Monday, June 9, 2025
35 C
Kolkata

অনাহারে অধ্যাপকের পরিবার, বেঁচে থাকার তাগিদে খুদ গুঁড়োর ফ্যানই সম্বল, বিষ খেয়ে আত্মঘাতীর চেষ্টা

শান্তিপুর শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ডাবরে পাড়া এলাকার অধ্যাপক পরিবারে অভাব  প্রবেশ করেছে বহু বছর আগে।

প্রয়াত অধ্যাপক পরমানন্দ মুখার্জির দুই মেয়ের মৃত্যুর পরে, বর্তমান রয়েছেন তিন অবিবাহিত ভাই বোন। দিদি নমিতা মুখার্জির বয়স ৭২ বছর মাধ্যমিক পাস, এক ভাই দেবাশীষ মুখার্জির বয়স ৭০ তিনি বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক। ছোট ভাই বিশ্বজিৎ মুখার্জির বয়স ৬৫ বছর, পাস করেছিলেন বিকম। । সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অধ্যাপকের মৃত্যুর পর তার ছেলে মেয়েরা উচ্চশিক্ষিত হলেও পায়নি কোনো চাকরি বা কাজের সুযোগ, মেলেনি পেনশনও।

ছোট ভাই বিশ্বজিৎ মুখার্জির কথায়, ব্যাক ডোর দিয়ে চাকরি হওয়ার কারণে যোগ্যতার প্রমাণ দেখানোর সুযোগ মেলেনি।

বড় ভাই দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় অবশ্য এক ডাক্তারের কেমিস্ট কাজ করে সামান্য অর্থ দিয়ে ভাই-বোনদের দুবেলা দুমুঠো খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারতেন সে সময়। তবে বর্তমানে বয়সজনিত কারণে এবং শারিরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে ছোট ভাই ছাড়া নড়াচড়া করতে পারেন না কেউই। দিদি এবং তার বার্ধক্য ভাতার দু হাজার টাকা  গ্যাস এবং ইলেকট্রিকের বিল দিতেই লেগে যায়, তাই ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে খুদের চাল গূঁড়ো করে, ঘন ফ্যান নুন দিয়ে খান এক বেলা। দিনের পর দিন আধ পেটা খেয়ে থাকলেও, এত বড় পৃথিবীর খোঁজ নেন না কেউই। তবে প্রতিবেশী প্রতাপচন্দ্র প্রামাণিক সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেন বলেই স্বীকারোক্তি ওই পরিবারের। দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সম্প্রতি তিন ভাই বোন একসাথে বিষ খেলেও , কপালে দুর্ভাগ্য পোহানোর কারণেই হয়তো মৃত্যু হয়নি কারোরই। বর্তমানে তারা কোনো এক সহৃদয় ব্যক্তির প্রতীক্ষায় রয়েছেন, শেষসম্বল বাড়িটুকু নিয়ে তাদের বাকি জীবনটুকু তিনটি পেট একবেলা কোনোমতে দুটো খেতে দিয়ে বাঁচিয়ে রাখেন সেই আশায়। তবে লকডাউনের মধ্যে সহযোগীতা করতে আসা দুটি এনজিও দু প্যাকেট বিস্কুট দিয়ে চারটি ছবি তুলে পাবলিসিটি বাড়িয়ে আর আসেননি কখনো।

দিদি নমিতা মুখার্জি বলেন, শুনেছিলাম করোনা থেকে দেশ ও রাজ্য বাসীকে বাঁচানোর জন্য তিনবার বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, তবে আমাদের তিনজনের জন্য ভাবেনি কোনো সরকারই। স্বাস্থ্য সাথীর কার্ড থাকলেও কিছুটা দুশ্চিন্তা মুক্ত হতাম চিকিৎসার ক্ষেত্রে, তাও জুটলো না কপালে।

এ প্রসঙ্গে প্রতিবেশী মিতা প্রামাণিক বলেন একসময় সম্ভ্রান্ত এবং শিক্ষিতহাফ পরিবারের এই দুর্দশা দেখে খুব কষ্ট লাগে, নিজেদের সামান্য রোজগার থেকে কিছুটা সহযোগিতার চেষ্টা করি।ইহফ

স্থানীয় কাউন্সিলর দীপঙ্কর সাহা বলেন, অতীতে দুটো বার্ধক্য ভাতা করে দেওয়া হয়েছে, অপর একজনের কাগজপত্র জমা রাখা রয়েছে, শীঘ্রই তা চালু হবে। বা স্বাস্থ্য সাথী না যাওয়ার কারণে পাননি হয়তো, বাড়ি বাড়ি চালু হলে নিশ্চয়ই করে দেওয়া হবে। তবে গত কয়েকদিন আগে অনাহারে থাকা তিন সদস্য একই সাথে ইদুর মারার বিষ খেয়ে প্রাণ ত্যাগ করার চেষ্টা করেন কিন্তু তারপরেও স্বাভাবিকভাবে সুস্থ ছিলেন তারা।

Hot this week

গাজার রাফাহ সহায়তা কেন্দ্রেই মৃত্যু: ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৭ জন ফিলিস্তিনি

ফের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় রাফাহ শহরের একটি...

মাদ্রাসা রক্ষায় আজমগড়ে সম্মেলন, আদালতের পথে জামিয়ত উলামা-ই-হিন্দ

উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে আয়োজিত হয় একটি মাদ্রাসা রক্ষা সম্মেলন...

ঈদের আগে উত্তেজনা: গাজিয়াবাদে মুসলিম মাংস বিক্রেতাকে গুলি করার হুমকি বিজেপি বিধায়ক নন্দ কিশোর গুর্জর

উত্তরপ্রদেশর গাজিয়াবাদে বিজেপি বিধায়ক নন্দ কিশোর গুর্জর সম্প্রতি একটি...

টাকার পরিমান দেখে চোখ ধাঁধিয়ে গেল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার, গ্রেপ্তার ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিস অফিসার

চোখ ধাঁধানো গুপ্তধনের সন্ধান। ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিস অফিসার অমিত...

Topics

গাজার রাফাহ সহায়তা কেন্দ্রেই মৃত্যু: ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৭ জন ফিলিস্তিনি

ফের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় রাফাহ শহরের একটি...

মাদ্রাসা রক্ষায় আজমগড়ে সম্মেলন, আদালতের পথে জামিয়ত উলামা-ই-হিন্দ

উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে আয়োজিত হয় একটি মাদ্রাসা রক্ষা সম্মেলন...

গাজায় ফের ইসরায়েলি হামলা!ধ্বংস করা হল ২৪০টির বেশি ঘর, নিহত হাজার হাজার নিরীহ মানুষ

গত অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ হামলা চালিয়ে আসছে।...

Related Articles

Popular Categories