বাম ও রামের পার্থক্য কতটুকু? লেখক আব্দুল মোমেন

২০২১ নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট হচ্ছে। এই জোট কি সত্যিই ধর্মনিরপেক্ষ? আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি একদমই না। বামেরা ঢাকঢোল পেটায়, আমরা ধর্মনিরপেক্ষ এবং সাম্প্রদায়িকতার চির শত্রু। এই দাবি ওদের মুখে কিন্তু প্রকৃতিতে সাম্প্রদায়িক। এই তত্ত্ব এককালের বামপন্থী বর্তমানে ডানপন্থী আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা প্রকাশ্যেই বলে থাকেন। এমনকি আর বামপন্থী বর্তমানে ডানপন্থী ডঃ আব্দুস সাত্তার এমনটাই বারে ইশারা ইঙ্গিতে বলে থাকেন। এমনকি তাঁর ওই দলটা ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পিছনে এটাই মূল কারণ।
রাজ্য সরকারী কর্মচারী আমার দীর্ঘ ১৬-১৭ বছের বন্ধু। আমাকে তার পার্টি জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছে, যা অত্যন্ত মারাত্মক। ১৯৯২সাল থেকে ১০০৯ সাল পর্যন্ত সিপিএম পার্টির বিভিন্ন সংগঠন শেষে পার্টি কর্মী হিসেবে সক্রীয় কর্মী থেকেছে। ১৯৯৮ ও ২০০৩সালে জেলাপরিষদে প্রার্থী পর্যন্ত হয়েছে। ২০০৯ সালে পার্টি ছেড়ে দেওয়ার পরেও ২০১৩ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী করে। পার্টির জন্যে এমন ত্যাগী মানুষের পার্টির বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ ব্যাক্ত করেছে। তার ক্ষোভ কেবল আমি মুসলিম বলে আমার ও আমার স্বামীকে পার্টির গুরুত্বপূর্ণ পদে আমাদেরকে টপকে ব্রাক্ষ্মণ আর বাঙালকে দেওয়া হয়েছে।
তার একটা আক্ষেপের কথা যে, সম্ভবত ১৯৯৫-১৯৯৬ সালের কোন একটা সময়ে শিয়ালদহ জেলা পার্টি অফিসে ছাত্র – পার্টি ফ্রাকশন কমিটি মিটিং এ আমি প্রস্তাব রেখেছিলাম, জেলায় জনজাতী আনুপাতিক হারে পার্টির সদস্য করা উচিত । এই প্রস্তাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সকলেই আমার উপর এমনভাবে তেড়ে ওঠে তুমি সেক্টরিয়ান পলেটিক্স করছো। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের সংখ্যা প্রায় ৯০শতাংশ।অথচ সবই ক্ষমতা ভোগ করতো ব্রাক্ষ্মণ আর বাঙাল। মূলত যাদবপুর আর সোনারপুরের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিত। আমি যতদিন পার্টিতে ছিলাম আমাকে ওরা সেক্টরিয়ান হিসেবেই দেখেছে। যদিও আমার স্বামী এখন জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য। অথচ ওকেই একটা সময় এসএফআই এর জেলা সভাপতি বা সম্পাদক করায় চরম আপত্তি ছিল। অথচ সে সময় ওই ছিল একমাত্র যোগ্য কিন্তু শান্তিময় ভট্টাচার্যের লিখিত চিঠিতে ওকে বাদ দেওয়া হয়। সেখানে সভাপতি ও সম্পাদক করা হয় অনির্বাণ ভট্টাচার্য ও টুম্পা লাহিড়ীদের। এই টুম্পা লাহিড়ী কেবল শমীক লাহিড়ীর ভাইঝি হওয়ার সুবাদে কোথা থেকে নিয়ে আসে জেলার শীর্ষে। আমরা তাকে জানতামই না। এখন সে টুম্পা দেশেই থাকেনা বিদেশে সেটেল্ড।
আসলে বঙ্গ সিপিএম এ বাঙাল আর ব্রাক্ষ্মণের দৌরাত্ম্য। এদের সময় উন্নয়ন এমনই কায়দায় হত যে মুসলিম গ্রাম শুরু তো উন্নয়ন শেষ। সংখ্যালঘু প্রধান এলাকায়ও দলের রাশ বাঙাল কিম্বা ব্রাক্ষ্মণের হাতে।

#পুনশ্চ :- ইতিপূর্বে বাম কংগ্রেস জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি একাধিক পোষ্ট করেছি। এমনকি একটি আর্টিকেলও বেরিয়েছে। তাতে অনেকেই আমার বিরুদ্ধে অত্যন্ত কূরুচিকর মন্তব্য করেছে। করতেই পারে। বাস্তব না বুঝলে তো করবেই। ২০১৪ থেকে কিভাবে বামের ভোট রামে যাচ্ছে তা খেয়াল করলেই বোঝা যায়। একদম শেষ নির্বাচন ২০১৯ এ বিজেপির ২থেকে ১৮ হওয়ার পিছনের তথ্য টানলেই বোঝা যাবে। তাছাড়াও সুজনবাবুর কথার ধরণ খেয়াল করলে ভালো বোঝা যাবে। উনি কাদের লাইনে কথা বলছেন? উনি তো জেলা সম্পাদক আবার যাদবপুরের বিধায়ক। তাহলে বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য যাদবপুরে তৃতীয় কেন? সোনারপুর বারুইপুর টালিগঞ্জেই বা কেন তৃতীয? উত্তর আপনিই খুঁজুন সুজন বাবু দেবেন না।

Latest articles

Related articles