লালপুরে পুকুর মালিকদের দখলে খাল, পানি নিষ্কাশনে পাকা সড়ক কেটেছে পানি বন্দীরা

শিমুল আলী

স্টাফ রিপোর্টার নাটোর

বন্যার পানি নয়, উপর্যুপরি বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সম্প্রতি পানি বন্দী হয়ে পড়েছে নাটোরের লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের ৯টি গ্রামের প্রায় ৩ হাজার পরিবার। সেই সাথে প্রায় ৫ শত হেক্টর জমি হয়েছে অনাবাদি।

বৃষ্টির জলাবদ্ধতা নিষ্কাশন ও কৃষকদের সুবিধার লক্ষ্যে বিলের মধ্য দিয়ে সরকারি বরাদ্দ হতে কর্তনকৃত খালটি কতিপয় লোভী পুকুর মালিকরা বন্ধ করে দেওয়ায় এ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।
সাময়িক পানি বন্দি দশা থেকে বাঁচতে স্থানীয় লোকজন আট্টিকা-গন্ডবিল পাকা রাস্তা কেটে পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেও, এতে পানি বন্দী মানুষদের দুর্দশা লাঘবে কোন কাজে আসছে না। এতে খালটি পুনঃ খনন ছাড়া এ ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার বিকল্প কোন পথ নেই এখন।

সরেজমিন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আলম মক্কেল খালটি খননের উদ্যোগ নেন। সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ অনিয়মের ফাঁদ থেকে বাঁচতে সে সময় তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তারই নের্তৃত্বে খাল বন্ধ করে শুরু হয় পুকুর খনন। আজিজুল আলমের ছেলে আব্দুল আলীম ও আসাদুজ্জামান বাবু খালের মুখ বন্ধ করে পুকুর খনন করায় অন্যান্যরাও পুকু্র খননে উৎসাহিত হয়ে পর্যায়ক্রমে পুরো খালটি পুকুর মালিকদের দ্বারা বন্ধ হয়ে যায়। আর এর ফলে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় শত শত হেক্টর জমি অনাবাদি হওয়ার পাশাপাশি এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় ভুক্তভোগী মানুষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে লালপুর ও বাঘা উপজেলার উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং দুড়দুড়িয়া ইউনিয়ন ও বাজুবাঘা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের সিদ্ধান্তনুযায়ী একটি কমিটির অধীনে সার্ভেয়ারের মাধ্যমে খালটি পুনঃ খননের উদ্যোগ নেয়া হয়। গত ১১ মার্চ সার্ভেয়ার সহ উক্ত কমিটি সভার আয়োজন করলে সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আলম ও কতিপয় ভিগুর দালালরা সভা স্থলে হাঙ্গামার সৃষ্টি করে খাল খনন বন্ধ করে দেয়।
সম্প্রতি পানি বন্দী মানুষদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার (২২ জুলাই) বিকেলে লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মুল বানীন দ্যুতি সরেজমিন পানি বন্দী এলাকা সমূহ পরিদর্শন করেন। এ সময় পানি বন্দী মানুষরা তাদের দুর্দশার কারন থেকে মুক্তি পেতে আবারও খালটি পুনঃ খননের আবেদন করেন।
এ বিষয়ে বসন্তপুর বিলের জলাবদ্ধতা নিরসন কমিটির সাধারন সম্পাদক হীরেন্দ্রনাথ মন্ডল জানান, চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় খাল খনন করেন আজিজুল আলম মক্বেল। অথচ পরবর্তীতে নিজে ও ছেলেদের দিয়ে পুকুর কেটে খাল বন্ধ করে দেন। এতে হাজার-হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়ে। এখন খাল পুনঃ খননে সহযোগিতা না করে তিনিই বাধা সৃষ্টি করছেন। যার ফলে আমরা পানি বন্দী হয়ে হয়েছি। প্রশাসনকে বার বার অবহিত করেছি, এখনো কোন সুরাহা মেলে নি।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মুল বানীন দ্যুতি জানান, পানি নিষ্কাশনের জন্য পাকা রাস্তা কাটা ঠিক হয় নি। খাল খনন ছাড়া এ দুর্ভোগ লাঘব সম্ভব নয়। খাল দখলকৃত পুকুর মালিকদের তালিকা দেখে, জনদুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Latest articles

Related articles