
দিঘা, ১ লা মে: রাজ্য বিজেপির অন্দরকোলাহল এবার মাঠে ময়দানে। দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে সরব হয়ে উঠলেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বৃহস্পতিবার দিঘায় সকালবেলার ভ্রমণে সাংবাদিকদের সামনে দলের ভেতরের ‘অপসংস্কৃতি’র বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন তিনি। নাম না নিয়ে ইঙ্গিত ছুড়লেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দিকে। বললেন, “যারা মমতা ব্যানার্জির আঁচলের ছায়ায় বড় হয়েছে, তারা বিজেপির মর্যাদা বোঝে না। এঁদের থেকে নীতিশিক্ষা নেব না।”
বুধবার তৃণমূল সরকারের আমন্ত্রণে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারকে নিয়ে হাজির ছিলেন দিলীপ। বিজেপি নেতাদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সেখানে একমাত্র মুখ। এই উপস্থিতিকেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করলেন দলের কিছু নেতা। শুভেন্দু অধিকারী ইঙ্গিতেও টিপ্পনি কাটলেন, “কেউ ব্যক্তিগত সম্পর্ক, প্রেম-বিরহের নাটক করলে তার জবাব দেব না।” এখানেই থামেননি শুভেন্দু— গত মাসে দিলীপের বিয়েকেও টেনে এনেছিলেন সমালোচনায়।

শুভেন্দুর পালটা আক্রমণে ক্ষিপ্ত দিলীপ বৃহস্পতিবার নাম না নিয়েই জবাব দিলেন। দিঘায় সাংবাদিকদের উদ্দেশে বললেন, “যারা কালীঘাটের (তৃণমূল সদর) উচ্ছিষ্ট খেয়ে আজ বিজেপির থালায় ভাত খুঁজছে, তারাই চরিত্র পাঠ দিচ্ছে! এঁরা ‘ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট’ দিলে কী হবে? এঁদের রাজনীতির এটিই স্বভাব।” সরাসরি শুভেন্দুকে লক্ষ করেই যোগ করলেন, “২০২১-এ যারা এসেছে, তারা বিজেপির আসল চেহারা কখনও বুঝবে না।” উল্লেখ্য, শুভেন্দু ২০২০ সালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন।
আক্রমণে মোদী-বাজপেয়ীর রাজনৈতিক সংস্কৃতির উদাহরণ টানলেন দিলীপ। স্মরণ করালেন, অটলবিহারী বাজপেয়ী একসময় তৃণমূল নেত্রী মমতার মায়ের পা ছুঁয়ে প্রণাম করেছিলেন। “শত্রু বলে কাউকে তাচ্ছিল্য করিনি আমরা। আজও নরেন্দ্র মোদী পাকিস্তানে নওয়াজ শরিফের পরিবারের বিয়ে উপলক্ষে গিয়েছিলেন, সেটাই বিজেপির রীতি,” বললেন তিনি। তবে সতর্ক করে দিলেন, “শিষ্টাচার মানে দুর্বলতা নয়। বাজপেয়ী যেমন পাকিস্তানে গিয়েও কাশ্মীরে যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন, মোদী যেমন পুলওয়ামা হামলার জবাবে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছিলেন— তেমনই প্রয়োজনে প্রত্যাঘাত হানব। দলের ভেতরের ধান্দাবাজদের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াব।”
দিলীপের কথায় উসকে দিলেন দলের বর্তমান হাল নিয়ে। বললেন, “যে দল একসময় বাংলায় ১৮ আসনে জিতেছিল, আজ তারা কেন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে? জনপ্রতিনিধি কমেছে, জেতার নেশা উধাও হয়েছে। নতুন যারা এসেছে, তারা শুধু করে খাওয়ার রাজনীতি বুঝেছে। এঁদের ‘অপসংস্কৃতি’ দলকে পিছিয়ে দিচ্ছে।” তবে কর্মীদের উদ্দেশে আশার বাণী শোনালেন, “হতাশ হবেন না। যতদিন বিশ্বাস থাকবে, বিজেপি অমর। আমার রগে রগে এই দলের রক্ত।”

দিলীপের এই বিস্ফোরণকে রাজ্যের বিজেপির ‘অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ’ বলেই সোশ্যাল মিডিয়াতে জল ঘোলা চলছে। শুভেন্দু অধিকারী ও দিলীপ ঘোষ— দুই প্রবল প্রতাপশালী নেতার টানাপোড়েন দলের একাংশকে ভাঙনের দিকেও ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা রাজনৈতীক বিশ্লেষকদের। আপাতত, দিলীপের চ্যালেঞ্জ স্পষ্ট— “যারা বিজেপিকে ‘বোঝে না’, তাদের ঠেকাতেই হবে। নইলে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যাবে দল।”