অসংবিধানিকভাবে ওয়াকফ বিল পাস করিয়েছে সরকার, দাবি বিরোধীদের

0
10

যৌথ সংসদীয় কমিটিতে ওয়াকফ বিলের খসড়া পেশ করা হলো। এই বিল নিয়ে বিরোধীদের চূড়ান্ত বিরোধিতা এবং প্রবল আপত্তিকে নস্যাৎ করে দিয়ে এই বিল পাস করা হলো। বিরোধীরা, ৫০০টির বেশি সংশোধনী বিল আনার সত্ত্বেও তা খারিজ হয়ে যায়। অথচ শাসক শিবিরের ১৪টি সংশোধনী গৃহীত হয়।
বিরোধীদের সঙ্গে শাসকের চূড়ান্ত মতবিরোধ এবং হইচই-হট্টগোলের মাঝেও ১৬-১০ ব্যবধানে জয়ী হয় শাসক শিবির। ফলত গৃহীত হয় ১৪টি সংশোধনী। পাশ হয়ে যায় খসড়া বিলটি। পরবর্তীতে জেপিসি’র সদস্য কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানান – “আজ যা হল তা গণতন্ত্রের নামে প্রহসন। বিল যখন পাশ করাটাই লক্ষ্য ছিল তখন জেপিসি গঠনের কোনও প্রয়োজনই ছিল না।”

বিজেপি সরকারের তড়িঘড়ি করে বিল পাস করানো দেখে বিরোধীরা মনে করছেন, আসন্ন বিধানসভায় প্রথম পর্বেই এই বিল আনতে চলেছে সরকার। তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি ওই বিলের ৪৪টি ধারার ক্ষেত্রে সংশোধনী এনেছিলাম। সেটি নিয়ে ও বিশেষ আলোচনা হয়নি।” ৪৪টি সংশোধনী আনা বিরোধী এমআইএম-এর সংসদ আসাদুদ্দিন ওয়েইসির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। বিরোধীরা প্রায় সকলেই মনে করছেন কোনও নিয়ম ছাড়া অসংবিধানিকভাবে এই বিল পাস করিয়েছে সরকার। গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে এটি একটি কালো দিন হয়ে থাকবে।

১৯৯৫ সালে ভারতীয় সংবিধানে প্রথম ওয়াকফ আইন বলবৎ করা হয়। সংসদে বিল পাশ হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন মিললে ওয়াকফ আইনের নতুন নামকরণ হবে, ‘ইউনিফায়েড ওয়াকফ ম্যানেজমেন্ট, এমপাওয়ারমেন্ট, এফিশিয়েন্সি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট’। সংসদে বৈঠক শেষ হওয়ার পর জগদম্বিকা বলেন, ‘‘বিলের প্রতিটি (৪৪টি সংশোধনী) ধারা ধরে পর্যালোচনা করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনেই সিদ্ধান্ত হচ্ছে। ১৪টি সংশোধনী-সহ বিলটি পেশ করার জন্য সরকারের কাছে জেপিসি সুপারিশ করবে।’’

ওয়াকফ বিলে রয়েছে:

১) কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ হিসাবে ঘোষণা করার অধিকার ওয়াকফ বোর্ডের হাতে থাকবে না। ওই ক্ষমতা তুলে দেওয়া হবে জেলাশাসকদের হাতে।

বিরোধীদের বক্তব্য:
এর ফলে যাবতীয় ক্ষমতা জেলাশাসকের হাতে চলে যাবে। জেলাশাসক ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যানের থেকে অনেক বেশি ক্ষমতাশালী হয়ে উঠবেন। গুরুত্ব হারাবে ওয়াকফ বোর্ড।

২) ওয়াকফ বোর্ডে দু’জন মহিলার উপস্থিতির পাশাপাশি দু’জন অ-মুসলিম সদস্যকে বাধ্যতামূলকভাবে রাখতে হবে।

বিরোধীদের বক্তব্য:
অন্যান্য ধর্মের নিয়ন্ত্রক সংস্থায় ভিন্ন ধর্মের ব্যক্তিরা স্থান পান না। তা হলে ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলিমদের স্থান দেওয়ার কী প্রয়োজন?

৩) একমাত্র যাঁরা মুসলিম এবং যাঁরা শেষ পাঁচ বছর ধরে ইসলাম ধর্ম পালন করে চলেছেন, তাঁরাই ওয়াকফ বোর্ডকে সম্পত্তি দান করতে পারবেন।

বিরোধীদের বক্তব্য:
কেউ যদি সদ্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, তা হলে তাঁকে দানের জন্য পাঁচ বছর কেন অপেক্ষা করতে হবে? এটা কি ধর্মে হস্তক্ষেপ নয়?

৪) হিন্দু মন্দিরগুলির মতোই ওয়াকফ বোর্ডকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ বিধিবদ্ধ সংস্থা’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই যুক্তিতেই নিয়ন্ত্রণ।

বিরোধীদের বক্তব্য:
ওয়াকফ বোর্ডের মতো বিভিন্ন হিন্দু মন্দির যদি ‘ধর্মনিরপেক্ষ বিধিবদ্ধ সংস্থা’ হয়, তা হলে পুরীর মন্দিরে অহিন্দুদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কেন?