঙ্ঘন করেছেন, এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নোটিশগুলি সিটি ম্যাজিস্ট্রেট বিকাশ কাশ্যপ পুলিশের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জারি করেছেন। নোটিশে বলা হয়েছে, এই ব্যক্তিদের আগামী ১৬ এপ্রিল আদালতে হাজির হয়ে ২ লাখ টাকার বন্ড জমা দিতে হবে।
যাদের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি হয়েছে, তারা জানিয়েছেন যে তারা শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের মত প্রকাশ করেছেন। একজন প্রতিবাদকারী বলেন, “আমরা কোনও হিংসার পথে যাইনি। কালো ব্যাজ পরে আমরা শুধু আমাদের অসন্তোষের কথা জানাতে চেয়েছিলাম। এটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে।”

ওয়াকফ সংশোধনী বিলটি গত ৩ এপ্রিল ভারতীয় সংসদে পাস হয়েছে। বিলটি উত্থাপন করেছিলেন সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। তিনি বলেছেন, “এই আইন মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বা তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য নয়। বরং, এর উদ্দেশ্য হলো ওয়াকফ সম্পত্তির কার্যকারিতা বাড়ানো, জটিলতা দূর করা, স্বচ্ছতা আনা এবং আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করা।”
লোকসভায় প্রায় ১২ ঘণ্টার তুমুল বিতর্কের পর বিলটি ২৮৮-২৩২ ভোটে পাস হয়। এরপর রাজ্যসভায় ১৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আলোচনার পর ১২৮-৯৫ ভোটে এটি অনুমোদিত হয়।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুজাফফরনগরের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। অনেকে পুলিশের এই পদক্ষেপকে গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। একজন স্থানীয় নেতা বলেন, “সরকার মুসলিম সম্প্রদায়ের কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা আমাদের অধিকারের জন্য লড়াই করে যাব।” অন্যদিকে, পুলিশ জানিয়েছে, তারা আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যেকোনো অশান্তি রুখতে কঠোর পদক্ষেপ নেবে। এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনগুলোতে মুজাফফরনগরে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।