নিউজ ডেস্ক : বিরোধিরা বলেন, হিন্দুত্ববাদীদের ইশারায় এতদিন বিভিন্ন নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচার করা থেকে বিভিন্ন নিরীহ মানুষের উপর হওয়া অত্যাচারের সমর্থন করা সবকিছুই করেছে উত্তর প্রদেশের পুলিশ। অনেককে ফাঁসিয়েছে ভুয়া মামলায় আবার অনেককে হত্যা করেছে ভুয়া এনকাউন্টার করে। তবে এবার সেই হিন্দুত্ববাদীদের হাতেই জুতোপেটা খেতে হল উত্তর প্রদেশ পুলিশের। ভিড় সামলানোর জন্য নিযুক্ত পুলিশ নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে যেতেই মার শুরু করে আরএসএস কর্মীরা। উল্টে লাঠিচার্জ করার সাহস জোগাড় করতে পারেনি পুলিশ সদস্যরা। প্রাণ বাঁচাতে স্থানীয় থামার দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন পুলিশ কর্মীরা। কিন্তু যমুনার স্নানে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে হিন্দুত্ববাদী কর্মীদের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করে এত অপরাধ করেছিলেন তারা যে থানা পর্যন্ত তাদের ধাওয়া করে থানার সামনেই জুতো এবং লাথি পেটা করে হিন্দুত্ববাদীরা। তবুও কোনো পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারেনি। কিন্তু জুতো লাঠি পেটা সহ্য করেও তাদের আরএসএস এর প্রতি ভক্তি দেখানো ঠিক থাক হয়নি। তাই পরে আবার ৪ পুলিশ কর্মীরা বিরুদ্ধে FIR দায়ের করে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
যমুনায় স্নান করার জন্য রেলিং টপকে নদীর দিকে যাওয়ার চেষ্টা করায় পুলিশ বাধা দিয়েছিল। অপরাধ এটুকুই। এই ‘অপমান’কে ঘিরেই শনিবার দিনভর মথুরার কুম্ভ চত্বরে দফায় দফায় পুলিশকে যথেচ্ছ পেটাল রাজ্যের শাসক দল বিজেপি এবং আরএসএস কর্মীরা। কয়েকটি জায়গায় এই কর্মীদের সঙ্গে যোগ দিলেন নেতারাও। কোথাও সঙ্ঘ-কর্মীর ‘অপমান’ এবং পুলিশের ‘দুঃসাহসে’ ক্ষুব্ধ বিজেপি নেত্রী পা থেকে চটি খুলে প্রকাশ্য রাস্তায় পেটালেন পুলিশকর্মীকে। কোথাও ভিড়ের মধ্যে থেকে পুলিশের মাথায় হেলমেট দিয়ে মারাও হল একাধিক বার। পুলিশকে মরের সঙ্গে সঙ্গেই ভিড়ের মধ্যে থেকে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনিও তোলেন বিজেপি-আরএসএস সমর্থকেরা। ভিড়ের মধ্যে অন্য পুলিশ কর্মীরা থাকলেও তাঁদের বেশির ভাগই সহকর্মীকে মার খাওয়া থেকে বাঁচাতে এবং ক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীদের বোঝাতেই ব্যস্ত থাকলেন। একজন তো পুলিশ পেটানো দেখতে জমা হওয়া ভিড় ঠেকাতে রীতিমতো ঘনঘন বাঁশি বাজিয়ে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করে গেলেন। পরে বিজেপি সমর্থকদের শান্ত করতে তাঁদের দাবি মেনে আরএসএস প্রচারককে ‘খুনের চেষ্টা’র অভিযোগ আনা হয়েছে চার পুলিশের বিরুদ্ধে!
শনিবার যোগী রাজ্য উত্তরপ্রদেশের মথুরায় সঙ্ঘ পরিবারের সমর্থক এবং বিজেপি কর্মীদের হাতে পুলিশের এই রকম গণপিটুনি খাওয়া রাজ্যের আইনশৃঙ্খলাকেই প্রশ্নের মুখে তুলে দিয়েছে। পুলিশ অবশ্য শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের হাতে বেধড়ক মার খাওয়ার পরেও পাল্টা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে পুলিশের আচরণে ক্ষুব্ধ আরএসএস নেতাদের সামলাতে বেশ কয়েক জায়গায় হাতজোড় করে তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা করে গিয়েছে। কিন্তু তাঁরা শান্ত হননি। উল্টে নদীতে স্নান করতে যাওয়ার পথে সঙ্ঘ কর্মীকে বাধা দেওয়ায় ‘দোষী’ পুলিশদের শাস্তির দাবি তুলেছে। এই দাবিতে এক সঙ্ঘ নেতা অনশনেও বসেছেন। বিজেপি-আরএসএস কর্মীদের এই তাণ্ডবে কিছুক্ষণ পরেই যোগ দেয় আর এক উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরাও। সব মিলিয়ে শনিবার দিনভর এই ঘটনাকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে রইল উত্তরপ্রদেশের মথুরার কুম্ভ এলাকা।