সাইফুল্লা লস্কর : এবার চীনের বিরুদ্ধে তালেবানকে সাহায্যের অভিযোগ করল আফগানিস্তানের আশরাফ ঘানি সরকার। এই অভিযোগে চীনকে ক্ষমা চাইতে বলল কাবুল প্রশাসন। কারণ হিসাবে বলা হয়েছে আফগানিস্তানের গত ১০ ই ডিসেম্বর ১০ চীনা নাগরিকের গ্রেফতার। তারা আমেরিকার সেনা বাহিনী, আফগান সরকার এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করতে বলে অভিযোগ করেছে আফগানিস্তান। এই ১০ জনের মধ্যে ২ জনের সরাসরি যোগাযোগ ছিল তালিবান ঘনিষ্ঠ হাক্কানি নেটওয়ার্কের সঙ্গে বলেও জানানো হয়েছে।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গত ১০ ই ডিসেম্বর আফগানিস্তানের ন্যাশনাল ডাইরেকটোরেট সিকিউরিটি এর সদস্যরা লি ইয়াং ইয়াং নামক এক চীনা নাগরিককে কাবুল থেকে গ্রেপ্তার করে। সে আফগান সরকারের বিভিন্ন আধিকারিক এবং মন্ত্রীর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করত বলে অভিযোগ। একই অভিযোগে সেই দিনই কাবুল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শা হ্যাং নামক এক মহিলাকে। এই দুইজনকে জেরা করে আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্ব অংশ থেকে গ্রেফতার করা হয় আরো ৮ চীনা নাগরিক কে। এদের মধ্যে অনেকের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিস্ফোরক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নিরাপত্তা সংস্থাটি। আফগানিস্তানের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ অভিযোগ করেছেন এই ১০ চীনা নাগরিক আফগানিস্তানের চীনা সীমান্ত সংলগ্ন কুনার এবং বাদশাকান নামক দুই উত্তর-পূর্ব সীমান্ত প্রদেশে “টেরর সেল” চালাত। সালেহকে এই ঘটনাটি দেখার জন্য দায়িত্ব দেয়া দিয়েছেন আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি আশরাফ ঘানি। তিনি আফগানিস্তানের চীনা দূতাবাসের তরফ থেকে এই বিষয়ে সরাসরি ক্ষমা প্রার্থনার দাবি করেছেন।
উল্লেখ্য আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়া ফেরানোর জন্য ট্রাম্প তালেবানের সঙ্গে আফগান শান্তি চুক্তি সম্পাদন করেছেন। এই চুক্তি অনুসারে আমেরিকা ধীরে ধীরে আফগানিস্তান থেকে তাদের সমস্ত সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে। ইতিমধ্যেই আমেরিকা তাদের বহু সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তবে এখনো আমেরিকার প্রায় ৫০০০ সৈন্য আফগানিস্তানে মোতায়েন রয়েছে। তাদেরকে দ্রুত দেশে ফেরানোর চেষ্টা করছেন বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সুযোগে চীন আফগানিস্তানে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। আফগানিস্তানে চীনের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের উপস্থিতির আরও একটি কারণ হিসেবে উইঘুর সমস্যাকে দেখানো হচ্ছে। আফগানিস্তানে এমন সেল তৈরি করে উইঘুরদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পূর্ব তুর্কিস্তান গঠনের আন্দোলনকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে চীন।
তবে তালেবানের সঙ্গে চীনের যোগ সূত্র বহু পুরানো। আমেরিকা বহুদিন থেকে অভিযোগ করে আসছে চীন আমেরিকার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে তালেবানদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এর একটি কারণ তালেবানের প্রতি চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র পাকিস্তানের সমর্থন। এই দুই রাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া আফগানিস্তানে অন্তত ৭৫ শতাংশ অঞ্চলের ওপর তালিবানের একচ্ছত্র আধিপত্য কখনোই সম্ভব হতো না বলে ধারণা আমেরিকার সামরিক বিশেষজ্ঞদের। তালিবান এবং মার্কিনীদের মধ্যে সম্পাদিত আফগানিস্তান শান্তি চুক্তির পর আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার প্রস্থানের পরবর্তী সময়ে চীনের প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পাবে। বেশিরভাগ কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে আমেরিকার প্রস্থানের পর আফগানিস্থানে সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধে তালিবানরাই বিজয়ী হয়ে আবার সরকার গঠন করবে। সেই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই আগে থেকে তালেবানদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে উদ্যোগী হচ্ছে চীনা সরকার। চীন এবং তালেবানদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরীর মধ্যস্থতার দায়িত্ব পাকিস্তান নিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে আফগানিস্তানে তালেবানদের সরকার গঠিত হলে সেখানে অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যাবে পাকিস্তান। আবার চীনের জন্য এটি একই সঙ্গে শুভ এবং অশুভ বার্তা বয়ে আনবে। একদিকে আফগানিস্তান থেকে মার্কিনিদের প্রস্থান এরপর চীন আফগানিস্তানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নতি করতে পারবে এবং তাদের একটি সীমান্ত মার্কিনীদের হুমকি থেকে মুক্তি পাবে। আবার তালেবানরা সরকার গঠন করলে জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুরদের যে স্বাভাবিকভাবেই সমর্থন দেবে তা চীন ভালভাবেই বোঝে। সেক্ষেত্রে চীনা সরকার উইঘুরদের সঙ্গে কেমন আচরণ করে সেটাই এখন দেখার।