বিদ্যুৎবিল সংক্রান্ত সিইএসসি লিমিটেড এর ব্যাখ্যায় বিভ্রান্তি,প্রশ্ন তুলল ইয়ং বেঙ্গল

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG-20200724-WA0030

এনবিটিভি নিউজ ডেস্ক, ২৪ জুলাই: ইয়ং বেঙ্গলের পক্ষে প্রসেনজিৎ বসু ও দেবর্ষি চক্রবর্তী যে কথা ও প্রশ্নগুলি তুলে ধরলেন,

আবারও সিইএসসি-র অপদার্থতা ও অস্বচ্ছ মাশুল ব্যবস্থার শিকার হচ্ছেন কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ৩৩ লক্ষ বিদ্যুৎ গ্রাহক। ২০২০-র মে-জুন মাসের অত্যাধিক বিদ্যুৎ বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ফলে সিইএসসি বাধ্য হয়েছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এই মর্মে বিজ্ঞাপন দিতে যে তারা গ্রাহকদের থেকে বাড়তি মাশুল আদায় করছে না। সিইএসসি তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে লকডাউন পরবর্তী সময়ে কীভাবে বিদ্যুৎ বিলে তারা ছাড় দিয়েছে সে বিষয়ে কিছু ব্যাখ্যাও দিয়েছে। যদিও এই সমস্ত ব্যাখ্যা আরো নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

১। সিইএসসি কেন ২০২০-র এপ্রিল ও মে মাসে লকডাউন চলাকালীন আনুমানিক বিদ্যুৎ বিল তৈরী করতে বিগত ৬ মাসের ব্যবহৃত বিদ্যুতের গড় নিয়েছে? কেন তারা গত বছরের এই সময়ের অর্থাৎ ২০১৯ সালের এপ্রিল ও মে মাসের বিদ্যুৎ খরচের হিসেব থেকে এই বছরের আনুমানিক বিল তৈরী করেনি? সাপ্লাই কোড রেগুলেশন এই দুই ধরনের ব্যবস্থার কথা বললেও সিইএসসি কেন গত ৬ মাসের গড়ের হিসেবকেই ভিত্তি করল? এটা কি আদতে নিয়ামক সংস্থা ডব্লিউবিইআরসি-র আদেশ অনুসারেই হয়েছে?

২। সিইএসসি কেন ২০২০-র এপ্রিল ও মে মাসে প্রকৃত কত ইউনিট বিদ্যুৎ গ্রাহকরা খরচ করেছেন তার মাস-ভিত্তিক হিসেব দিতে পারছে না? সিইএসসি যদি আগে থেকেই জানত যে তাদের ইলেকট্রিক মিটারের এই প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নেই যাতে করে তারা লকডাউনের পর রিডিং নিয়ে মাস ভিত্তিক প্রকৃত হিসাব দিতে পারে, তাহলে তারা কেন গত ৬ মাসের গড় খরচের হিসেবকে ভিত্তি করল? ২০১৯-এর এপ্রিল এবং মে মাসের প্রকৃত বিদ্যুৎ খরচের হিসেবকে ভিত্তি করা হল না কেন?

৩। এবছরের মে-জুন মাসের সিইএসসি-র বিলে বর্তমান রিডিং এর পাশাপাশি পূর্ববর্তী মিটার রিডিং-এর উল্লেখ নেই কেন?

৪। কোন গণনার ভিত্তিতে সিইএসসি ২০২০-র মে-জুনের ইলেকট্রিক বিল থেকে এনার্জি চার্জ ও সরকারি কর বাদ দিয়েছে? এই হিসেবের কোন ব্যাখ্যা বিলে দেওয়া হচ্ছেনা কেন? এই হিসেব স্বচ্ছভাবে প্রকাশ না করলে গ্রাহকরা কিভাবে নিশ্চিত হবেন যে স্ল্যাব বেনেফিট সঠিকভাবে দেওয়া হয়েছে?

সিইএসসি-র মে-জুন ২০২০-র ইলেকট্রিক বিলের হিসেবের এই ইচ্ছাকৃত অস্বচ্ছতার নিরিখে ডব্লিউবিইআরসি এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করা উচিৎ। এই বিভ্রান্তিকর বিল বাতিল করে পুনরায় স্বচ্ছ ও সঠিক বিল প্রস্তুত করার জন্য সিইএসসি-কে বাধ্য করতে হবে।

আরও কিছু বিষয় নিয়ে ভাবা উচিৎঃ বর্তমানে এলটি গ্রাহকদের জন্য এনার্জি চার্জের যে স্ল্যাব ভিত্তিক হার সেটি নির্ধারিত করা হয় প্রথম ২৫ ইউনিট, পরবর্তী ৩৫ ইউনিট, তার পরের ৪০ ইউনিট, তারপরের ৫০ ইউনিট, এইভাবে। এই স্ল্যাবগুলি বহুদিন আগেই গুরুত্বহীন হয়ে গিয়েছে কারণ গরীব গ্রাহকরাও এখন অনেক বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন।

দিল্লিতে যেমন প্রথম ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ আজ বিনামূল্যে দেওয়া হয় এবং পরের ২০০ ইউনিটে ৫০% হারে ভর্তুকি আছে। দিল্লী সরকার বিদ্যুৎ ভর্তুকি খাতে ২৮০০ কোটি টাকা ২০২০-২১ সালে খরচ করছে যাতে সেখানে গ্রাহকরা স্বল্পমূল্যে বিদ্যুৎ পায়। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেবল ২০০ কোটি টাকা খরচ করছে ‘হাসির আলো’ প্রকল্পে মাসে মাত্র ২৫ ইউনিট পর্যন্ত ভর্তুকি দিতে।

সিইএসসি এবং ডব্লিউবিএসইডিসিএল-এর বর্তমান ইউনিট স্ল্যাবের অবিলম্বে পরিবর্তন করে প্রথম স্ল্যাব ন্যূনতম ২০০ ইউনিটের করা উচিৎ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচিৎ প্রথম স্ল্যাবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে না দিতে পারলে অন্তত আংশিকভাবে ভর্তুকিযুক্ত বিদ্যুৎ গ্রাহকদের দেওয়া।

২০১৫ সালে সিইএসসি-র মাশুল বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিদ্যুৎ মাশুল বৃদ্ধি বিরোধী গণআন্দোলন ‘পিওপলস মুভমেন্ট এগেইন্সট পাওয়ার তারিফ হাইজ ইন বেঙ্গল’ যে মৌলিক প্রশ্নটি সামনে এনেছিল, তার আজও প্রাসঙ্গিকতা আছে। বিদ্যুৎ বন্টনে সিইএসসি কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং হুগলীর প্রায় ৫৬৭ বর্গ কিমি এলাকায় যে একচেটিয়া ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তা ভাঙা না গেলে এবং বিদ্যুৎ বণ্টনে প্রতিযোগিতা না আনলে গ্রাহকরা বারবার নিম্নমানের পরিষেবা ও চড়া মাশুল গুনতে বাধ্য হবে। আমফান ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ের বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং এখন ইলেকট্রিক বিলকে ঘিরে বিভ্রান্তি-হয়রানি, এই সত্যটাকেই সামনে নিয়ে আসছে।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর