ছুটি থাকবে সপ্তাহে ২দিন,এসএসসি পরীক্ষা হবে ৫ বিষয়ে

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

15-43-16-Education-System-Shikkha-Poribesh

নিজস্ব প্রতিবেদক: শিক্ষায় যে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে-তা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন। নতুন এই শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, নতুন পদ্ধতি চালু হওয়ার পর স্কুলে কোন সাময়িক পরীক্ষা বা অর্ধবাষির্কী পরীক্ষা থাকবে না। এর পরিবর্তে ধারাবাহিক মূল্যায়ন বা শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন করা হবে। তবে থাকবে বার্ষিক পরীক্ষার ব্যবস্থা।

এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণচন্দ্র সাহা জানিয়েছেন, ‘পরিমার্জিত শিক্ষাপদ্ধতিতে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০টি অভিন্ন বই পড়বে, তবে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে শুধুমাত্র ১০ম শ্রেণিতে গিয়ে। এই পরীক্ষার নাম এসএসসি পরীক্ষাই থাকছে এবং এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১০ম শ্রেণির সিলেবাস অনুযায়ি।’

বর্তমানে নবম ও দশম- এই দুই শ্রেণির সিলেবাসের আলোকে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু পরিমার্জিত শিক্ষাপদ্ধতি অনুযায়ি শুধুমাত্র দশম শ্রেণির সিলেবাসের আলোকে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে দশম শ্রেণিতে ১০টি বই পড়ানো হলেও এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে পাঁচ বিষয়ে। যে পাঁচটি বিষয়ে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সেগুলো হলো: বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান। এছাড়া শ্রেণিকক্ষে আরও পাঁচটি বই পড়ানো হবে। সেগুলো হলো-জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ভালো থাকা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। তবে এই পাঁচটি বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে স্কুলেই এবং মূল্যায়নও হবে স্কুলে। অর্থ্যাৎ খাতা মূল্যায়ন করবেন স্ব স্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তবে এই পাঁচটি বিষয়ের নম্বর এসএসসিতে যোগ হবে কিনা-এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

নতুন পদ্ধতি কার্যকর হলে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যেই এসএসসি পরীক্ষা শেষ হবে। যদিও বর্তমানে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শেষ করতে কমপক্ষে ৩২ কার্যদিবস প্রয়োজন হয়।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, ‘পরিমার্জিত শিক্ষা পদ্ধতিতে দশম শ্রেণিতে আলাদা কোনো বিভাগ রাখা হবে না। বিভাগ নির্ধারণ হবে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে। আর একাদশ শ্রেণি শেষে একটি পাবলিক পরীক্ষা এবং দ্বাদশ শ্রেণি শেষে আরেকটি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।’

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিকের মতো উচ্চ মাধ্যমিকেও ধারাবাহিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকবে। তবে এক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও ৭০ শতাংশ পাবলিক পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়া একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি শেষে যে দুটি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, সেই দুটি পাবলিক পরীক্ষার ফলের গড়ের উপরই নির্ধারণ হবে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জানিয়েছেন, ‘নতুন এই পদ্ধতিতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শতভাগ ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। এসব শ্রেণিতে কোনো বার্ষিক পরীক্ষা হবে না। প্রাক প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২০২২ এবং ২০২৩ সাল থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে নতুন এই মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু হবে।’

প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, ‘নতুন এই পদ্ধতিতে চতুর্থ শ্রেণির প্রথম পরীক্ষা হবে ২০২৪ সালে এবং পঞ্চম শ্রেণিতে প্রথম পরীক্ষা হবে ২০২৫ সালে। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৭০ শতাংশ নম্বরের ধারাবাহিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা থাকছে এবং ৩০ শতাংশ নম্বরের বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।’

তিনি আরও জানান, ‘পরিমার্জিত এই শিক্ষা পদ্ধতিতে প্রাক-প্রাথমিক হবে দুই বছরের। পাঁচ বছর বয়সী শিশুরা প্রাক-প্রাথমিকে ভর্তি হবে এবং সেখানে দুই বছর পড়াশোনা করার পর বয়স যখন ৭ বছর হবে, তখন ওই শিক্ষার্থী ভর্তি হবে প্রথম শ্রেণিতে।’

আর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ৬০ শতাংশ ধারাবাহিক মূল্যায়ন এবং ৪০ শতাংশ বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ২০২২ এবং ৮ম শ্রেণিতে ২০২৩ সালে নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

তবে এই রূপরেখায় পঞ্চম শ্রেণি শেষে প্রাথমিক সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা ও অষ্টম শ্রেণি শেষে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার কথা উল্লেখ নেই। তবে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে কিনা-তা নির্ভর করবে সরকারের নির্বাহী আদেশের উপর। তাই পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল হচ্ছে তা এখনোই বলা যাচ্ছে না।

এনসিটিবি বলছে, সরকার যদি নির্বাহী আদেশে পিইসি পরীক্ষা নিতে চায়, তাহলে ৭০ শতাংশ ধারাবাহিক মূল্যায়ন এবং ৩০ শতাংশ পাবলিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিতে হবে।

এছাড়া বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি একদিন থাকলেও নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি থাকবে সপ্তাহে দুইদিন। তবে, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, জাতীয় শোক দিবস এবং বিজয় দিবসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হবে এবংএই দিনগুলোয় সব শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে যেতে হবে কিন্তু ওই দিন কোন ক্লাস হবে না। বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচি থাকবে সেগুলোও ধারাবাহিক মূল্যায়নে যুক্ত হবে।

নতুন কারিকুলামে শ্রেণি কক্ষের বই সংখ্যা কমছে। এনসিটিবি জানিয়েছে, প্রাথমিকের জন্য মোট আটটি বিষয় নির্বাচন করা হয়েছে সেগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ধর্মশিক্ষা, ভালো থাকা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। এর মধ্যে “ভালো থাকা” এবং “শিল্প ও সংস্কৃতি’ বিষয়ে আলাদা বই থাকবে না। এগুলো শিক্ষকেরা শেখাবেন, আর এ জন্য শিক্ষকদের আলাদা বই দেওয়া হবে।

আর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বই পড়ানো হবে। বইগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, জীবন ও জীবিকা, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ধর্মশিক্ষা, ভালো থাকা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি।

পরিমার্জিত এই শিক্ষাদ্ধতি ২০২২ সাল থেকে শুরু হবে প্রাক- প্রাথমিক, প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে এবং ওই একই বছর মাধ্যমিক পর্যায়ে শুরু হবে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে। আর ২০২৩ সালে শুরু হবে অষ্টম শ্রেণিতে এবং ২০২৪ সালে নবম শ্রেণিতে।

নতুন এই শিক্ষাপদ্ধতিতে প্রথম এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২০২৬ সালে।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর