মন্দিরে পানী পানের অপরাধে মুসলিম কিশোরকে বেধড়ক মারধর করা গেরুয়া সন্ত্রাসীর সমর্থনে টুইটার ট্রেন্ড বিজেপির

নিউজ ডেস্ক : সন্ত্রাসীদের কোনো জাতি বা ধর্ম বা বর্ণ হয় না। কেউই প্রকাশ্যে কোনো প্রমাণিত সন্ত্রাসী বা ধর্ষককে সমর্থন করেনি স্বাধীন ভারতে কিন্তু সেটা ছিল ভারতে সাম্প্রদায়িক শক্তির আগমনের আগে পর্যন্ত। এখন যদি কোনো ধর্ষক বা সন্ত্রাসী গেরুয়া গোষ্ঠীভুক্ত হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো মুসলিম হয় তাহলে নির্দ্বিধায় সন্ত্রাসীরা সমর্থন পায় এক শ্রেণীর উগ্র সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী শক্তির। এক্ষেত্রে ও হলো ঠিক তেমনই। যোগীর রাজ্য উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের একটি মন্দিরে একটি মুসলিম কিশোরকে পানি পান করার অপরাধে বেধড়ক মারধর করে গেরুয়া সন্ত্রাসী শৃঙ্গী যাদব। তাকে পরবর্তীতে গ্রেফতার করলেও যোগীর পুলিশের প্রচ্ছন্ন মদতে আদালতে জামিন পেয়ে যায় শৃঙ্গি। কিন্তু তাকে সমর্থন করে টুইটার ট্রেন্ড চালু করে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। হরিয়ানার বিজেপি আইটি সেলের প্রধান উগ্রপন্থী অরুণ যাদব এই টুইটার ট্রেন্ড চালু করে।

ঘটনার পরে তাঁকে টুইট করতে দেখা যায়, ”হিন্দু সিংহের মতো গর্জন করেছে। আমি শিরিঙ্গি যাদবের সঙ্গে আছি।” পরে এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে অরুণ জানিয়ে দেন, ”ওই যুবকের সমর্থনে একটা হ্যাশট্যাগ চালু হয়েছে। এবং আমরা ওকে সমর্থন করছি।” গাজিয়াবাদের যে মন্দিরে কিশোরটি পানী পানের জন্য ঢুকেছিল, সেই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত গেরুয়া উগ্রপন্থী নরসিংহানন্দ সরস্বতীও নির্লজ্জভাবে সমর্থন করেছে অভিযুক্তকেই। কেবল তাই নয়, সে যে এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য অনেককেই এব্যাপারে ‘প্রশিক্ষণ’ দিয়ে রেখেছিল স্বীকার করে নিয়েছে তাও। তাঁর কথায়, ”আমি আমার অনুগামীদের শিখিয়ে রেখেছিলাম মুসলিমরা এখানে ঢুকে পড়লে তাদের কীভাবে শিক্ষা দিতে হবে। শুক্রবারও ওরা যা করেছিল তা আমারই নির্দেশে।” তবে তাঁর আফশোস একটাই। ঘটনার ভিডিও না করলে তা প্রকাশ্যে আসত না বলেই মনে করছেন নরসিংহানন্দ। কিন্তু এই নির্লজ্জ সন্ত্রাসী পুরোহিত কোনো আইনি পদক্ষেপের সম্মুখীন হচ্ছে না কারণ তার সমর্থক উগ্রবাদীরা এখন ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক।

ঘটনার নিন্দায় মুখর হয়েছেন অনেকেই। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব থেকে অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর, অনেকেই নিগৃহীত কিশোরটির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। ইতিমধ্যেই কিশোরটির জন্য একটি তহবিল তৈরি করে অনুদান সংগ্রহ করা হচ্ছে। মহম্মদ জুবির নামে এক ব্যক্তির উদ্যোগে ইতিমধ্যেই ৭ লক্ষ টাকা সংগৃহীত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

তবে এই সব কিছুর থেকেই দূরে রয়েছে নিগৃহীত কিশোরটি। ১৪ বছরের ছোট ছেলেটি এখনও নিজের বাড়ির খাটে শুয়ে রয়েছে মাথাজোড়া ব্যান্ডেজ নিয়ে। যে ছোট্ট এক কামরার বাড়িতে সে থাকে তার বাইরে অবশ্য অনেককেই ভিড় করতে দেখা গিয়েছে। অনেকেই অর্থসাহায্য করেছেন পরিবারটিকে। তবে সন্ত্রাসীদের সমর্থনের এই ধারাবাহিক প্রবণতা ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক গেরুয়া শক্তির এক নির্লজ্জ উপহার, যা বিশ্বের দরবারে ভারতের মানবিক ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত এবং ভূলুণ্ঠিত করবে।

Latest articles

Related articles