রাজনৈতিক দলগুলো জনসংখ্যা অনুপাতে আসন দিক,চাইছেন মুসলিম নেতারা

দীর্ঘ বঞ্চনার পরেও বিধানসভায় মুসলিমদের রাজনৈতিক সংরক্ষণ নেই। বঞ্চনা নিয়ে আলোচনা হয়,তর্ক বিতর্ক হয়,আশ্বাস মেলে,ভোট চলে গেলে আবার সেই আশ্বাস হারিয়েও যায়,কিন্তু মুসলিমদের উন্নয়ন হয়না। আবার যেসব মুসলিম সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূল, বিজেপি বা কোনও প্রচলিত রাজনৈতিক দলের নেতা হন,তারা দলের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করেন, সমাজের নয়। ফলে মুসলিম কন্ঠ পাওয়া যায়না। এতো কিছুর পরেও এখন সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজ নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে। তারা রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন চাইছে। এক শ্রেণীর উচ্চ শিক্ষিত মুসলিম মনে করছে,শুধু ভোট ব্যাংক হয়ে থাকলে হবেনা, দেশকে নেতৃত্বও দিতে হবে। এক্ষেত্রে আইডেন্টিটি পলিটিক্স করার ভাবনা যেমন উঠে আসছে,তেমনি প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলো থেকেও প্রতিনিধি বাড়ানোর প্রস্তাব আসছে।
পশ্চিমবঙ্গে একশোর অধিক আসনে মুসলিম ভোট বড় ফ্যাক্টর। সেক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক দলই একশো আসনে মুসলিম প্রতিনিধি দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে হিন্দু দলিত নেতাদের মতো মুসলিমরাও স্লোগান তুলছে, “যার যত সংখ্যা ভারী তার তত ভাগিদারী।”
এই প্রসঙ্গে জমিয়তে আহলে হাদিসের রাজ্য সম্পাদক আলমগীর সরদার বলেন,”আমি বড়ই আশ্চর্যান্বিত হয়ে যাই যখন ভোট ময়দানে মুসলিমদের শতাংশের বিচারে প্রতিনিধিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। শুধু ভোট ময়দানে নয় যখন সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও এই প্রশ্নটি করা হয় তখনও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। আমার কাছে এই প্রশ্নটিই অবাঞ্চিত বলে মনে হয়। কারণ স্রষ্টার কৃপায় ভারতের মাটিতে যখন হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ জৈন সবাই তাঁর অনুগ্রহ- অনুকম্পা সমানভাগে ভোগ করি তাহলে কেন রাজনৈতিকভাবে মুসলিমদেরকে পিছিয়ে রাখা হবে? কিন্তু একথা ধ্রুব সত্য যে, যুগ যুগ ধরে মুসলিমদেরকে সুপরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে রাখা হয়েছে। এটা অত্যন্ত অন্যায় ও গর্হিত কাজ বলে আমি মনে করি। সুতরাং আমি চাই সংখ্যার অনুপাতেই হোক রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব।”
আলমগীর সর্দার আরও বলেন,”নারীর ক্ষমতায়নের ব্যাপারে সরকারের উচিত কিছু আইন প্রণয়ন করা। যেমন তাদেরকে সরাসরি ভোট ময়দানে না নামিয়ে আসন সংরক্ষিত করা। ভোট ময়দানে অনেক ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি নারীদের ক্ষমতায়নের কথা বলে তাদেরকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত ও হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে, বিশেষভাবে তাদের উর্দ্ধতন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কাছে। সেক্ষেত্রে বলা চলে অধিকার আদায়ের চেয়ে অধিকার হরণ হচ্ছে বেশি। সুতরাং তাদের ভোট ময়দানে সরাসরি না নামিয়ে রাজ্যসভার মত অথবা সরাসরি আইনসভার সদস্য করা যায় কিনা তা ভাবার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন রাখছি। যদি করা যায় তাহলে তাদের হেনস্থার সংখ্যাও থাকলো না, আর দেশ পেয়ে যাবে আইনসভার সদস্য।”

এদিকে অধ্যাপক ইমানুল হক বলছেন,”রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব শুধু মুসলিম নয়, দলিতদেরও কম। পাঞ্জাবে ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ চালু হলো। ভালো কাজ। আর মুসলিম জনসংখ্যা প্রধান আসন ১২৫ টি এ-রাজ্যে। তার অনেকগুলোই সংরক্ষিত।
এ বিষয়ে ভাবনাচিন্তা জরুরি।”
তিনি আরও বলেন,”মুসলিম প্রার্থী হলেই মুসলমানদের স্বার্থ দেখবে, নাও হতে পারে। লোকসভায় তো ১২৫ জনের বেশি দলিত সাংসদ। হাথরাশের ঘটনায় কতজন সরব? উমর খালিদকে নিয়ে কজন মুসলিম সাংসদ মুখ খুললেন?
কাশ্মীর নিয়ে? আসল কথা, বঞ্চিতদের পাশে থাকার চিন্তা ও মূল্যবোধ।”

Latest articles

Related articles