হার মানলেন ফেলুদা, শেষ ‘শেষ অধ্যায়’

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG-20201115-WA0005

এনবিটিভি,শুভদীপ রায়: প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। করোনা আক্রান্ত হয়ে ৬ই অক্টোবর কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস সহ ছিল একাধিক কোমর্বিডিটি। সংক্রমণ ছড়িয়েছিল মূত্রনালীতেও। ক্রমশ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ভেন্টিলেশনে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন চিকিৎসকেরা। অবশেষে হার মানলেন ফেলুদা। শোকস্তব্ধ গোটা ইন্ডাস্ট্রি থেকে সিনেমাপ্রেমীরা।

কিংবদন্তি ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। শুধু অভিনয় নয়, বাচিকশিল্পী হিসেবেও মন জয় করেছিলেন সকলের। ছিলেন কবি এবং অনুবাদকও। অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের মোট ৩৪টির মধ্যে ১৪ টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন সৌমিত্র। প্রতিটি ছবিই আজও বাঙালি তথা গোটা বিশ্ব লালিত করে।
১৯৩৫ এর ১৯শে জানুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। পিতামহের আমল থেকে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে থাকতে শুরু করেন। সৌমিত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন কৃষ্ণনগরের সেন্ট জনস বিদ্যালয়ে। তার পর পিতার চাকরি বদলের কারণে বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেন হাওড়া জেলা স্কুল থেকে। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটি কলেজ, আমহার্স্ট স্ট্রিট, কলকাতায় সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন।
স্বনামধন্য পরিচালক সত্যজিতের হাত ধরে চলচ্চিত্র জগতে তাঁর প্রবেশ। জানা যায়, অপরাজিত ছবির অডিশনে সৌমিত্রকে নিতে রাজি হননি পরিচালক সত্যজিত রায় কারণ অপুর চরিত্রের বয়সের হিসেবে সৌমিত্র সেই সময় কিছুটা লম্বা ছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর চেহারা স্মরণে রেখে দিয়েছিলেন। এরপর যখন অপুর সংসার সিনেমা শুরু করেন তিনি তখন সৌমিত্রকে ডেকে নেন মূল চরিত্রে অভিনয়ের জন্যে। তারপর সত্যজিত রায়ের প্রায় বেশীর ভাগ ছবিতে সৌমিত্র মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন। এর মধ্যে হীরক রাজার দেশে, ঘরে বাইরে, চারুলতা, অরণ্যের দিনরাত্রি, অশনি সঙ্কেত ইত্যাদি ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে।সত্যজিত রায় যখন নিজের কাহিনি সোনার কেল্লা থেকে জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদাকে সিনেমায় দেখানর কথা ভাবেন তখন সৌমিত্রকেই তিনি মূল চরিত্র ফেলুদার ভূমিকায় নির্বাচন করেন। সত্যজিত রায় ছাড়াও বাংলা ছবির প্রায় সমস্ত মননশীল পরিচালক সেই সময় থেকে এই সময় যথা মৃণাল সেন, তপন সিনহা, তরুণ মজুমদার, গৌতম ঘোষ, ঋতুপর্ণ ঘোষ, অপর্ণা সেন, কৌশিক গাঙ্গুলী, অতনু ঘোষ, সৃজিত মুখার্জী ও শিবপ্রসাদ নন্দিতার ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। বাংলা ছাড়াও বিভিন্ন ভাষার এবং বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ছবিতে অভিনয় করে অভিনয় জগতে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠা করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
১৯৫৯ এর অপুর সংসার থেকে ২০২০ তে শ্রাবণের ধারা, তিনশোর বেশি ছবিতে শর্মিলা ঠাকুর, সুচিত্রা সেন, অপর্ণা সেন, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়, লিলি চক্রবর্তী, স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, মমতাশংকর থেকে গার্গী রায়চৌধুরির মতো প্রচুর নায়িকার নায়ক তিনি।
৮৫ বছর বয়সেও মঞ্চ আর ছায়াছবি দুই ক্ষেত্রেই সমান সক্রিয় ছিলেন। নিজেকে থিয়েটারের মানুষই বলতেন। তাঁর দরাজ কণ্ঠের আবৃত্তি শ্রোতাকে মুগ্ধ করে। নাটকের জন্য ১৯৯৮ সালে পান সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার। দু’ বার চলচ্চিত্রে জাতীয় পুরস্কার পান, ২০০১ ও ২০০৮ সালে। ২০১২ সালে ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত করা হয় তাঁকে। কবিতার বইও লিখেছেন ১৪টি। শিল্পক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্যে ফ্রান্স সরকার তাঁকে দিয়েছে সে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরষ্কার।
বর্ষীয়ান তথা কিংবদন্তি এই শিল্পীর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ইন্ডাস্ট্রি থেকে সিনেমাপ্রেমীরা। শোক জ্ঞাপন করেছেন সকলে। ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁর অবদান আজীবন স্মরণীয়। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গেই চলচ্চিত্রে এক অবসান বলে মনে শিল্প বিশেষজ্ঞরা।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রয়াত অভিনেতা শিল্পী সত্যজিৎ রায়

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর