কয়েদী মুসলিম!ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে খাবারের জন্য বলতে হয় জয় শ্রীরাম,জোর করে কুরআন শরীফ অপবিত্র করানো হয় ভোপাল কারাগারে

স্পেশাল রিপোর্ট : ১৯৪৭ সালে ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে ভারত বর্ষ গঠিত হলেও বর্তমান ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা এক হাস্যকর বস্তুতে পরিণত হয়েছে শাসক দলের পরিচালক সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে। সত্যিকার অর্থে যারা ধর্মনিরপেক্ষ ভাবধারা এবং মূল্যবোধে বিশ্বাসী এবং এর কার্যকর করার জন্য যারা কথা বলে তারাই এ দেশে উপেক্ষিত লাঞ্চিত বঞ্চিত এবং অপমানিত। আর এই জন্যই তো কট্টর সাম্প্রদায়িক দল বিজেপির দ্বারা শাসিত মধ্যপ্রদেশের ভোপাল কারাগারে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে ৩১ জন মুসলিম কয়েদিকে। তাদেরকে দেওয়া হয় না পানীয় জল, খাবারের জন্য তাদের বলতে হয় জয় শ্রীরাম, অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য প্রায়ই তাদের বাধ্য করা হয় পবিত্র কোরআন শরীফকে অপবিত্র করতে, রাতের বেলা দুই ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে দেওয়া হয় না কাউকে। পরিবারের কেউ দেখা করতে গেলে কয়েদিদের সঙ্গে মানসিক এবং শারীরিক হেনস্থার শিকার হতে হয় তাদের কেও। এমন অভিযোগ শুধুমাত্র কয়েদিদের পরিবারগুলোর নয়, অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কিন্তু তারপরেও বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই ভারতের বর্তমানে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থার।

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দী থাকা ৬ জন কয়েদিসহ নিষিদ্ধ মুসলিম শিক্ষার্থীদের সংগঠন (সিমি) -এর ৩১ সদস্যের ভাগ্যে বর্বরোচিত অমানবিক আচরণ যেন ভাগ্যের লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ২৫ জন, সিমি সদস্য অভিযোগ করেছেন যে তারা প্রায়শই খাবারের জন্য জয় শ্রীরাম জপ করতে বাধ্য হচ্ছেন, কারা কর্তৃপক্ষের “অমানবিক ও বর্বোরোচিত আচরণের প্রতিবাদে গত মাসে অনশন অনশন করছেন ছয় জন কয়েদি।

ডাঃ আবু ফয়সাল, কামরউদ্দিন, কামরান, সাদুলি পিএ এবং শিবিলি, যারা গত মাস থেকে ভোপালের সেন্ট্রাল জেল অনশনে ছিলেন, তারা এখন লবণাক্ত পানিতে বেঁচে আছেন। ২০২০ সালের অক্টোবরে, স্বাস্থ্যের অবস্থার অবনতি হওয়ার পরে তারা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে একই কাজ করেছিল। ২০০১ সালের ‘জেল বিরতি’ ঘটনার পরে সাজানো পুলিশ ‘এনকাউন্টার’ এ আটজন সিমি কর্মী নিহত হওয়ার পরে অভিযুক্তদের পরিবারের সদস্যরা কারাগারের অভ্যন্তরে সব ধরণের হয়রানি-মানসিক, শারীরিক-অভিযোগের অভিযোগ করে আসছেন।

একাকী বন্দী থাকা দণ্ডপ্রাপ্তরা অভিযোগ করেছেন যে পুলিশরা প্রায়শই রাতে তাদের “সুস্থতা” সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার নাম করে রাতে দরজা ধাক্কা দিয়ে থাকে তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে এবং দিনের বেলা বিভিন্ন সময়ে জয় শ্রী রামের জপ করার পরে কেবল তাদের খাবার বা জল দেওয়া হয়। পুলিশরা তাদের পবিত্র কুরআন শরিফকেও অপবিত্র করতে বাধ্য করে।

অভিযুক্তদের স্বজনরা বেশ কয়েকটি মুসলিম সংগঠনের কাছে একটি চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তুলেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল :-

১-খারাপ ব্যবহার এবং গালাগালি।

২-হুমকি।

৩-পবিত্র কুরআনের অবমাননা সহ ধর্মীয় গালি দেওয়া।

৪-একটানা ২৩ ঘন্টার জন্য নির্জন কারাগারে খাঁচাবন্দি করে রাখা।

৫- মিথ্যা জেল মামলা আরোপ করা।

৬- অসুস্থদের পুরানো মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।

৭-পুরো রাত দুই ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে দেওয়া হচ্ছে না।

৮- রাতে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো এবং জেলের মামলার অভ্যন্তরে ভুয়া মামলার ব্যাপারে জেল কর্তৃপক্ষ কোনো কিছু জবাবদিহিতা করে না।

৯- বাসা থেকে বা জেল থেকে চিঠির অনুমতি নেই।

১০-দর্শকদের কম সময় দেওয়া এবং সাক্ষাতের সময় তাদের মানসিক এবং শারীরিক হয়রানি করা।

১১-সমস্ত কয়েদীকে লকডাউনের সময় স্বজনদের সাথে ফোনে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তবে এই মুসলিম কয়েদিদের সেই অধিকার দেওয়া হয় নি।

১২-জেল কর্তৃপক্ষের নির্দেশিকায় থাকলেও কোনও অভিযোগ বাক্স সরবরাহ করা হয়নি তাদের জন্য।

১৩- দাসের মতো আচরণ করা এবং কারাগারে পুলিশের অ্-মানবিক আচরন।

এনএইচআরসি রিপোর্টে আপত্তিজনক এই সমস্ত অভিযোগ গুলোর সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (এনএইচআরসি) তদন্তে কারাগারে নির্যাতন ও হয়রানির অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।

“কমিশন অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেছে এবং ২০১৭ সালের জুনে বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি দল পাঠিয়েছিল। তদন্ত দলটি কয়েদি, তাদের পরিবার, কারা কর্তৃপক্ষ, আইনজীবী এবং সামাজিক কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেছিল। সেসময় অত্যাচার সংক্ষিপ্ত বিরতির পরে সহিংসতা আরও বেড়ে যায়। ডিসেম্বর ২০১৭ সালে একটি দ্বিতীয় দল এবার সফর করেছিল, “রিপোর্টে বলা হয়েছে।

এনএইচআরসি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, কারাগারের কর্মীরা বন্দীদের বর্বরভাবে মারধর করছেন। বেশ কয়েকজন বন্দীর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে যা কর্মীরা ব্যাখ্যা করতে পারেনি। বন্দিরা ঘুম ও থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

একটি বর্বোরোচিত বিষয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, “কারাগারের কর্মীরা এই কয়েদিদের প্রতি ধর্মীয় বৈরিতা পোষণ করে যা অমানবিক আচরণে প্রতিফলিত হয়েছে”। বন্দীরা অভিযোগ করেন যে তারা তাদের ধর্মের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে বাধ্য হয় এবং তারা প্রত্যাখাত না হলে তাদের মারধর করা হয়।

কয়েদিদের মধ্যে 10 জন পূর্বে আহমেদাবাদের সবরমতী কারাগারে বন্দি থাকলেও তাদেরকে আরও বড় বড় চিত্র এবং অমানবিক অত্যাচার এর কারণে সেখান থেকে ভোপাল কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ কয়েদিদের পরিবারগুলির। বর্তমানে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে তাদের বিচার হয় আহ্মেদাবাদ আদালতে কিন্তু তাদের নির্যাতন ভোগ করতে হয় বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের ভোপাল কারাগারে।

মিডিয়া ট্রায়াল

আমরা মিডিয়াকর্মীদের আমাদের দুর্দশাগুলি তুলে ধরার জন্য অনুরোধ করি কারণ মিডিয়া আমাদের প্রতি অত্যন্ত প্রতিকূল এবং আমাদের সম্পর্কে সর্বদা নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করে আসে। আসামি আকিলের এক চাচাত ভাই খলিল বলেন, আমাদের পরিবারগুলি অভাবনীয় ট্রমা ও দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেছেন যে, হাতে লবণাক্ত জল দিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একজন বিচারকের সামনে উপস্থাপিত হচ্ছে।

কারাবাসীদের পরিবার কারা কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথ চিকিত্সা চায়।

তিনি বলেন, ‘আমরা আইনী ও সাংবিধানিক অধিকার অনুসারে ন্যায্য বিচার ও আসামির যথাযথ আচরণ চাই। তাদের সাথে পশুর চেয়েও খারাপ আচরণ করা হচ্ছে। এমনকি কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে তারা জেল ভাঙতে টুথব্রাশ ব্যবহার করতে পারে, এটি সত্যিই যন্ত্রণাদায়ক, ’সাফদার নাগোরির বড় ভাই হায়দার হুশিয়ান নাগোরি বলেছিলেন।

Latest articles

Related articles