ভারতের আইনসভায় কমছে মুসলমানদের সংখ্যা আর বাড়ছে কারাগারে, বললেন ক্রিস্টোফ জাফরলোট

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG-20200819-WA0084

এনবিটিভি ডেস্ক: ভারতে মুসলিমদের অবস্থান নিয়ে সাউথ এশিয়ার মূলত ভারত এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ফরাসি রাজনীতি বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার জাফরলোট সম্প্রতি একটি আলোচনা সভায় বক্তৃতা দেন। সেই বক্তৃতার উপর নির্ভর করে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্র সিয়াসত ডট কম একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। ওই প্রতিবেদনের সাম্প্রতিকতম প্রকাশের তথ্য অনুযায়ী জাফরলোট বলেছেন ভারতে আইন সভায় মুসলমানদের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে এবং সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ভারতের কারাগারে।

ওই প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী জাফরলোট জানিয়েছেন,১৯৮০ দশক থেকে লোকসভায় মুসলিম প্রতিনিধিত্ব ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। তথ্য থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেছিলেন, “১৯৮০ সালে যখন মুসলমানরা সমাজের ১১% ছিল, ৪৯ জন সংসদীয় সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন যা লোকসভার মোট আসনের ৯% ছিল। ২০১৪ সালে এই পরিসংখ্যান সর্বনিম্ন হয়েছে যখন, বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন জেতে এবং সরকার গঠন করে। ২১ জন মুসলিম সংসদীয় সদস্য অর্থাৎ মোট লোকসভার ৪% এর নিচে নির্বাচিত হয়েছিলেন, কারণ, বিজেপির একজন সদস্যও মুসলিম নন। তবে, ২০১৯ সালে, মুসলিম সাংসদরা ২৫ টি আসন যেতে এবং আসন সংখ্যা ২১ থেকে ২৫-এ, প্রান্তিকহারে বৃদ্ধি পায় যদিও পরিসংখ্যান মোট লোকসভা আসনের ৫% এর নীচে থেকে যায়।

জাফরলোট আরো বলেছেন, লোকসভা স্তরে যা সত্য তা রাজ্য সমাবেশগুলির ক্ষেত্রেও সমান সত্য।
গুজরাটে ৯.১% মুসলিম জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র ১.৬% মুসলিম বিধায়ক রয়েছেন। ১৯৮০-র দশকের গোড়ার দিকে যার পরিমাণ ছিল শতকরা হারে ৬%। কর্ণাটকের ১২.২% মুসলিম জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র ৩.১% মুসলিম বিধায়ক; ১৯৭০ এর দশকের শেষদিকে যার পরিমাণ ছিল শতকরা হারে ৭% এর বেশি।
মধ্যপ্রদেশে, ৬.৪% মুসলিম জনসংখ্যার মধ্যে বিধানসভায় মাত্র ০.৪% মুসলমান রয়েছেন। ক্রিস্টোফ জাফরলোট বলেছেন, বাস্তবে মাত্র একজন বিধায়কই মুসলিম। ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে যার পরিমাণ ছিল শতকরা হারে ২.৭%।

ফরাসি রাজনৈতিক বিজ্ঞানী আরো বলেন, মহারাষ্ট্রে যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা ১০% এর বেশি, সেখানে বিধায়কদের মধ্যে মাত্র ৩.১% মুসলমান। ১৯৮০-র দশকের মাঝামাঝি সময়ে এই পরিসংখ্যান ছিল শতকরা হারে ৯%। তিনি আরো বলেন, উড়িষ্যার জনসংখ্যার মাত্র ২% মুসলিম এবং এই সম্প্রদায়ের বিধায়করা মাত্র ০.৭%। ১৯৮০-র দশকের মাঝামাঝি এই পরিসংখ্যান ছিল ২.৭%। রাজস্থানে কেবল ১% বিধায়ক মুসলিম, যেখানে ১৯৮০-র দশকের গোড়ার দিকে এর পরিসংখ্যান ছিল শতকরা হারে ৫%।

এ প্রসঙ্গে উত্তরপ্রদেশের পরিসংখ্যানকে উল্লেখযোগ্য বলে মন্তব্য করে জাফরলোট বলেন, উত্তরপ্রদেশের পরিসংখ্যান সবচেয়ে আকর্ষণীয়। ২০১৭ সালের আগে অর্থাৎ বিজেপির জয় লাভের আগে পর্যন্ত ১৮.৫% মুসলিম জনসংখ্যার মধ্যে, ১৬.৯% বিধায়ক মুসলমান ছিলেন। ২০১৭ সালে মুসলিম বিধায়কদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে মাত্র ৫.৭%।

এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কথা উল্লেখ করে জাফরলোট বলেছেন, এ ব্যাপারে একমাত্র ব্যাতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ। ২৫.২% মুসলিম জনসংখ্যার মধ্যে, মুসলিম বিধায়কদের সংখ্যা ২০%। ১৯৮৫ সালে যা ছিল মাত্র ২.৯%। রাজ্য বিধানসভা গুলিতে মুসলিম বিধায়কদের উপস্থিতির এহেন পরিসংখ্যান উল্লেখ করে ওই ফরাসি রাজনৈতিক বিজ্ঞানী বলেছেন, উপরের তথ্য প্রমাণ করে যে বিজেপির উত্থানের সবচেয়ে স্পষ্ট প্রভাব হচ্ছে লোকসভা এবং রাজ্য সমাবেশগুলিতে মুসলিম প্রতিনিধিত্ব হ্রাস।

২০১৯ সালে সিএসডিএস-এর রিপোর্টে প্রকাশিত একটি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিজেপির শাসনভারে আসার অপর একটি প্রভাব হিসেবে জাফরলোট বলেছেন, মুসলিমরা ভারতে পুলিশকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে দেখে।

অন্য যেকোনো কোনও দলের চেয়ে মুসলিমরা পুলিশকে বেশি ভয় পায়; দলিতরা তার পরের স্থানে।মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে “পুলিশ প্রায়ই মুসলমানদের জোর করে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে জড়িত করে। এমন কিছু মামলা রয়েছে যেখানে বছরের পর বছর ধরে কারাগারে বন্দি হয়ে রয়েছেন যুবকরা। জাফরলোট ২০১৫ সালে প্রকাশিত এনসিআরবি’র সর্বশেষ প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে কারাগারে বন্দিদের মধ্যে ২১% মুসলমান যেখানে মোট জনসংখ্যায় তাদের অংশীদারিত্বের পরিমাণ ১৪.৫% বেশি।

তিনি এই বিষয়টিকে আমেরিকার কারাগারে বন্দি কৃষ্ণাঙ্গদের সাথে তুলনা করে বলেছেন,”এই অতিরিক্ত প্রতিনিধিত্ব আমেরিকান কারাগারে থাকা কৃষ্ণাঙ্গদের অতিরিক্ত উপস্থাপনের কিছুটা আনুপাতিক।”

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর