মোদি সরকারের ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেট প্রকাশের পর থেকেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। সমালোচকদের মতে, এই বাজেট ধনী ও কর্পোরেট শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করলেও সাধারণ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কোনো বড় স্বস্তি নিয়ে আসেনি। বরং করছাড়ের দোহাই দিয়ে করযোগ্য আয়ের বাইরে থাকা নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে করের বোঝা আরও বাড়ানোর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।
এই বাজেট পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, দেশের শীর্ষ ১% ধনী শ্রেণির জন্য বিপুল সম্পদ ও সুযোগ বরাদ্দ করা হয়েছে। একদিকে, কর্পোরেট কর ও উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের জন্য বিনিয়োগে করছাড়, অন্যদিকে শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্তের জন্য প্রত্যক্ষ সুবিধা না থাকা, স্পষ্টতই সরকারের শ্রেণিগত পক্ষপাতিত্বকে প্রকাশ করে।
বাজেটে ধনীদের সুবিধার্থে কয়েকটি বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে—
- কর্পোরেট করের হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে, অথচ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার জন্য বিশেষ কোনো করছাড় ঘোষণা করা হয়নি।
- ধনীদের জন্য ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্সের হার কিছু ক্ষেত্রে কমানো হয়েছে, যা শেয়ারবাজারে বড় বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি মুনাফা করার সুযোগ দেবে।
- বড় শিল্পপতিদের জন্য ঋণ মাফের পরিমাণ বেড়েছে , অথচ কৃষিঋণ মওকুফের ক্ষেত্রে কোনো বড় ঘোষণা নেই।
মধ্যবিত্ত করদাতাদের জন্য প্রত্যক্ষ করছাড়ের আশায় থাকলেও বাজেট তাদের নিরাশ করেছে।
- আয়করের মৌলিক ছাড়ের সীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে , অথচ মুদ্রাস্ফীতির কারণে প্রকৃত ব্যয় ক্রমশ বাড়ছে।
- ছোট চাকুরিজীবী ও পেনশনভোগীদের জন্য করছাড় বাড়ানো হয়নি।
- সাবসিডি হ্রাস অব্যাহত, ফলে সাধারণ মানুষকে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বেশি বহন করতে হবে।
অন্যদিকে, ন্যূনতম আয় না থাকলেও করযোগ্য নাগরিকের তালিকায় পড়তে থাকা নিম্নবিত্ত মানুষদের ক্ষেত্রে কোনো বাস্তবসম্মত ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়নি। বরং করব্যবস্থার এমন কাঠামো রাখা হয়েছে, যাতে ন্যূনতম আয়ের সীমার নিচে থাকা নাগরিকরাও পরোক্ষ করের মাধ্যমে অধিক বোঝা বহন করতে বাধ্য হন।
এই বাজেটের মাধ্যমে শিক্ষা ও গবেষণায় বরাদ্দ কমিয়ে কর্পোরেট গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে।
- শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ নামমাত্র বৃদ্ধি পেলেও প্রকৃত ব্যয়ের দিক থেকে কোনো বড় পরিবর্তন আসেনি।
- কর্পোরেট খাতনির্ভর গবেষণা প্রকল্পের জন্য ২০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, অথচ সরকারি গবেষণা প্রকল্পগুলোর তহবিল ৭.৮৯% কমানো হয়েছে।
- সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজেট সংকোচনের ফলে ছাত্রদের ওপর ফি বাড়ানোর চাপ পড়তে পারে।
সরকার বাজেটে ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর বুলি আওড়ালেও বাস্তবে নিম্নবিত্তের জন্য কোনো বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
- পিএম-পোষণ প্রকল্পের বরাদ্দ মাত্র ০.২% বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা শিশুপ্রতি মাত্র ৫ পয়সা বৃদ্ধি।
- কৃষকদের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) সংক্রান্ত কোনো নতুন ঘোষণা করা হয়নি, যা তাদের সংকট আরও বাড়াতে পারে।
- কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কোনো নির্দিষ্ট নীতি প্রকাশ করা হয়নি, অথচ বড় শিল্পপতিদের করছাড়ের সুযোগ বহাল রয়েছে ।
এই বাজেট মূলত ধনী ও কর্পোরেট শ্রেণির স্বার্থরক্ষা করে তৈরি হয়েছে। যেখানে দেশের ১% মানুষের জন্য বিপুল সুযোগ বরাদ্দ করা হয়েছে, সেখানে সাধারণ জনগণের জন্য স্বস্তির ব্যবস্থা খুবই সীমিত। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির জন্য করছাড় বা কোনো বড় সহায়তা ছাড়াই মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বৃদ্ধি পাবে। এভাবে চলতে থাকলে সামাজিক বৈষম্য আরও বাড়বে, এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল কেবলমাত্র এক শ্রেণির মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।