করোনা আবহের মধ্যে যখন সমাজের সকল স্তরের মানুষের মানসিকতা বিপর্যস্ত, ঠিক তখনই কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অমানবিক আচরণ সামনে এল। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে তাদের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ফর্ম ফিলাপের জন্য ফি বাবদ যে টাকা ধার্য করা হয়েছে, তা শুনে ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ থেকে বুদ্ধিজীবীরাও। সকলেরই বক্তব্য, বর্তমান সংকটের সময়ে যখন প্রতিটি মানুষ একযোগে একে অপরের প্রতি সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তখন শিক্ষার্থীদের ওপর এই বাড়তি টাকার বোঝা কিভাবে চাপিয়ে দেওয়া হল। যখন শিক্ষাব্যবস্থার পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে, অনলাইন ক্লাসই একমাত্র ভরসা, বিপন্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সেখানে পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহস যোগানোর বদলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিবেচনাহীন আচরণ শিক্ষার্থীদের আরও হিনমন্যতার দিকে ঠেলে দেবে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদদের একাংশ। ছাত্র ছাত্রীদের অভিযোগ করোনা আবহের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় অমানবিকভাবে তাদের উপর লাগামছাড়া পরীক্ষার ফি চাপিয়ে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, আইন বিভাগের অনলাইন পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপের জন্য প্রতিটি বিষয়ের ক্ষেত্রে ৪০০ টাকা করে মোট আটটি বিষয়ের জন্য ৩২০০ টাকা ফি ধার্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কিছুদিন আগেই ‘বিষয় এনরোলমেন্টে’র নামে ৮০০ টাকা জমা করেছেন তারা। এরপরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যেক বিষয়ের জন্য ৪০০ টাকা করে ফি ধার্য করেছে, যেটা কেবল অমানবিক নয়, অন্যায্যও।
শিক্ষার্থীদের আরও অভিযোগ, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে এই ফি তাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। আর তাই তারা এই পরীক্ষার ফি জমা করবেননা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বয়কট করতেও পিছপা হবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রধান ডা. স্বাথী সিনহা বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই। আমি একজন শিক্ষিকা, অনলাইন ক্লাস নিয়ে থাকি। পুরো বিষয়টির দায়িত্বে রয়েছে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিভাগ। সেখানে কনট্রোলার, রেজিস্টার আছেন। সবাইকে নিয়ে একটি কমিটি আছে। তারাই পুরো বিষয়টি পরিচালনা করে থাকেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্টার ও কন্ট্রোলারকে একাধিকবার ফোন করলেও তাঁরা ফোন রিসিভ করেননি ।
সমগ্র বিষয়টি নিয়ে নিন্দা জানিয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজসেবী মীরাতুন নাহার। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থা বলে বর্তমান সময়ে আর কিছু নেই। শিক্ষাব্যবস্থা বিধ্বস্ত ও ধবংসের মুখে। কাজী নজরুল ইসলাম যাঁর নামে এই বিশ্ববিদ্যালয়, তিনি মানুষটি কেমন ছিলেন তা আমরা সকলেই জানি। বিশ্ববিদ্যালয় যে নির্দেশিকা দিয়েছে, তা ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিকতার বিরোধী। শিক্ষার্থীদের সুবিধা অসুবিধার অবস্থা যদি না দেখা হয়, তাহলে কাজী নজরুলের নামে, নাম রাখাটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুল হয়েছে। অন্য কারুর নামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রাখা হোক। শিক্ষাব্যবস্থা যখন মরতে বসেছে, তখন শিক্ষার্থীদের এভাবে হেনস্থা করার কোনও অধিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকর্তাদের নেই’।
পাশাপাশি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার বিভাগীয় প্রধান সাইফুল্লাহ সামীম বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ধরনের ফি আদায় করা সঠিক বিবেচনার কাজ নয়। বর্তমানে যা পরিস্থিতি তাতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এই ধরনের পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এক পয়সাও নিচ্ছে না। শুধু কোর্স ফি, সেমিস্টার ফি যেটা আছে সেটাই তারা দিচ্ছে। পরে সুবিধামতো দেবে। কিন্ত অনলাইনে একটা পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ের জন্য ৪০০ টাকা, এটি অযৌক্তিক। কারণ আমি মনে করি, অনলাইনে পরীক্ষার জন্য খুব সামান্যতম খরচ হয়ে থাকে। তবে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন পরীক্ষার জন্য যদি কোনও গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম কিনে থাকেন, তার জন্যও এত টাকা আদায় করা খুব অস্বাভাবিক বলেই মনে করি। আর এজন্য শিক্ষার্থীরা যদি সঠিক পথে তাদের প্রতিবাদ করেন, তাহলে আমি বলব সেটি যথাযথ পদক্ষেপ’।
সৌজন্যে: পুবের কলম