তোমাকে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে….

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

Add a heading

হাফিজুর রহমান, অতিথি সম্পাদক, এনবিটিভি

 

সত্যি ঘটনা দিয়ে শুরু করি, সাল তারিখ মনে রাখা মুশকিল, সময়ের উল্লেখ না কাহিনীতে ফিরি। তখন আমি স্যালভেশন আর্মি হোস্টেলে, আমার রুমমেট ছিল এক ডাক্তার। পোস্টিং কলকাতায় আর বান্ধবীও ডক্টর। দুজনেই সরকারি হসপিটালের সঙ্গে যুক্ত। সমস্যায় পড়ে দুজনই আমাকে ধরল ডাক্তারের বান্ধবির পোস্টিং কলকাতায় করতে হবে। মালদা জেলা স্কুলে পড়েছি, আব্বা ক্লাস ওয়ান গেজেটেড অফিসার ছিলেন। কাজেই দুয়ে দুয়ে চার করে ফেললো দুজন। আমাকে গ্যাস খাইয়ে, গ্লোবে সিনেমা দেখিয়ে আমার প্রিয় লাহোরে রেস্টুরেন্টে খাইয়ে দিয়েছে। ইজ্জত কি সওয়াল, তাই যা কপালে আছে বলে বুক ঠুকে চলে গেলাম বর্ধমান রোডে নেতার ফ্ল্যাটে। গিয়ে দেখি বরককতদা ব্রেকফাস্ট করতে বেরোচ্ছেন। সব কিছুর অভাব থাকলেও সাহসের অভাব ছিলনা আমার। তাই ওঁর সঙ্গে আলাপ না থাকলেও সব খুলে বললাম। শুনে ধমক দিলেন এভাবে আসার  জন্য। ডক্টর যুগলের অবস্থা খারাপ, আমারও প্রেস্টিজের ঝুলে গেছে। হঠাৎ হাসতে আরম্ভ করলেন। হাঁসি থামলে ইশারা  করে  গাড়িতে  উঠতে বললেন। ড্রাইভারের পাশে বরকতদা আর পেছনে আমরা। সেই প্রথম মার্সিডিজ বেঞ্জ-য়ে সফর, গাড়ি থামলো ফ্লুরিজে। ম্যানেজার দৌড়ে এসে বরকতদাকে নিয়ে বসালো। বরকতদার ব্রেকফাস্ট করলেন সঙ্গে আমরাও। এরপর গণি খান চৌধুরি সাহেব ফ্লুরিজের টিস্যু পেপারে কিছু লিখে দিলেন। সপ্তাহ খানেক পরে আমার রুমমেট ডক্টর বন্ধু লাফাতে লাফাতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। শুনলাম ওর বান্ধবী স্বাস্থ্য ভবন থেকে কলকাতায় ট্রান্সফার অর্ডার পেয়েছে। শেষে বলি আমার রুমমেট ছিল সিপিএম সমর্থক। 

আরেকটি কাহিনি বলছি এবার নায়ক সুভাষ চক্রবর্ত্তী। এটি আমার বন্ধু হাফিজুর রহমানের কাছে শোনা। নদিয়ার হাফিজুর বাম রাজনীতি করতো। আদ্যোপান্ত সৎ মানুষটি পার্টির চুরি রুখতে না পেরে পঞ্চায়েত প্রধান পদ থেকে ইস্তফা দেয়। সুভাষ চক্রবর্ত্তীর নজরে ছিল বিষয়টি। তিনি পরোপকারী হাফিজুরকে স্নেহ করতেন। হাফিজুর অভিমানে পার্টি ছেড়ে গেলেও তিনি এক ট্রাক ভর্তি করে বই খাতা পাঠিয়েছিলেন এলাকার অভাবী ছাত্র ছাত্রীদের জন্য। কারো মুখে শুনেছিলেন হাফিজুর টাকার অভাবে সমাজ সেবা করতে পারছেনা। তিনি নিজে উদ্যোগ নিয়ে ওর জন্য টাকা পাঠিয়েছিলেন। কথা দিয়েছিলেন এলাকার মেয়েদের স্বাবলম্বী করার  জন্য  সেলাই মেশিন জোগাড় করে দেবেন। যেদিন হাফিজুর নদীয়ার চাপড়া থেকে সুভাষদার সঙ্গে দেখা করতে যায়, ট্রেন যখন ব্যারাকপুরে থেমেছে তখন খবর এল সুভাষ চক্রবর্তী আর নেই। এতদিন আগের কথা বলতে গিয়ে হাফিজুরের চোখে পানি আসে।

বরকতদা বা সুভাষদারা হলেন রাজনীতির দুনিয়ার ব্যতিক্রমী চরিত্র। এদের মত মানুষের জন্য এখনও লোকে রাজনীতির উপর বিশ্বাস হারায়নি। এবার যার কথা বলছি তিনি হলেন বাপের জমিদারি পার্টীর ব্যতিক্রমী চরিত্র, দাত্য কুলে প্রহ্লাদ নিতিন গাদকারী। চোখ কপালে উঠলেও সত্যিকে অস্বীকার করা মুশকিল। বাপের জমিদারি পার্টির অকর্মাদের ভিড়ে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম কাজের মানুষ নীতিন গাডকারি। হিন্দু মুসলিম নয়, লোকের পেছনে লাগা নয়, কাজ পাগল মানুষটিকে গোবরে পদ্মফুল বললে বাড়িয়ে বলা হবেনা। গণি খান চৌধুরির মত ওর কাছে হিন্দু মুসলিম বাচ বিচার নেই,  বিপক্ষের লোক হলেও কেউ ওর কাছ থেকে খালি হতে ফেরেনা। তাই কাজের লোক গাডকারির জনপ্রিয়তায় ভীত ফেকু ওকে নীতি নির্ধারক সমিতি থেকে বের করে দিয়েছে, মন্ত্রিত্বের একের পর এক বিভাগ কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু তবুও ওর জনপ্রিয়তা কমেনি বরং বেড়ে চলেছে। আগামী ৩রা ডিসেম্বর ৫রাজ্যের বিধানসভার ফল বেরুবে। আমরা সবাই অপেক্ষায়, অপেক্ষায় গাডকারি, রাজনাথ সিং, আর বিক্ষুব্ধরাও। পার্টি উইথ ডিফারেন্স এখন দুই গুজরাটির। হাতে বন্দী।

আসল সত্যি হলো এই নির্বাচনে সব সার্ভে এমনকি আরএসএসের গোপন সার্ভে অনুযায়ী শাসক দল এবার দুশো পার করতে পারবেনা। সেই আশঙ্কা সত্যি হলে বৃহত্তম দল হিসেবে শাসক দল সরকার গঠনের প্রথম সুযোগ পাবে, সে ক্ষেত্রে সব দলের কাছের লোক গাডকারীর সামনে বিরাট সুযোগ। মমতা, নীতীশ শারদ পাওয়ার উদ্ধভ ঠাকরে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক গাডকারির। ইন্ডিয়া জোট খুব ভালো জায়গায় নেই, দলের মধ্যে নানা মুনির নানা মত। অবশ্য এটাও অনস্বীকার্য যে নীতিশ এর জাতপাতের হিসসাদারির ফর্মুলায় লালু, রাহুল সব একছাতার তলায়। রাজনীতি অসম্ভবের খেলা আজ যে রাজা কাল সে ফকির। তবে এটাও ঠিক কথা তোমাকে বোধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে, কংস মামার শেষ দেখার জন্য তৈরি নীতিন অ্যান্ড কোম্পানি এবার দেখা যাক অঘটন কে ঘটায় টিম ইন্ডিয়া না গাডকরি।

 

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর