হালুয়াঘাটে বিলের ভেতর হাঁসের খামার

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

received_240481970733498

 

মো. জাকিরুল ইসলাম

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ২৫ কিলোমিটারের রাস্তা এরপর দক্ষিণ দিকে দৃষ্টি ফেরালেই চোখে পড়ে মোকামিয়া গ্রামের বিশাল মাঠ ও কলমী বিল। চতুর দিক টুইটম্বুর পানি বিলের ভিতর দৃষ্টিনন্দন একটি ঘর। দূর থেকে একসঙ্গে এত হাঁস দেখে প্রথমে অতিথি পাখি ভেবে কেউ ভুল করে বসতে পারে। একটু ভালো করে খেয়াল করলেই দেখা যাবে নৌকা নিয়ে দুইজন দুইপাশে বসা-মাঝখানে পানিতে ঝাঁকে ঝাঁকে হাঁস সাঁতার কাটছে, ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছে কিংবা ডুব দিয়ে খাবার তুলে আনছে। এগুলো পোষা হাঁস। সারাদিন খাবার খেয়ে সন্ধাবেলায় দলগত ভাবে উঠে যায় তাদের আবাসস্থলে। এখন দলগত হাঁসেরা অভ্যস্থ। সন্ধা হলেই সিড়ি বেয়ে আবাসস্থলে গিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে ডিম দেওয়ার। ডিম দেওয়ার জন্য রয়েছে কাটের তৈরি ছোট ছোট বক্স।
সৌন্দর্যময় এই বিলে এই খামার তৈরি করে হাঁস পালনে উদ্ভুদ্য হয়েছেন বিলপাড়ে বেড়ে উঠা আজিজ জামালের ২ ছেলে উদ্যোমী তরুণ শহিদুল ইসলাম (৩০) ও তার সহোদর সোলায়মান (২২)।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র। সাক্ষাত হয় খামারী শহিদুল ইসলাম এর সাথে। বিলের ভেতর দৃষ্টিনন্দন খামার তৈরি অনুপ্রেরণা নিয়ে আলাপচারিতা হয় তাঁর সাথে।

তিনি জানান সময়টা ২০১৫-১৬ দিকে, তাঁর ছোট ভাই এর অনুপ্রেরণায়য় ১৫০০খাকি ক্যাম্বেল জাতের হাঁস নিয়ে শুরু করেন স্বপ্নের বীজ বপণে কিন্তু কিছুদিন পর সেই স্বপ্নে বাজ পড়ে প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সব গুলি হাঁস মারা যাওয়ায়। তবু পিছ-পা না হয়ে স্থানীয় ভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে আবারো শুরে করেন ১৩০০ বাচ্চা নিয়ে। বড় হতে থাকে হাঁস। ২-৩ মাস পর উপযোগি হলে বিক্রি করে দেওয়া হয় সেগুলি। এভাবে চলতে থাকে বছর পাঁচেক। ফের বর্ষা মৌসুমে শুরু করেন হাঁস পালন। বছর শেষে লভ্যাংশ কখনো থাকে কখনো থাকেনা।

আবারও যাত্রা শুরু করলেন ১৫০০ হাঁস নিয়ে তবে একটু ভিন্ন ভাবে । বাড়ির পাশে থাকা কলমী বিলে তৈরি করা হলো ৪২ হাতের একটি দৃষ্টিনন্দন ঘর। সেখানে স্থানান্তর করা হলো সবগুলি হাঁস। সারাদিন উন্মুক্ত বিলে ছেড়ে দেওয়া হয় হাঁস গুলিকে। সন্ধায় ঘরমুখি করা হয় তাদের।

উন্মুক্ত বিলে স্থান্তরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান বিলে হাঁসের খামার গড়ে তুলতে তেমন একটা খরচের প্রয়োজন পড়ে না। অল্প খরচে লাভও হয় দ্বিগুণ। খামারে একটি হাঁসের জন্য যে পরিমাণ খরচ হয়, এরকম বিলে তা অর্ধেকেরও কম। কারণ বিলে হাঁস শামুকসহ বিভিন্ন খাবার সহজেই পায়। ফলে হাঁসের জন্য বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। খোলা বিলে একটি হাঁসের জন্য মাসে খরচ হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গত ৩ মাস যাবৎ ৫০০ হাঁস থেকে দৈনিক ৩০০-৩৫০ টি ডিম আসে। আগে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হতো এখন আর তা করতে হয়না। খামার থেকে নিয়ে যায় পায়কারী ক্রেতারা এমন তথ্য জানিয়েছেন শহিদুল ইসলাম। তিনি আরো জানান সরকার যদি আমাদের সহয়তা করে তাহলে হয়তো আমাদের স্বপ্ন পূরণে আরো অগ্রসর হতে পারবো

সূত্রে জানা যায়,খাকি ক্যাম্বেল জাতের হাঁস চার থেকে পাঁচ মাস পর ডিম দিতে শুরু করে। প্রতিটি হাঁস বছরে ২৫০ থেকে ২৮০টি পর্যন্ত ডিম দেয়। উন্মুক্ত স্থানে এদের রোগবালাইও কম হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে হালুয়াঘাট উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা.মো. শহিদুল আলম জানান, মোকামিয়াতে ৫০০ হাঁসের খামার আমাদের তালিকায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময় প্রয়োজনীয় ঔষদ নিয়ে থাকেন। হাঁসের খামারটি আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর