ফের বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের উদ্যোগে দেওয়া হল আম্ফান রিলিফ নেটওয়ার্ক

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG-20200610-WA0017

নিজস্ব সংবাদদাতা, এনবিটিভি: ফের বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের উদ্যোগে মিনাখা ব্লকের পূর্ব মোহনপুর এবং কালীবাড়ি গ্রামে চালু হতে চলেছে নতুন দুটি কমিউনিটি কিচেন। সেইসঙ্গে হরিনুল্লাহ্‌ এবং মথুরাপুরের কমিউনিটি কিচেনগুলিও চলছে। এখানকার মূল উদ্যোক্তা নেটওয়ার্কের অন্যতম সংগঠন ‘বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ’। তাছাড়া হাসনাবাদ থানার শুলকুনি,বীরপাড়া, তেঁতুলতলা, পূর্বপাড়া, কালীতলা, হিঙ্গলগঞ্জ এলাকাতে বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের তরফ থেকে বাচ্চাদের দুধের প্যাকেট, মেডিসিন, ওআরএস, খাদ্য সামগ্রী তুলে দেওয়া হয় সেখানকার মানুষের হাতে।

কোথায় কত ত্রান দেওয়া হয়েছে বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের পক্ষ থেকে দেখুন-

৩ জুন: রাক্ষসখালী গ্রামে ত্রিপল সহ ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয় ২০০টি পরিবারের কাছে। মেডিক্যাল ক্যাম্প করা হলেও প্রচারের অভাবে আশানুরূপ হয়নি। অন্য একটি টিম ওইদিন গোসাবা ব্লকের রাঙাবেলিয়া উত্তরপাড়া ও জটিরামপুর সরদারপাড়ার ৩০০ পরিবারকেকে খাদ্যসামগ্রী, সাবান, স্যানিটারি ন্যাপকিন তুলে দেয় নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে। শ্রমজীবী নারী মঞ্চ ও বিলুপ্ত-র পক্ষ থেকেও এই রিলিফ কর্মসূচিতে নানাভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

৪ জুন: সন্দেশখালি ২ নং ব্লকের শীতলিয়া মৌজার ২টি অংশে আদিবাসী পাড়া ও মুসলিম পাড়ার ৩৫০ পরিবারের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়। শুকনো খাবার, দুধ, মশারি, স্যানিটারি ন্যাপকিন ইত্যাদি তুলে দেওয়া হয় এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের হাতে। বরানগর আলমবাজার অঞ্চলের সবুজ সংঘ ক্লাব, বেলঘড়িয়া ও কলকাতার কয়েকজন বন্ধুরা মিলিত ভাবে এই ত্রাণ বন্টন করেন শীতলিয়া হাই স্কুল সংলগ্ন একটি শিবির থেকে। শীতলিয়া হাটখোলা মিলন বীথি সংঘের সংঘের সহযোগিতায় এই শিবির অনুষ্ঠিত হয়।

দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নেটওয়ার্কের ছেলেমেয়ারা ওই দিন দুটো টিমে ভাগ হয়ে যায়। একটা টিম পৌঁছেছিল নামখানার অদূরে মদনগঞ্জ থেকে আরো ভিতরের গ্রামে, হেলেন ক্লোসারের কাছে দক্ষিণ পাড়ায়। সেখানে ২০০ পরিবারে ত্রাণ বন্টন এবং মেডিক্যাল ক্যাম্প করা হয়। আর একটা টিম মৌসুনি দ্বীপে যায়। সেখানে তিনটে আলাদা জায়গায় রিলিফ ওয়ার্কে মোট ২৫০ পরিবারের কাছে পৌঁছনো গিয়েছে। সঙ্গে দেওয়া হয় ১০০টি ত্রিপল।

৫ জুন: বিশ্ব পরিবেশ দিবসে বিভিন্ন ডাক্তাররা রওনা দিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার কালিন্দী নদীর তীরে দুলদুলি দ্বীপে চর সাহেবখালী অঞ্চলের সাঁতরা গ্রামে। শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ ও WBDF-এর যৌথ প্রচেষ্টায় ডাক্তার বন্ধুরা ইতিমধ্যেই উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিভিন্ন আমফান-বিধ্বস্ত গ্রামে ছুটে গেছেন জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে। দুই বাংলার সীমান্ত এলাকায় সাঁতরা গ্রামে ডাক্তাররা শতাধিক রোগী দেখেন ও ওষুধ দেন।

৬ জুন: আগের দিন আসা ডাক্তাররা ভান্ডারখালী দ্বীপে রাত কাটিয়ে সকালে উপস্থিত হন শীতলিয়াতে। সেখানে তাঁরা ৩০০-র বেশি রোগীর চিকিৎসা করেন।

ওইদিনই কলকাতার বেহালা অঞ্চলের এক শিক্ষিকার উদ্যোগে তাঁর ছাত্রছাত্রীদের টীম পৌঁছায় রূপমারী গ্রাম পঞ্চায়েতের কুমিরমারী গ্রামে। তাঁরা এখানকার আমফান-বিধ্বস্ত মানুষদের জন্য খাদ্যসামগ্রী ও জামাকাপড় নিয়ে গিয়েছিলেন। ৩০০-র বেশি পরিবারকে সহায়তা করা যায় এই উদ্যোগের মাধ্যমে।

৭ জুন: সুদূর দুর্গাপুর থেকে দ্বিতীয় দফায় ত্রাণ নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন “পুনরুদ্ধার”-এর বন্ধুরা। এইদিন তাঁরা ত্রাণ সামগ্রী বন্টন করেন রূপমারী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার হলদা ও বাইনাড়া গ্রামে। ৬০০ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় খাদ্যসামগ্রী ও জামাকাপড়।

এদিনই কলকাতা ও বসিরহাট থেকে রওনা দিয়েছিলেন ‘সোপান’-এর পরিবার। পথে তাঁরা আটকে পড়েন নদীর জোয়ারের জলে। গৌড়েশ্বরের ভাঙা বাঁধ দিয়ে জল ঢুকে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। ফলে পুরো টিম পৌঁছতে পারেনি শীতলিয়া গ্রামে। অনেক বাধা পেরিয়ে রাতে পৌঁছনোর পর সিদ্ধান্ত হয় পরের দিন ত্রাণ বন্টন করা হবে।

এদিনই আরেকটি রিলিফ কর্মসূচি সংগঠিত হয় হাসনাবাদের অদূরে শুলকুনি গ্রামে। কাটাখালীর ভাঙ্গনে নদীর দুপারে খাঁপুকুর ও শুলকুনি ভেসে গেছে। এখানে মোট ৬০০টি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় রিলিফ প্যাকেট।

একই দিনে ব্যারাকপুরের ‘পদক্ষেপ’ সংস্থার বন্ধুরা ত্রাণসামগ্রী নিয়ে গিয়েছিলেন রায়মঙ্গলের পাড়ে মাধবকাঠি গ্রামে। এখানকার আমফান-বিধ্বস্ত ৩৫০টি পরিবারের হাতে শুকনো খাবারের প্যাকেট ও জামাকাপড় তুলে দেন তাঁরা।

ওইদিনেই নেটওয়ার্কের অন্যতম সংগঠন ‘বরানগর নাগরিক উদ্যোগ’ মিনাখা ব্লকের কোকিলপুর গ্রামে ১৭৩টি পরিবারের হাতে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেয়। বিদ্যাধরীর শাখানদী বুড়ি-র বাঁধ ভেঙে এলাকাটি সাংঘাতিক ভাবে প্লাবিত।

৮ জুন: ‘সোপান’ ও ‘বিলুপ্ত’-র বন্ধুরা ভোর পাঁচটা থেকে শীতলিয়া হাটখোলার মিলন বীথি সংঘের প্রাঙ্গণে রিলিফ প্যাকেট বিলি করা শুরু করেন। শুকনো খাদ্যসামগ্রী, দুধ, সাবান, টুথপেস্ট, মোমবাতি, দেশলাই, স্যানিটারি ন্যাপকিন তুলে দেওয়া হয় ৮০০ পরিবারের হাতে।

শীতলিয়া থেকে নদীপথে যাওয়া হয় পুঁইজালি গ্রামে। দক্ষিণ ২৪ পরগণার রায়মঙ্গলের পাড়ে এই গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আমফান ঝড়ে। নদীবাঁধ ভেঙ্গে নোনা জলে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ চাষ জমি। পুকুরে দূষণ ভয়াবহ। ‘সোপান’ ও ‘বিলুপ্ত’-এর বন্ধুদের সহায়তায় প্রায় ৩৫০ পরিবারকে উপরে উল্লেখিত সামগ্রী ছাড়াও প্লাস্টিক সিট দেওয়া হয়।

এছাড়া ওইদিন সন্দেশখালি দ্বীপের আখড়াতলায় ২৫০টি পরিবারকে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর