
কাশ্মীর উপত্যকায় ফের রক্তাক্ত সন্ত্রাস। পহেলগাঁওয়ের বৈসরণে নৃশংস হত্যাকাণ্ডে এখনও স্তব্ধ ভূস্বর্গ। ঘটনাপরবর্তী তিন দিনেও উপত্যকার বাতাসে ছড়িয়ে রয়েছে আতঙ্ক, শোক আর অস্থিরতা। ঠিক এই সময়েই নিজের শিকড়ের টানে কাশ্মীরে ফিরে এসে সেই যন্ত্রণাকে নিজ চোখে দেখছেন অভিনেত্রী হিনা খান। ভয়াবহ এই ঘটনার নিন্দা করে ‘নতুন কাশ্মীর’ গঠনের আহ্বান জানালেন ক্যানসার আক্রান্ত এই কাশ্মীর কন্যা।
ধর্মীয় বিদ্বেষ আর সন্ত্রাসের নিশান উড়িয়ে যেভাবে নিরীহ হিন্দু পর্যটকদের উপর আঘাত হানা হয়েছে, তা দেশজুড়ে সৃষ্টি করেছে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া। ধর্ম পরিচয়কে সামনে এনে সাধারণ মুসলিমদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে সন্ত্রাসের দায়। এই সময়েই সামাজিক মাধ্যমে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে লিখেছেন হিনা খান—“আমি একজন ভারতীয়, আর সেই সঙ্গে একজন মুসলিমও। আমি লজ্জিত।”
ইনস্টাগ্রামে দেওয়া বার্তায় হিনা জানান, “এই মুহূর্ত ভারতের জন্য এক অন্ধকার সময়। চোখে জল নিয়ে আমি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। বাস্তবতা থেকে মুখ ফেরানো যায় না। যারা নিজেদের মুসলিম পরিচয় দিয়ে এমন অমানবিক কাজ করেছে, তারা আমাদের সমাজের কলঙ্ক। একজন মানুষকে ধর্ম পাল্টাতে বাধ্য করে, তারপরও প্রাণ নেওয়া হয়—এই ভয়াবহতা আমার কল্পনাকেও হার মানায়। আমার হৃদয় বিদীর্ণ। তাই একজন মুসলিম হিসেবে, আমি আমার হিন্দু ভাইবোন এবং সকল ভারতীয় নাগরিকের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইছি।”
মাত্র কয়েকদিন আগেও যেখানে প্রাণবন্ত ছিল উপত্যকা, সেখানেই এখন দুঃস্বপ্নের মতো নেমে এসেছে মৃত্যু ও হাহাকার। সেই ক্ষত নিয়েই হিনা জানান, “আমার মন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এই যন্ত্রণা শুধু আমার নয়, প্রতিটি ভারতীয়ের। আমি এই জঘন্য ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং শান্তির জন্য প্রার্থনা করছি। যারা এই হামলা চালিয়েছে, তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছি।”
তিনি আরও বলেন, “সন্ত্রাসীদের কারণে যেন গোটা মুসলিম সমাজকে কাঠগড়ায় তোলা না হয়। এই সময় যদি আমরা পরস্পরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিই, তাহলে বিভাজনের খেলায় জিতে যাবে সন্ত্রাসবাদের কারিগররাই।”

হিনার কণ্ঠে উঠে আসে তাঁর জন্মভূমির জন্য আবেগ। “কাশ্মীরের তরুণদের মধ্যে এখন অনেক পরিবর্তন আমি দেখতে পাই। ওদের চোখে দেখি ভারতের প্রতি বিশ্বাস, দায়িত্ববোধ। সেই সময় ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখি, যখন কাশ্মীরি হিন্দু আর মুসলিমেরা একে অপরের পাশে দাঁড়াতেন, পরিবার হিসেবে একসঙ্গে থাকতেন।”
এই প্রতিবেদনে হিনার বার্তা যেন শুধুই রাজনৈতিক মন্তব্য নয়, বরং এক যন্ত্রণাক্লিষ্ট হৃদয়ের আর্তি, একতার স্বপ্ন আর শান্তির অঙ্গীকার।