নতুন দিল্লি: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারস্পরিক যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী ও তার পরিবারকে লক্ষ্য করে চরম পর্যায়ের অনলাইন হয়রানি ও ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস (ডক্সিং) এর ঘটনা ঘটেছে। হিন্দু দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত একদিক ব্যবহারকারী এই হয়রানিতে জড়িত বলে জানা গেছে।
গত ২২ এপ্রিল পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে ভারতের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের পর থেকে এই অপপ্রচার তীব্র হয়। পররাষ্ট্রনীতির ব্যাখ্যাকারী মিশ্রীকে “দেশদ্রোহী”, “গদ্দার” সহ নানা অভিযোগে লক্ষ্য করা হয়। কিছু অ্যাকাউন্ট তার পুরনো পারিবারিক ছবি ও যোগাযোগের তথ্য ফাঁস করে। এমনকি, তার কন্যাদের মোবাইল নম্বরও শেয়ার করে হয়রানির মাত্রা চরমে তোলে।

বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হলো, মিশ্রীর এক কন্যার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি সমর্থনকে কেন্দ্র করে আক্রমণ। তার পুরনো সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট পুনরায় শেয়ার করে তাকে “ভারতবিরোধী” আখ্যা দেওয়া হয় এবং নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। এই পরিস্থিতিতে মিশ্রী তার এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্টটি প্রাইভেট করে পরিবারকে রক্ষার চেষ্টা করেন।
@rohithverse-এর একটি পোস্টে লেখা হয়, “ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের মেয়ে রোহিঙ্গাদের আইনি সহায়তা দিচ্ছে? আমাদের আমলাতন্ত্র কি সম্পূর্ণভাবে বিকল?” অন্যদিকে, @Rimoru121145 নামক ব্যবহারকারী মিশ্রীকে “দেশদ্রোহী” বলে আখ্যায়িত করে তার সন্তানদের বিদেশে থাকার কথাও উল্লেখ করে।
এই হয়রানির নিন্দা জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি। এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন, “মিশ্রী একজন নিষ্ঠাবান কূটনীতিক। নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্তের জন্য তাকে দায়ী করা উচিত নয়।” অল্ট নিউজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, “রাজনৈতিক বিতর্কে পরিবার, বিশেষত কন্যাদের টেনে আনা নিকৃষ্ট কাজ।” সাংবাদিক অদিত্য মেনন এরকম ব্যক্তিগত আক্রমণকে “লজ্জাজনক ও বিপজ্জনক” বলে মন্তব্য করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মিশ্রী জানান, পাহালগাম হামলার জবাবেই ভারতের পদক্ষেপ। তিনি অপারেশন সিঁদুরের কথা উল্লেখ করে বলেন, “পাকিস্তানই পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছে, আমরা কেবল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি।” শুক্রবার কার্তারপুর সাহিব করিডোর সেবা স্থগিতের ঘোষণা দেন তিনি, যা নিরাপত্তার কথা ভেবেই করা হয়েছে।
রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিং পেছানো হয়েছে।
এই ঘটনায় অনলাইন সহিংসতা ও ব্যক্তিগত আক্রমণের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপের দাবি উঠছে। বিশেষজ্ঞরা ডিজিটাল মাধ্যমের দায়বদ্ধতা ও ব্যবহারকারীদের সচেতনতার উপর জোর দিচ্ছেন।