নিউজ ডেস্ক : দক্ষিণ কাশ্মীরের সোপিয়ান জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম পার্গোচির রাস্তা ভারী বরফপাতে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ। তার মধ্যেই বিষন্ন শোকাতুর অবস্থায় দেখা গেল এক দল কাশ্মিরী মুসলিমদের। তাদের সবাই ভিড় করেছেন এক কাশ্মীরি পণ্ডিত ভাস্কর নাথের বাড়িতে, যিনি গত শনিবার শ্রীনগরের এস কে আই এম এস হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন।
শোকাতুর মুসলিমদের একদল ব্যস্ত আছেন মৃতের জন্য শ্মশান ঘাটের ওপর জমে থাকা বরফ সরাতে, অন্যদল বরফ সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করার কাজে। আরো কিছু মুসলিমকে দেখা গেল চিতা সাজানোর জন্য কাঠের বন্দোবস্ত করতে। তাদের সবার লক্ষ্য তাদের গ্রামের এই প্রবীণ ব্যক্তির মৃতদেহের সৎকার করা।
কাশ্মীরি পণ্ডিতদের জন্য লোক দেখানো দরদ প্রদর্শন করা বিজেপি সরকারের দ্বারা নিয়োজিত এবং নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের সরকার এবং পুলিশ মৃতের সৎকারের জন্য কোনো রকম সহযোগিতা দূরের কথা,উল্টে অসহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকারি হাসপাতাল থেকে পাঠানো মৃতদেহবাহী গাড়িটিও ভাস্কর নাথের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছায়নি। পাশের গ্রাম ওয়াটারপোরাতে ছেড়ে চলে যায়। সেখান থেকে বরফ জামা রাস্তার ওপর থেকে খাটে করে মৃতদেহটি নিয়ে আসে ওই গ্রামের একদল মুসলিম যুবক।
মৃতদেহ সৎকারের জন্য রাস্তা পরিষ্কার হওয়া অত্যন্ত জরুরী। সরকারি অফিসারদের বারবার ফোন করে রাস্তা থেকে বরফ সরানোর অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও কোনো সাড়া মেলেনি। শেষ পর্যন্ত গ্রামবাসীরা হাত লাগিয়েছেন রাস্তা পরিষ্কার করতে। এক স্থানীয় আদিল হোসেন জানিয়েছেন, আমরা নিজেদের উদ্যোগে একটি খাটে করে মৃতদেহটি এক কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করে ওই ব্যক্তির বাড়িতে নিয়ে এসেছি। শেষ পর্যন্ত তাদের উদ্যোগেই সম্পন্ন হয় মৃতদেহের সৎকার।
গত শুক্রবার প্রবল শারীরিক অসুস্থতার কারণে ধুঁকতে থাকা ভাস্কর নাথকে এক মুসলিমই তার স্ত্রীসহ শ্রীনগরে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে। গ্রামটিতে ছয়-সাতটি কাশ্মীরি পন্ডিত পরিবার শান্তিপূর্ণ এবং সংহতিপূর্ণ পরিবেশে বাস করছে কাশ্মীরে-মুসলিমদের অপার ভালোবাসার মাঝে। এই গ্রামে সাম্প্রদায়িকতার রাষ্ট্রদূতগুলোর দ্বিচারিতা কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি।