পঞ্চায়েত ভোটের বিভীষিকা

~ইয়ামিন হোসেন

গতবার ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের একটা ছোট্ট অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছি। সেসময় আমি B.Ed. লাস্ট সেমিস্টারে ছিলাম। হোস্টেল থেকে ভোট দেবার জন্য বাড়ি গেলাম। ভোটের দিন যখন ভোট দিতে যাবো ভাবছি , দোতলা থেকে নিচে নামবো , এমন অবস্থায় রুম থেকে বাইরে বেরিয়েই ছাদ থেকে দেখছি রাস্তায় পুলিশে ছয়লাপ। চাপা আতংক এলাকায়। আমাদের বুথে গোলাগুলি হয়েছে। আমারই সমবয়সী শাহীন গুলিতে মারা গেছে । ওর সদ্য বিয়ে করা বউ বিধবা হয়েছে । পরিবারটা পথে বসে গেছে। সেই খুনের যারা নায়ক তারা তখন তোলামুলে ছিলেন । এখন দল বদলে কংগ্রেসে। আর তখন যারা বিরোধী ছিল , অর্থাৎ কংগ্রেসের নেতারা , যারা ওই খুনের ন্যায় বিচারের আশা দিয়ে ভোট ভিক্ষা করেছিলো তারা এখন দল বদল করে তোলামুলে। এলাকার বেশিরভাগ ভোটার জন্মসূত্রে, ধর্মে মুসলিম। কিন্তু মুসলিম বিষয়টা তো ছেড়েই দিলাম। শুধুমাত্র মিলাদ , দুই ঈদের দিন , বিজেপি আক্রমণ করলে আর জালসার সময় মুসলিম মুসলিম ভাই ভাই – এই বোধ জেগে ওঠে আমাদের মধ্যে। বাকি সময় অর্থাৎ হারাম খাবার সময় , প্রতিবেশীর হক মারার সময়, ভোটের নামে খুন করার সময়, আক্রমণ করার সময় এরা আর কেউ মুসলিম থাকেনা। তখন আর আল্লাহর কথা স্মরণ থাকেনা। সেই সময় তারা কংগ্রেস , বিজেপি , সিপিআইএম, তোলামূল হয়ে যায়, আজব মুসলিম আমরা একটি বারের জন্যও আমরা ভাবিনা যে , একদিন তো আমাদের মরতে হবে, আল্লাহর কাছে এই কৃতকর্মের সব হিসাব ধরে ধরে দিতে হবে। লাভটা কার হলো ? ক্ষতি কার হলো ? নেতাদের তাবেদারী করে বেড়ানো পাবলিকগুলো বোকার মত নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি , মারামারি করে নিজেদের বউ বাচ্চাকে পথে বসাচ্ছে। অন্য দিকে নেতারা ফুলে ফেঁপে উঠছে। আরে, যারা সাধারণ মানুষ, একদিন কাজে না গেলে হাঁড়িতে ভাত হবেনা যাদের , তাদের ভোট নিয়ে অত নিজেদের মধ্যে কাটাকাটি করার কি আছে ! এই মুহূর্তে আপনার কিছু হয়ে গেলে সেইতো আপনার পাশের বাড়ির লোকটাই দৌড়ে ছুটে আসবে। কোনো নেতা আসবেনা। তাই সবার কাছে অনুরোধ অযথা ভোট নিয়ে নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি করবেন না। নিজের পছন্দমত ভদ্র, ভালো মানুষ থাকলে তাকে ভোট দিন । চোর, ডাকাত , খুনি , গুন্ডা – এদের সমর্থকদের ভোট দেবেন না কোনোমতেই। শাহীনের মত দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি আর কারোর না হোক। ভোট আসবে । ভোট যাবে। সাধারণ মানুষকে জীবিকার জন্য , দু মুঠো ভাতের জন্য সেইতো নিজের কাজ নিজেই করতে হবে , ভিন রাজ্যে কাজের জন্য যেতে হবে , বিদেশ বিভুঁইয়ে যেতে হবে বউ বাচ্চা, আত্মীয় স্বজন রেখো! তাহলে কেনো এই হানাহানি? আমরা কি একবারও মৃত্যুর পরের কথা ভাববো নানা? মতামত লেখকের নিজস্ব।

লেখক একটি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। লেখকের সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ করতে এখানে ক্লিক করুন

Latest articles

Related articles