মোদীর আমেরিকা প্রেম,দুই দশকে প্রথমবার ভারত – রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্মেলন স্থগিত করল রাশিয়া; সম্পর্ক ফাটলের ইঙ্গিত

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

india-russia-flag-agencies

নিউজ ডেস্ক : মোদীর আমেরিকা প্রেম দূরে সরাল ভারতের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু রাশিয়াকে। এই কারণে ধীরে ধীরে ভারত থেকে বহু দূরে সরে যাচ্ছে রাশিয়া। তারা জোর দিচ্ছে চীন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নতিতে। ভারতের সঙ্গে আমেরিকা জাপান সহ পশ্চিমা দেশগুলোর মাত্রাতিরিক্ত সখ্যতা চিড় ধরাচ্ছে ভারত রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে। দুই দশকে এই প্রথমবার রাশিয়া দুইদেশের মধ্যেকার বার্ষিক সম্মেলন স্থগিত করল। যদিও মোদী সরকারের দাবি এই সম্মেলন স্থগিতের কারণ করোনা মহামারীর প্রকোপ। কিন্তু অন্ন্যান্য সব আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন বিনা বাধায় তখন এটা কেন বন্ধ থাকবে সে নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। অনেক ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল সামিট ও আয়োজন করা হচ্ছে। কিন্তু এক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে এক তরফা ভাবে রাশিয়া এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন রাহুল গান্ধী। এই বার্ষিক সম্মেলনটি ২০০০ সাল থেকে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ওই বছর “ভারত রাশিয়া কৌশলগত অংশীদারিত্ব ঘোষণা” এর পর থেকে এই সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য আলোচনার সর্বোচ্চ মঞ্চ।

ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে সর্বদা পাশে পেয়েছে রাশিয়াকে। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কার্যকরে সাহায্য করা থেকে সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরনে সবক্ষেত্রে। ১৯৬৫ এর যুদ্ধ থেকে ১৯৭১ এর যুদ্ধ প্রত্যেক যুদ্ধে ভারতের সঙ্গে ছিল রাশিয়া। ১৯৭১ এর যুদ্ধের সময় ভারত যখন আমেরিকার সপ্তম নৌবহরের আক্রমণের সম্মুখীন হতে যাচ্ছিল তখনও পরিত্রাতা ছিল রাশিয়া। কার্গিলে আমেরিকা ভারতকে শেষ মুহূর্তে উপগ্রহ তথ্য দিতে অস্বীকার করলেও সাহায্য করেছিল রাশিয়া। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতের সময় দুই দেশের বিবাদ নিরসনে এগিয়ে আসে রাশিয়া। এমনকি চীনকে এস-৪০০ এর সরবরাহ বন্ধ করে দেয় রাশিয়া। চীনের বিরুদ্ধে ভারতের বিমানবাহিনীকে শক্তিশালী করতে ভারতকে ৩৩ টি আধুনিক বিমান সরবরাহের অঙ্গীকার করে রাশিয়া। এছাড়াও brahmos ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি থেকে শুরু করে ভারতের সামরিক ক্ষেত্রে রাশিয়ার অবদান অপরিসীম।

 

মোদীর অধীনে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব না দিয়ে সম্পর্ক উন্নত করার ওপর জোর দিয়েছে আমেরিকা এবং তার দোসরদের সঙ্গে। আমেরিকার তৈরি কুয়াড জোটেও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ভারত। কিছুদিন আগে মালাবার সামরিক মহড়া তে ভারত অংশ নেয় আমেরিকার জোট সঙ্গীদের সঙ্গে। এছাড়া মার্কিন নেতৃত্বাধীন এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জোটেও ভারত যোগ দিয়েছে অনেক আগেই। ভারত আমেরিকার সঙ্গে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। তার মধ্যে দুই দেশের পরিস্পরের সামরিক স্থাপনা ব্যাবহার করা, উপগ্রহ তথ্য ব্যাবহার করা এবং গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় চুক্তি উল্লেখযোগ্য। রাশিয়ার বিরোধী শক্তি গুলোর সঙ্গে ভারতের এমন ঘনিষ্ঠতা আদৌ ভালো লাগেনি দীর্ঘদিনের মিত্র রাশিয়ার।

এই জন্য তারা সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করছে। পাকিস্তানে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের একটি গ্যাস পাইপলাইন তৈরি করতে যাচ্ছে তারা। পাকিস্তান চীনের ৬২ বিলিয়ন ডলারের বিশাল অর্থনৈতিক করিডোর সিপ্যাকেও রাশিয়া অংশীদার হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে গত কয়েক বছর থেকে দ্বিপাক্ষিক সামরিক মহড়ায় অংশ নিচ্ছে রাশিয়া আবার সেই সব মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে গিলগিট বালটিস্টানে যেটা ভারত নিজের ভুখন্ড বলে দাবি করে। পাকিস্তানের সঙ্গে রাশিয়ার এমন ঘনিষ্ঠতা দেখে আপত্তি করেছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। কিন্তু রাশিয়া সাফ জানিয়ে দিয়েছে ভারত আমেরিকার সঙ্গে যদি সম্পর্ক জোরদার করতে পারে তাহলে তারাও তা করতে পারে পাকিস্তানের সঙ্গে।

রাশিয়ার অর্থনীতির জন্য তাদের সামরিক খাতের রপ্তানি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর ভারত সেই অস্ত্র বাণিজ্যের বৃহত্তম অংশীদার। সে জন্যই ভারতকে চটাতে চায় না রাশিয়া। তা সত্ত্বেও রাশিয়া ভারতকে নিজেদের মিত্রদের তালিকা থেকে যে আন্তরিক বাদ দিয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে। এখন ভারত শুধু রাশিয়ার ব্যবসায়িক অংশীদার। রাশিয়া ভারতকে অস্ত্র বিক্রির জন্য পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করেনি বহু দশক কিন্তু এই ধারা ভেঙ্গে এই বছর রাশিয়া এম আই -১৫ সামরিক হেলকপ্টার সরবরাহ করে পাকিস্তানকে। রাশিয়া পাকিস্তানকে অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহ করবে অদূর ভবিষ্যতে এমনিই উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে মোদির ব্যর্থ কূটনৈতিক কৌশলে আশপাশের প্রতিবেশী দেসহুগুলোর মতো দূরে সরে যাচ্ছে এককালের সুপার পাওয়ার বন্ধু রাশিয়াও।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর