
কলকাতা: স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার ও আধিকারিকদের দফতরে আটকে রেখে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে। সল্টলেকের আচার্য সদনের সামনে টানা ২১ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অবস্থান করছেন শত-শত চাকরিপ্রার্থী প্রার্থী। তাঁদের দাবি, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগ্য-অযোগ্য তালিকা পুনর্বিবেচনা করে অদক্ষদের ছাঁটাই করতে হবে, নইলে SSC-কে ডেডলাইন বেঁধে দেওয়া হবে। গত রাত জুড়ে খোলা আকাশের নীচে অবস্থান করে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
মেদিনীপুর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষকদের স্কুলে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আপনাদের বেতন নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। সরকারই তা দেবে। যারা উস্কানি দিচ্ছে, তারা বেতন দেয় না। গ্রুপ সি ও ডি-র নিয়োগ নিয়ে রিভিউ পিটিশন করা হবে। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আপনারা নিশ্চিন্তে ক্লাসে ফিরুন।” এছাড়া তিনি অভিযোগ তোলেন, “উত্তরপ্রদেশে ৬৯ হাজার, ত্রিপুরায় ১০ হাজার চাকরি বাতিল হয়েছে। কে যোগ্য, তা বিচার করার দায়িত্ব আপনাদের নয়।”
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট নন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের জবাব, “মুখের কথায় আর ভুলব না। লিখিতভাবে আশ্বাস চাই। নাহলে পথেই বসে থাকব।” এক শিক্ষিকার প্রশ্ন, “আইন মেনেই তো হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টে গেল মামলা! যদি আমরা অযোগ্য হই, তাহলে আদালত কেন আমাদের পক্ষে রায় দেবে?”

বিক্ষোভকারীদের দাবি, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির জেরে বহু যোগ্য প্রার্থী বাদ পড়েছেন। এক তরুণ শিক্ষক বলেন, “২০১৬ সালের পরীক্ষার ফল নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা। যারা অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছে, তাদের ছাঁটাই হোক। চাল থেকে কাঁকর আলাদা করতে হবে।” SSC-র বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিয়োগ তালিকায় নাম ভর্তি করা হয়েছে এমন বহু প্রার্থীর, যাদের নথি জাল বা যোগ্যতা নেই।
মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত SSC ভবনের গেটে অনশন চালিয়ে গেছেন শিক্ষকরা। অভিযোগ, রাতভর তাঁদের জল বা টয়লেট সুবিধা দেওয়া হয়নি। পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার থাকলেও আলোচনার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এক প্রার্থীর ক্ষোভ, “চেয়ারম্যান ভবনে আরামে আছেন, আমরা রাস্তায়। সরকার যদি সৎ হত, তাহলে আজ এই পরিস্থিতি হতো না।”
স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ গত কয়েক বছর ধরে চলছে। উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ, তদন্ত কমিটি গঠন এবং বহু চাকরি বাতিলের পরও সমাধান মেলেনি। বিশ্লেষকদের মতে, প্রশাসনের অস্পষ্টতা ও দায়িত্বহীনতাই এই সংকটকে দীর্ঘস্থায়ী করছে। এখন চাপের মুখে মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য শিক্ষকদের মধ্যে কি প্রভাব ফেলছে সেদিকেই নজর রেখে চলেছে রাজনৈতিক মহল।