
গতকাল রাতে মেঘালয়ের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি মেঘালয় (ইউএসটিএম)-এর উপাচার্য ও প্রতিষ্ঠাতা মাহবুবুল হককে গুয়াহাটির ঘোড়ামারা এলাকার বাসভবন থেকে আসাম পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) এবং শ্রীভূমি পুলিশের যৌথ অভিযানে আটক করা হয়েছে। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই গ্রেপ্তারের পেছনে পাথারকান্দির সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুলে সিবিএসই উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় ঘটে যাওয়া একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা উল্লেখ করা হলেও, বিভিন্ন মহলে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে যে এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে।
শুক্রবার, পাথারকান্দির সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুলে সিবিএসই উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় ইআরডি ফাউন্ডেশনের অধীনে থাকা ২১৪ জন পরীক্ষার্থী বিশেষ সুবিধা পাওয়ার আশায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তবে, প্রতিশ্রুত সুবিধা না পেয়ে কিছু পরীক্ষার্থী উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং পরীক্ষাকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও সিআরপিএফ বাহিনী হস্তক্ষেপ করে। ইআরডি ফাউন্ডেশনের প্রধান শিক্ষক হিরামণি শইকিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানান যে, সিবিএসই-এর নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষার সময় কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই এবং সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা হয়।
উল্লেখ্য, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সঙ্গে মাহবুবুল হকের দীর্ঘদিনের ঠাণ্ডা লড়াই (মতবিরোধ) রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা পূর্বে ইউএসটিএম-এর বিরুদ্ধে জাল ডিগ্রি সার্টিফিকেট প্রদান এবং গুয়াহাটির জলাবদ্ধতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়ী করে তিনি একে বন্যা জিহাদ বলে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগগুলোকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। এছাড়া, আসামের মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য অনুমতি না পেলেও, মাহবুবুল হক মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীর নামে একটি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করেছেন। এই ঘটনাপ্রবাহ দেখে অনেকেই মনে করছেন, এই গ্রেপ্তারের পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থাকতে পারে।

ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) এই গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, “আসলে, অসমের বিজেপি সরকার ও তার মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে মেতেছেন।… মাহবুবুল হকের এই গ্রেপ্তারের আমরা তীব্র প্রতিবাদ করছি।”
বর্তমানে ইউএসটিএম চত্বরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং মূল প্রবেশদ্বার বন্ধ রাখা হয়েছে। মাহবুবুল হকের সমর্থকরা এই গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাঁর মুক্তির দাবি করেছেন। তাঁদের মতে, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল এবং শিক্ষাবিদের প্রতি অবিচার।
এই পরিস্থিতিতে, আসাম সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও প্রতিহিংসার রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের প্রতি এই ধরনের আচরণ আসামের শিক্ষাব্যবস্থা ও সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে?