মাটি এবং বালি ভক্ষণ করে দিন কাটাচ্ছেন খারার আঘাতে জর্জরিত মাদাগাস্কারের মানুষ

সাইফুল্লা লস্কর : মানব সভ্যতা কালের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিকতার যুগ পার করে অতি আধুনিকতার পথে অগ্রগামী। কিন্তু বিশ্বের এমন অনেক জনপথ এমন আছে যেখানকার বাসিন্দারা আজও আধুনিকতা এবং উন্নয়নের সামান্যতম লাভ টুকু উপভোগ করতে পারেনি।তাই, বর্তমান বিশ্বে সর্বক্ষেত্রে মানুষের উন্নয়ন সমানভাবে পরিলক্ষিত হয় না। তারই এক নির্মম উদাহরণ দেখা গেল ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ মাদাগাস্কারে যেখানে তিন বছর থেকে চলমান ভয়ঙ্করতম খরার আঘাতে জর্জরিত সাধারণ মানুষ পেট ভরানোর জন্য বালি এবং মাটি ভক্ষণ করতে বাধ্য হচ্ছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং আফ্রিকান ফোরামের সদস্য, পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম দ্বীপপুঞ্জ, আফ্রিকার মূল ভূখন্ড থেকে ৪০০ কিমি পূর্বে, ভারত মহাসাগরে বুকে অবস্থিত  দেশটি এখন তাদের ইতিহাসের ভয়ংকরতম মানবিক সংকটের মধ্যে পতিত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রায় ২৭ লাখ জনসংখ্যার এই দেশটিতে গত তিন বছর ধরে চলমান এই মানবিক সংকটে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের দুই বেলা দুই মুঠো খাবার জোগাড় করতে পারছেনা না। এই তিন বছরে খাদ্যের অভাবে প্রাণ হারিয়েছেন অসংখ্য শিশু এবং প্রবীণ মানুষ।যারা বেঁচে আছে তারা কেউ মাটি কেউ বালি কেউ আবার গাছের পাতা এবং অন্যান্য অংশ ভক্ষণ করে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছে।রাষ্ট্রসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন বা আন্তর্জাতিক কোন সংস্থা থেকে মাদাগাস্কার তেমন কোনো সাহায্য এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য লাভ করেনি বলে জানা গিয়েছে।

দেশটি ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে থেকে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত ফ্রান্সের অধীনে ছিল। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন হওয়া দেশটি ২০১০ সাল পর্যন্ত চারবার নিজেদের সাংবিধানিক গঠন কাঠামো পরিবর্তন করেছে। দেশটির প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। মাথাপিছু আয় এর হিসেবে পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র দেশ গুলির মধ্যে মাদাগাস্কার অন্যতম। কৃষি পর্যটন মৎস্য শিকার এবং খনিজ সম্পদ উত্তোলন এই দেশের প্রধান প্রধান জীবিকা নির্বাহের পথগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দেশটিতে পর্যটক এর অভাব হয় না কিন্তু রাজধানী অন্টানারিভার বাইরে উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে পর্যটকরা সেভাবে যেতে চায়না। এছাড়াও চারিদিকে সমুদ্রবেষ্টিত দেশটিতে মৎস্য শিকারের অফুরন্ত সম্ভাবনা থাকলেও এবং খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ হওয়া সত্বেও সরকারি ব্যবস্থায় অত্যাধিক হারে দুর্নীতি দেশের সাধারণ জনগণকে চরমতম দারিদ্র্যসীমার নিচে ফেলে দিয়েছে।

তিন বছর ধরে এমন ভয়ংকরতম মানবিক সংকটে পতিত হওয়া দেশটির প্রতি এখনো রাষ্ট্রসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, আফ্রিকান ফোরাম বা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার নজর কেন যায়নি তা নিয়েও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উঠছে নানা প্রশ্ন। এমন উদাসীনতা দেখালে কিভাবে রাষ্ট্রসংঘ তার নির্ধারিত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে?

Latest articles

Related articles