‘শরীয়াহ আইন চালু হবে আফগানিস্থানে’,মে মাসের মধ্যে চুক্তি মতো সব বিদেশী সেনা প্রত্যাহার করতে হবে,দাবি তালিবানের

নিউজ ডেস্ক : আফগানিস্থানে আবার চালু করা হবে শরীয়াহ আইন। আফগানিস্তানের বর্তমান শান্তি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিদেশী সমস্ত সৈন্যকে মে মাসের মধ্যেই শান্তি চুক্তির শর্ত পূরণ করে আফগানিস্থান থেকে বের হয়ে যেতে হবে, বলছে তালিবান। গত শুক্রবার মস্কোতে আফগানিস্তানের আশরাফ খান সরকার এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে তালেবানের প্রতিনিধি দলের আলোচনার পর তালেবান প্রতিনিধি দলের সদস্য সুহেইল শাহীন বলেছেন, শান্তি চুক্তির শর্ত হিসাবে মে মাসের মধ্যে সমস্ত মার্কিন এবং ন্যাটো সৈন্যদের আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার কথা। আমরা আশা করি শান্তি প্রক্রিয়া রাজনৈতিক ভাবে সমাধানের জন্য এটিই একমাত্র রাস্তা, যা সবাই এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু যদি সৈন্য প্রত্যাহার মে মাস পার হয়ে যায় তাহলে এটিকে আমরা চুক্তির লঙ্ঘন বলে মনে করব। এবং তার ভয়াবহ পরিণতি সকলকে ভোগ করতে হবে।

অন্যদিকে আমেরিকার বর্তমান রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন মে মাসের মধ্যে সমস্ত মার্কিন সৈন্য আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করা বিষয়টি তাদের বিবেচনাধীন রয়েছে। এটি করা সম্ভব কিন্তু খুব মুশকিল। কিন্তু যদি এমনটা না করা হয় তাহলে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াটি অনেক দীর্ঘ হতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন। উল্লেখ্য গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমেরিকার সঙ্গে তালিবানের একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেই চুক্তির শর্ত হিসাবে এই বছর মে মাসের মধ্যে আমেরিকার সমস্ত সৈন্য আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা। বিনিময়ে এই সময়ে তালেবানকে শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা দেখাতে হবে বিদেশি সমস্ত সৈন্য এবং সম্পদের ওপর না হামলা চালানোর মাধ্যমে। শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে তালিবান আফগানিস্তানের সৈন্যদের ওপর বেশ কয়েকবার হামলা চালালেও হামলা চালায়নি আমেরিকা এবং নাটো সেনা বহরে। তালেবান নেতৃবৃন্দ যে শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই কিন্তু আমেরিকাকে প্রতিশ্রুতি মত কাজ করতে হবে, জানান তালিবান প্রতিনিধি শাহীন। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের দ্বারা স্বাক্ষরিত সেই চুক্তি বর্তমানে আবার নতুন করে যাচাই করে দেখছে জো বাইডেন প্রশাসন। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, জো বাইডেন প্রশাসন এত তাড়াতাড়ি আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সমস্ত সৈন্য প্রত্যাহার করবে না। আর তা না করলে আফগানিস্থানে আবার নতুন করে রক্ত ক্ষয়ী এক যুগের সূচনা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।

 

অন্যদিকে মস্কোতেই আফগান তালেবানের প্রতিনিধি মোঃ নাঈম জানিয়েছেন, শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা আফগানিস্তানে শান্তি অর্জন করতে বদ্ধ পরিকর এবং পরবর্তী ধাপে সেখানে সম্পূর্ণ ইসলামিক শরিয়া আইন মোতাবেক পরিচালিত হবে এমন একটি সরকার গঠন করা হবে। যদিও আঞ্চলিক বেশকিছু শক্তি আফগানিস্থানে আবার ইসলামী সরকার চালু করার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া এবং পাকিস্তান এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা আফগানিস্তানের আবার ইসলামী সরকার গঠনের পক্ষে নয়। তবে সে ব্যাপারে কান দিতে নারাজ তালিবান প্রতিনিধিরা। তাদের সাফ বক্তব্য আফগানিস্তানের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে তা ঠিক করা অন্য কোনো দেশের কাজ না, সেটা ঠিক করবে আফগানিস্তানের জনগন। শরিয়া আইন মোতাবেক পরিচালিত সরকার আফগানিস্থানে মহিলাদেরকে শিক্ষা অর্জন করতে বাধা দেবে কিনা, মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের অধিকার থাকবে কিনা, মহিলারা রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশাধিকার পাবে কিনা সাংবাদিকদের করা এমন সব প্রশ্নের জবাবে তালেবান মুখপাত্র বলেন, আমরা মহিলাদেরকে শিক্ষা অর্জনে বাধা দেব না বরং উৎসাহিত করব। মহিলারা নির্ভয়ে চাকরি করতে পারবেন। এমনকি মহিলারা যে কোন আদালতের বিচারক পর্যন্ত হতে পারবে। তবে কোন মহিলাকে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি করা যাবে না বলে তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন। তবে বর্তমানে আমেরিকায় সরকার পরিবর্তনের পরে জো বাইডেন সরকার আমেরিকায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফগানিস্তান এবং আমেরিকার মধ্যে স্বাক্ষরিত হওয়ার শান্তি চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে ঘোর সংশয়। তাই আফগান শান্তি প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ কোন পথে তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্ন। রক্তক্ষয়ী যুগের শেষ নাকি আরো এক রক্তক্ষয়ী যুগের সূচনা হতে চলেছে বহু সাম্রাজ্যের কবরস্থান আফগানিস্থানে সেটা কেবল সময়ই বলতে পারবে।

Latest articles

Related articles