
হুগলির বলাগড় থানার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দাসকে তার স্ত্রী চন্দনা দাসকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে চুঁচুড়ার দ্বিতীয় ফাস্ট ট্র্যাক আদালত। দীর্ঘ ৩০ বছরের বৈবাহিক জীবনে চন্দনার ওপর ক্রমাগত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের চূড়ান্ত রূপ দেখা যায় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি। সেদিন মদ্যপ অবস্থায় বিশ্বজিৎ স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে তাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারেন। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর চন্দনা মৃত্যুর পূর্বে স্বামীর বিরুদ্ধে একটি জবানবন্দি রেকর্ড করান, যা মামলার মূল প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। দুই দিন পর, ৯ জানুয়ারি, চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর ১১ জানুয়ারি তাদের বড় মেয়ে সরসী দাস বলাগড় থানায় বিশ্বজিতের বিরুদ্ধে হত্যার মামলা দায়ের করেন। তদন্তের দায়িত্বে থাকা সাব-ইনস্পেক্টর উজ্জ্বল ঘোষ ও পরবর্তীতে আশরাফ আলী মোল্লার নিখুঁত তদন্তে মামলায় চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। আদালতে চন্দনার মৃত্যুকালীন বক্তব্য, সাক্ষ্যপ্রমাণ ও তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে বিশ্বজিতের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রমাণ গঠিত হয়।

বিচারক মহম্মদ আলমগীরের রায়ে অভিযুক্ত বিশ্বজিৎকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে শাস্তিপ্রদান করা হয়েছে। এই রায়কে ন্যায়বিচারের স্বার্থে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও মানবাধিকার কর্মীরা। চন্দনার দীর্ঘদিনের লড়াই ও মর্মান্তিক মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যরা রায়কে “অল্প হলেও সান্ত্বনা” বলে উল্লেখ করেছেন।
হুগলি গ্রামীণ পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতায় কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে তারা আইনি প্রক্রিয়ায় সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন। এই মামলাটি দীর্ঘমেয়াদি পারিবারিক হিংসার ভয়াবহ পরিণতির একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।