রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার সেই সমাজতান্ত্রিক আদর্শ, যা গ্রামের সকল ছাত্র ছাত্রীদের বিশেষ করে গরীব নিম্নবিত্ত শিশুদের সাক্ষরতার আলোয় আলোকিত করার স্বপ্ন দেখিয়ে ছিল, তা বাস্তবে ঠিক বিপরীত রূপ নিচ্ছে। চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের নিশ্চিন্তপুর শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে বিদ্যমান বেহাল অবস্থা সরকারের দায়িত্ববোধের অভাবকে তীব্র প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করছে।
২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে সব ধরনের পরিকাঠামো থাকলেও শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাবের কারণে প্রায় ২৫ জন পড়ুয়ার শিক্ষা কার্যক্রম জটিলতায় জর্জরিত। সরস্বতী পুজোর শুভ উপলক্ষে বিদ্যালয়ে মিলিত হলেও, অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দারা এলাকায় শিশুদের অন্ধকারময় ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। এদের মতে, বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক না থাকায় শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় ধ্বংসের পথে, যা ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকল শিশুর শিক্ষার স্বপ্নকে তাদের জীবন থেকে মুছে দেবে।
গ্রামবাসী বলেন, “কাছাকাছি তেমনি কোনও স্কুল নেই, সবথেকে নিকটতম স্কুলটি এখান থেকে প্রায় বেশ কিছু কিলোমিটার দূরের এবং বর্ষার সময় এখানে জল জমে ও বন্যার ঝুঁকিতে পড়ে তাতে ছেলে মেয়েদের অন্যত্র স্কুলে পাঠানো কার্যত অসম্ভব। কিছু কিছু আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান পরিবার নিজেদের ছেলে-মেয়েদের জন্য নিজস্ব গৃহশিক্ষণের ব্যাবস্থা করলেও, বাকি গরীব ঘরের পড়ুয়াদের জন্য অবস্থাটা বেশ হতাশাজনক। বিদ্যালয়ের রান্নার দায়িত্বে থাকা রাঁধুনি তরুলতা মল্লিকের কথায়, “স্কুলে সব ধরনের পরিকাঠামো আছে, কিন্তু শিক্ষকদের অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে,” যা ভবিষ্যতের স্বপ্ন ও স্বাভাবিক শিক্ষা প্রক্রিয়াকে প্রায় স্তব্ধ করে তুলেছে।
এই পরিস্থিতি শুধুমাত্র একটি বিদ্যালয়ের সীমাবদ্ধতা নয়, বরং রাষ্ট্রের সেই নীতির বিরোধিতা যা সাধারণ শিশুর সাক্ষরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গড়ে উঠতে চেয়েছিল। অব্যবহৃত সুযোগ, শিক্ষকদের অনুপস্থিতি ও সরকারের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে, শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে চলেছে। এদিকে, স্থানীয় জনগণ সরকারের কাছে অবিলম্বে শিক্ষক নিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে শিশুদের ভবিষ্যৎ রক্ষিত হয় এবং রাষ্ট্রের আদর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।