কিশোরগঞ্জে কঠিন লকডাউন আছে কি নাই বুঝা যায় না

 

শামীম সরকার স্টাফ রিপোর্টার :

এই কঠিন লকডাউন আছে কিনা বলাই যায় না।করোনা সংক্রমণের সাথে পাল্লা দিয়ে কিশোরগঞ্জে বাড়ছে মৃত্যু। কিন্তু সচেতনতা নেই জনগণ বা সংশ্লিষ্টদের মাঝে। শহর ঘুরে দেখা গেছে কোথাও নেই কঠোর লকডাউনের প্রভাব। নেই কঠোর নজরদারী। কিছু দোকানপাট বন্ধ থাকলেও রাস্তায় অবাধে চলছে, শত শত মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকসা, ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট গাড়ি। এসব দেখে মনে হয় সারাদেশে কঠোর লকডাউন চললেও কিশোরগঞ্জের লকডাউন বুঝি প্রত্যাহার করা হয়েছে। মন্ত্রীপরিষদের জারি করা প্রজ্ঞাপনের ২১ নির্দেশনার একটি ‘ রাস্তায় বেরুলেই গ্রেফতার’ যেন কিশোরগঞ্জে এক নিদারুণ প্রহসন। লকডাউন শুরুর পর থেকে দিন দিন শহরে বাড়ছে অযথা ঘুরাঘুরি করা মানুষের সংখ্যা। অনেকের মুখে মাস্ক পর্যন্ত নেই। কঠোর শব্দটাকে হাস্যকর তুলেছে রাস্তায় বেরুনো মানুষেরা।১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসন ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী শুরুতে যতটুকু তৎপর ছিলেন সেই তৎপরতাতেও যেন অনেকটাই ভাটা পড়েছে। লকডাউন বাস্তবায়নে নিয়োজিত কয়েকজন পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার বলে মানুষ লকডাউন মানতে না চাইলে আমরা কি করতে পারি? একেতো করোনার ভয়, অন্যদিকে প্রাইভেট গাড়ি ও মোটরসাইকেল আরোহীদের আটকাতেও তারা অনেকটাই ভীত থাকছেন। দেখা গেছে কোন মোটরসাইকেল আটকালে আরোহী পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে কাকে যেন ফোন করছেন। ফোন ধরিয়ে দিতে চান কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য। নিরুপায় হয়ে মোটরসাইকেল ছেড়ে দিতে বাধ্য হন তারা। যেখানে শহরের রাস্তাঘাট লকডাউনের কারণে ফাঁকা থাকার কথা সেখানে লকডাউনের ৫ম দিন থেকে দেখা দিয়েছে যানজট। মোট কথা জনমনে করোনা সচেতনতা না থাকলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে কিশোরগঞ্জ শহরে। এ বিষয়ে একজন পথচারীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন‘ কঠোর লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন হবে তখনই যখন মানুষকে আইন মানতে বাধ্য করা হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা কিশোরগঞ্জবাসী বেপরোয়া, আমরা অমুক ভাই তমুক ভাইয়ের দোহাই দিয়ে চলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কঠোর লকডাউনে আরেক সমস্যা হচ্ছে, যারা আইন মেনে চলছেন তারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন আর যারা আইনকে ফাঁকি দিয়ে দোকানপাট খোলা রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা হচ্ছেন লাভবান। এতে করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে উভয় পক্ষের মাঝে। যারা আইন মেনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তারা আইনের প্রতি স্বাভাবিক শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলছেন। লকডাউনে সবচেয়ে বেশী সমস্যায় পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তারা দোকান বন্ধ রেখে পুঁজি ভেঙ্গে বসে বসে খাচ্ছেন। লকডাউন উঠে গেলে ক্ষুদ্র যে পুঁজি দিয়ে তারা ব্যবসা করতেন পুঁজির অভাবে হয়তো তারা সেই ব্যবসা আর করতে পারবেন না। অন্য আরো বেশী সমস্যায় রয়েছেন দিন মজুররা। বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা কাজ হারিয়েছেন। ঘরে খাবার নেই তাদের। এদিকে শহরের বড় বড় গ্লোসারী শপগুলো সারাদিন খোলা রেখে দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। উপরন্ত নিয়ম ভেঙ্গে এক শার্টার খোলা রেখে রাত ১১টা অবধি তারা বেচা বিক্রি করছেন। বুধবার ( ৭ জুলাই) রাত দশটা থেকে ১১টা পর্যন্ত শহর ঘুরে দেখা গেছে গৌরাঙ্গবাজার এলাকায় সুগন্ধা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, কালীবাড়ির বিপরীতে স্বপ্ন বাজার, কালীবাড়ি মোড় সংলগ্ন রাজিব স্টোরসহ আরো বেশ ক’টি মাঝারী আকারের গ্লোসারী শপ খোলা রেখে বেচা বিক্রি করতে। মোটকথা কিশোরগঞ্জ শহরে কঠোর লকডাউন একটা প্রহসনে পরিণত হয়েছে। যেখানে প্রতিদিনই করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, মারা যাচ্ছেন এতে সংক্রমিত ৪/৫ জন করে মানুষ। কিশোরগঞ্জে করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ ও মত্যু কমাতে অচিরেই যদি এ পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরা না হয় তাহলে অচিরেই এজন্য হয়তো চড়া মাশুল গুণতে হবে এ জনপদকে

Latest articles

Related articles