‘নন্দিনী’র পর তৈরী হচ্ছেন আরও এক মহিলা পুরোহিত ‘বৈশাখী’

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

VideoCapture_20210921-130814

মহিলা পুরোহিত নন্দিনী ভৌমিককে এখন প্রায় সকলেই জানেন। পুরুষ ব্রাহ্মণদের পুজোর একচ্ছত্র অধিকারের বিরুদ্ধে তিনি যুগান্তকারী বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। দেবী যদি নারী হন, তবে তাঁর পূজোয় নারী কেন নয়?

নন্দিনী ভৌমিক ও তাঁর সঙ্গীরা

নন্দিনী ভৌমিকের জীবন সংগ্রাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরী হয় “ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি” চলচ্চিত্র। যা বহু মানুষ সাদরে গ্রহণ করেছেন।

সিনেমায় শবরী’র ভূমিকায় ঋতাভরী

সেই সেলুলয়েডের গল্পকে সত্যি করছে দক্ষিণ কলকাতার জনপ্রিয় ক্লাব ‘৬৬ পল্লী’। ‘মায়ের হাতে মায়ের আবাহন’ এই মন্ত্রে এবার ৬৬ পল্লীর পূজো করবেন নন্দিনী ভৌমিক ও তাঁর তিন সঙ্গী। তবে জানেন কি আপনারই আশেপাশে আরও কত ‘নন্দিনী’ গড়ে উঠছেন। আজ সেই সব নন্দিনীদের আঁতুড়ঘরের গল্প রইল আপনাদের জন্য।

বৈশাখী চট্টরাজ

নারী দিবসের দিন খোঁজ পড়ে মহিলা ক্যাবচালক, রিক্সাচালক, অটোচালক, বাসচালকের। খোঁজ করতে হয় মহিলা ঢাকি,মহিলা পুরোহিতের। কেন না ওই একটা দিন মহিলাদের বীরত্বের গল্প শোনাতে হবে। কিন্তু প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামে মহিলারা বীরত্বের সঙ্গেই লড়ে যাচ্ছেন,অথবা লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আজ বলব আসানসোলের বৈশাখীর কথা।

আসানসোলের সালানপুর। সালানপুরের এথোড়ার চতুষ্পাঠী টোলে পৌরহিত্যের  পাঠ নিচ্ছেন বৈশাখী চট্টরাজ। রীতিমত সংস্কৃত চতুষ্পাঠী টোলে পাঠ নিয়ে দুর্গাপুজোর পাঠ নিচ্ছেন বৈশাখী চট্টরাজ। পুজোর ফলমূল কাটা বা ঠাকুরের সাজসজ্জার দায়িত্বে থাকা বৈশাখীর স্বপ্ন পুরোহিতের আসনে বসে মা দুর্গার আবাহন করা। বৈশাখী চট্টরাজ টোল পণ্ডিত কার্তিক মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে। সালানপুরের এথোড়া গ্রামে চক্রবর্তীদের দুর্গামন্দির শুরু হয়েছে এই চতুষ্পাঠী টোল। ছোরা বোপদেব চতুষ্পাঠির টোল পণ্ডিত কার্তিক মুখোপাধ্যায়ের কাছেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তাঁর মেয়ে বৈশাখী। মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন বছর সাতেক আগে। তাঁর টোলে যেমন শিল্পাঞ্চলের পুরোহিতরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তেমনই তাঁদের পাশে বসিয়ে নিজের মেয়েকেও চণ্ডিপাঠ, দুর্গাশ্লোকের শিক্ষা দিচ্ছেন তিনি। বিয়ের পরেও সূদূর বীরভূম থেকেও সালানপুর ও ছোরা গ্রামে প্রশিক্ষণ নিতে আসছেন বৈশাখী। বৈশাখীর পাশে দাঁড়িয়েছেন শ্বশুরবাড়ির লোকজনও। তাঁদের ইচ্ছে বাড়ির দুর্গাপুজোয় পৌরহিত্য করুন গৃহবধূ বৈশাখী।

অন্যদিকে পশ্চিম বর্ধমানের একমাত্র চতুষ্পাঠীর টোল শিক্ষক কার্তিক মুখোপাধ্যায়। চাকরী জীবনে খনিকর্মী ছিলেন। অবসর নেওয়ার পর সেই শিক্ষা ছড়িয়ে দিতেই তিনি চতুষ্পাঠী টোল খুলেছেন। শুধু পুরোহিতরা নন, পেশায়  ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, বিজ্ঞানের ছাত্ররাও ছুটে আসছেন সালানপুরের এথোড়া গ্রামে।  সারা বছর নিত্যপুজো করেন যে বাংলার পুরোহিতরা তাঁরাও মনে করছেন প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছেন। বিয়ে থেকে পৈতে শ্রাদ্ধ একই সুর ছন্দে শুনতে চাইছেন না আর কেউ। তাই সময়ের দাবি মেনে তাঁরাও এখন ছুটছেন টোল-সংস্কৃতির পাঠশালায়। পেশাদার পুরোহিতরা তো আছেনই তার সঙ্গে সংস্কৃতে অনার্স পাঠরত বা প্রাক্তন মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার এমনকি প্রফেশনাল কীর্তনীয়াও এসেছেন টোলে। চাল কলা বিদ্যা ছেড়ে প্রকৃত সংস্কৃত শিক্ষায় এখন লক্ষ্য পড়ুয়াদের।

আজকের নন্দিনী ভৌমিক বা বৈশাখী চট্টরাজরা দেখাবেন নতুন আশার আলো। হয়তো খুঁজে দেবেন ভক্তিতে প্রাণ, সাহস আর অধিকারও।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর