Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on email

‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ সরকার প্রচার করছে, গুজরাটের ‘পরজানিয়া’- নিষিদ্ধ!

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

গুজরাট দাঙ্গার চিত্র 'পারজানিয়া'।
গুজরাট দাঙ্গার চিত্র 'পারজানিয়া'। "দ্য কাশ্মীর ফাইলস"।

এনবিটিভি ডেস্কঃ কেন্দ্রীয় সরকার আজ ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এর পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীকে সিআরপিএফ সহ ‘ওয়াই’ ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দিয়েছে। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস” সিনেমাটি একপেশে হিন্দুত্ববাদের প্রচার করার জন্য তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার সমর্থনে রাজ্যে বিনা ট্যাক্সেও সিনেমাটি চালনর ছাড়পত্র দিয়েছে। এমনকি বিজেপি ও অনেক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন এই সিনেমার সমর্থনে নানান ভাবে উস্কানি মূলক কাজ করে বেড়াচ্ছে।   

এদিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও সিনেমাটির নানান ভাবে প্রচার করছে। যেখানে মুসলিমরাও সেই হত্যা কাণ্ডে শিকার হয়েছিল তাদেরকে এখনে ভিলেন বানান হয়েছে। এই নিরাপত্তা প্রদান করার অর্থ দাঁড়ায় সরকারী নিজেই এই সিনেমাটির প্রচারের মূল স্রোতে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। যেখানে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হচ্ছে সেখানে সকারের এই ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহেবুবা মুফতি।  

 সরকারী সমর্থন এবং সারা দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ট্যাক্স ছাড়ের পরেই বিতর্কিত মুভিটি বক্স অফিসে ১০০ কোটির বেশী টাকা আয় করে ফেলেছে। তদুপরি, চলচ্চিত্রটির সংবেদনশীল রাজনৈতিক প্রকৃতি এবং তথ্যের ইচ্ছাকৃত ভুল উপস্থাপনের অভিযোগের কারণে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের নেতা ও লোকসভার সদস্য বদরুদ্দিন আজমাল আসামের মুখ্যমন্ত্রীর নিকট সিনেমাটি নিষিদ্ধ করার জন্য আবেদন করেন। তিনি বলেন, কাশ্মীরে গত ৪০ বছর পূর্বে যে গণহত্যা হয়েছে ও আসামে ১৯৮৩ সালে যে ভয়াবহ হত্যার ঘটনা ঘটেছে তার সঠিক তথ্য তুলে ধরা উচিৎ। সেটার পরিবর্তে সমাজকে দ্বিখণ্ডিত করার চেষ্টা করছেন বর্তমান সরকার।

যাইহোক, ফিল্মটি বেশ কয়েকটি সিনেমা হলে হিংসাত্মক পরিস্থিতি টোড়ী করেছে। যেখানে সিনেমা দেখে এক শিক্ষার খোরাক হয়ে থাকে সেখানে হিংসার প্রতীক হয়েগেছে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস”। এই সিনেমাটি ক্ষত নিরাময়ের পরিবর্তে, পরিকল্পিতভাবে দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে আরও ঘৃণার জন্ম দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া থিয়েটারের ভিতর এবং বাইরে লোকেদেরকে মুসলমানদের লক্ষ্য করে গালিগালাজ ব্যবহার করতে দেখা যায়। কয়েকজনকে তীব্র উত্তেজক ভাষা ব্যবহার করে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সিনেমাটিকে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং সমালোচকদের নিন্দা করার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারাই এই সিনেমাটির বিরোধিতা করবে যারা ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে হিন্দুদের উপর যে সহিংসতা চালানো হয়েছিল সে সম্পর্কে সত্য আড়াল করার চেষ্টা করেছিল।

অন্যদিকে ২০০২ সালে গুজরাটে মুসলিম নিধনের করুণ চিত্র তুলে ধরে ২০০৫ সালে ‘পারজানিয়া’ সিনেমা তৈরি হয়। সিনেমাটি সম্পূর্ণ ব্যান করে দেওয়া হয়। এমনকি অনেক সিনেমা হল পুড়িয়ে দিয়েছল । ‘পারজানিয়া’ সিনেমাটি রাহুল ঢোলাকিয়ার পরিচালিত ও নাসিরুদ্দিন শাহ এর অভিনীত এক বিশেষ  তথ্যচিত্র ।

২০০২ সালে গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাতে, লস অ্যাঞ্জেলেস – ভিত্তিক পরিচালক রাহুল ঢোলাকিয়া একটি ব্যক্তিগত দুঃখদায়ক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। দাঙ্গা তাঁর বন্ধুর পরিবারকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল এবং এই ঘটনা তাঁর উপর একটি অমোচনীয় চিহ্ন ফেলেছিল। এটি তাঁকে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল কারণ ঘটনাগুলি তাঁর নিজের রাজ্যে ঘটেছিল। তিনি নৈতিক ও সামাজিক উভয় ক্ষেত্রেই দায়বদ্ধ বোধ করেছিলেন। সেজন্য একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসাবে প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলেন।

এই সিনেমাটি সাত হাজার মার্কিন ডোলার বাজেট ছিল। এই সিনেমাটির তৈরি করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমান টাকা টাকা না থাকায় বেশিরভাগই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর দুই ভারতীয় বন্ধুর কাছ থেকে নিয়েছিলেন। ঢোলাকিয়া এই চলচ্চিত্রটি ইংরাজীতে তৈরি করেছিলেন। তিনি কারণ হিসাবে  মনে করেছিলেন যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা একটি বৈশ্বিক বিষয়। সারা বিশ্বে দাঙ্গা বিষয়ক জিনিষটা প্রকট আকারে আছে।

পরজানিয়া সিনেমাতে মুলচরিত্রে একজন আমেরিকান নাগরিক, অ্যালান (করিন নিমেক), আহমেদাবাদ পৌঁছেছে কিছু উত্তর খুঁজতে।    সে গান্ধী কে তার গবেষণামূলক প্রবন্ধের বিষয় হিসাবে বেছে নেয়। এখানেই তার দেখা হয় পিঠাওয়ালা পরিবারের সাথে — সাইরাস (নাসিরুদ্দিন শাহ্), তার স্ত্রী শেরনাজ (সারিকা), ছেলে পরজান (পরজান দস্তুর) এবং কন্যা দিলশাদ (পার্ল বারসিওয়ালা)। পিঠাওয়ালারা পারসি, তাই তারা জরাথুস্ট্রবাদ অনুসরণ করে। তাদের কাছে এবং গান্ধীবাদী শিক্ষার মাধ্যমে অ্যালান মানসিক প্রশান্তি পেতে শুরু করে।

এই চলচ্চিত্রটি গুজারাটের রূপা মোদীর সত্য ঘটনার ভিত্তিতে নির্মিত। রূপার পুত্র ২০০২  সালে গুজরাত দাঙ্গার পরে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। দশ বছর বয়সী পরজান এই দাঙ্গার সময় অদৃশ্য হয়ে যায়। সেইসময় তাদের আশেপাশের বাড়িগুলিতে আক্রমণ করা হচ্ছিল। সাইরাস, শেরনাজ এবং দিলশাদ এই হত্যাযজ্ঞ থেকে পালিয়ে বাঁচতে সক্ষম হয়েছিল। দাঙ্গার পরে, নিজের মানসিক সুস্থতার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে সাইরাস তার হারিয়ে যাওয়া শিশুটির অনুসন্ধান করতে আসে। পিঠাওয়ালাদের তাদের অনুসন্ধানে সহায়তা করার সময়, অ্যালান দাঙ্গার পেছনের কারণ উন্মোচনের উদ্দেশ্যে ঘটনাটির কিছুটা বোঝার চেষ্টা করে।

 এই ঘটনায় সরকারী আধিকারিকের ব্যাখ্যা ছিল যে, এটি কোন ষড়যন্ত্রের অংশ নয়। জনগণ এই নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে শুরু করে। ফলস্বরূপ, একটি মানবাধিকার কমিশন গঠিত হয়। কমিশনের কাছে, বিভিন্ন সাক্ষী এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, দাঙ্গাকারীদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে পুলিশের উদাসীনতার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়। ছবিটি শেষ হয় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকারদের প্রতি ছবিটি উৎসর্গ করে।

আপনার মতামত প্রদান করুন!

সর্বাধিক পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর